নার্সিং শিক্ষণ জুড়ে চলছে যেন এক ক্রীতদাসী প্রথা৷ এমনই মারাত্মক অভিযোগ তুললেন নার্সেস ইউনিটির নেতৃবৃন্দ৷ ১৬ মে মেডিকেল সার্ভিস সেন্টারের অফিসে এক সাংবাদিক সম্মেলনে সংগঠনের সম্পাদিকা পার্বতী পাল বলেন, ১০ মে কলকাতার পিয়ারলেস হাসপাতালের বি এস সি নার্সিং–এর তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী রিংকি ঘোষের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পিছনে আছে বেসরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষের অর্থলোভ, ছাত্রীদের প্রতি চরম অবহেলা ও ঔদাসীন্য এবং তাদের উপর কর্তৃপক্ষের ভয়াবহ মানসিক পীড়ন৷
সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত মৃতা ছাত্রী রিংকি ঘোষের বাবা আনন্দ ঘোষ বলেন, ইন্টারনাল অ্যাসেসমেন্টের নম্বর কম দেওয়ার ভয় দেখিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ তাদের পরিচালিত হাসপাতালে ছাত্রীদের অমানুষিকভাবে খাটায়৷ কলেজ লক্ষ লক্ষ টাকা নেয়, অথচ পরিকাঠামো নেই৷ অস্বাস্থ্যকর হোস্টেলে গাদাগাদি করে ছাত্রীদের থাকতে বাধ্য করা হয়৷ পদে পদে অপমান, মানসিক নির্যাতন প্রতিনিয়ত ছাত্রীদের বিপর্যস্ত করে দেয়৷ নার্সেস ইউনিটির নেতৃবৃন্দ বলেন, যে নার্স রোগীর সেবা করবেন, ট্রেনিংয়ের সময় থেকেই যদি এমন অমানবিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে তাঁদের যেতে হয় – তা হলে তাঁরা ভাল নার্স হবেন কী করে?
সরকারি বেসরকারি নির্বিশেষে নার্সিং কলেজগুলিতে ছাত্রীদের উপর মানসিক পীড়নটাই রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ একদিন অসুস্থ হলে পরদিন ডবল ডিউটি করতে বাধ্য করা হয় ছাত্রীদের৷ তার উপর অবৈজ্ঞানিক সিলেবাস এবং পরীক্ষা পদ্ধতি ছাত্রীদের আরও দিশেহারা করে দিচ্ছে৷ পরীক্ষার ফল ৬ মাসের বেশি দেরিতে প্রকাশিত হয়– রেজাল্টের বহু আগেই পরের পাঠক্রমের পড়া অনেক এগিয়ে যায়৷ এরপর ছাত্রীরা যখন জানতে পারেন তাঁরা ফেল করেছেন এবং সামান্য সময়ের মধ্যেই তাদের আবার আগের পাঠক্রমে পরীক্ষা দিতে হবে– তাঁরা ট্রেনিং ছেড়ে দিতে বাধ্য হন৷ এই পরিস্থিতির অপেক্ষাতেই থাকে বেসরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষ৷ তারা নতুন অ্যাডমিশন নিতে ছাত্রীদের বাধ্য করে৷ যাতে আবার কয়েক লক্ষ টাকা তারা কামাতে পারে৷
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, নার্সিং স্কুল এবং কলেজ ছাত্রীদের গণতান্ত্রিকভাবে সংসদ গঠনের অধিকার না থাকার ফলে তাঁরা প্রতিবাদের শক্তি হারিয়ে মর্মান্তিক আত্মহননের পথ বেছে নিতে বাধ্য হন৷ পিয়ারলেস হাসপাতালের ছাত্রীরা রিংকি ঘোষের মৃত্যুর পর আন্দোলনে নামায় কর্তৃপক্ষ কলেজ বন্ধ করে দিয়েছে৷ তাঁরা দবি করেন, মৃতা ছাত্রীর বাবার আবেদনকে মর্যাদা দিয়ে বিচারবিভাগীয় তদন্ত, রিংকির মৃত্যুর জন্য দায়ী শিক্ষিকা ও কলেজ কর্তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং ছাত্রীদের আন্দোলন ভাঙার জন্য দায়ের করা সমস্ত মিথ্যা অভিযোগ প্রত্যাহার করতে হবে৷
(৭০ বর্ষ ৪০ সংখ্যা ২৫ মে, ২০১৮)