রাজ্যের সর্বত্র স্কুল খোলার দাবি উঠছে। ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা। অবিলম্বে স্কুল খোলার দাবিতে ছাত্র সংগঠন এ আই ডি এস ও-র বিক্ষোভে তাঁরা নিজেদের ছেলেমেয়েদের অংশ নিতে পাঠিয়েছেন। বলেছেন, কোভিডের থেকেও বড় বিপদ হিসাবে এসেছে ওদের ভবিষ্যৎ নষ্টের সম্ভাবনা। রাজ্যের অভিভাবকদের এই উদ্বেগ রাজ্যের মন্ত্রীদের মনকে ছুঁতে পারেনি। তাই অত্যন্ত কৌশলে শিক্ষামন্ত্রী স্কুল খোলার প্রসঙ্গ এড়িয়ে গেছেন। হঠাৎই তাঁরা দুয়ারে সরকারের ধাঁচে ‘পাড়ায় শিক্ষা’র ঘোষণা করেছেন। ছাত্রছাত্রীদের অপূরণীয় ক্ষতিতে উদ্বিগ্ন শিক্ষকরা ইতিমধ্যেই ‘চলো স্কুলে পড়াই’ কর্মসূচি নিয়ে এলাকায় এলাকায় স্কুল চত্বরে ক্লাস নিতে শুরু করেছেন। এই অবস্থায় হঠাৎ সরকারের পাড়ায় পড়ানোর কর্মসূচি কেন? পড়াতেই যদি তাঁরা চান তবে স্কুলে নয় কেন? তা হলে কি তাঁরা স্কুল খুলতে চান না? নাকি স্কুলের গুরুত্বকে তাঁরা ধীরে ধীরে লঘু করে দিতে চান? রাজ্যের অভিভাবকরা তা কিছুতেই মেনে নেবেন না। তাই সর্বত্র আজ স্লোগান উঠেছে, ‘মাঠে ঘাটে পাড়ায় নয়, ক্লাসরুমে শিক্ষা চাই’, ‘গ্রামে-শহরে আওয়াজ তোলো, বন্ধ স্কুলের তালা খোলো’।
স্কুল খোলার দাবিতে ছাত্র সংগঠন এআইডিএসও, প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠন বিপিটিএ, হাইস্কুল শিক্ষক সংগঠন, মহিলা সংগঠন এআইএমএসএস, অল বেঙ্গল সেভ এডুকেশন কমিটি সহ বিভিন্ন সংগঠন রাস্তায় নেমেছে। সব কিছু খোলা যাবে, অথচ স্কুল খোলা যাবে না– কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের এই অদ্ভূত মনোভাবের তীব্র বিরোধিতা করে ১৯ জানুয়ারি এস ইউ সি আই(সি) রাজ্য সম্পাদক কমরেড চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য এক বিবৃতিতে বলেন, ‘রাজ্য সরকারের সাম্প্রতিক নির্দেশে বিয়েবাড়ি সহ সামাজিক অনুষ্ঠানের জমায়েতের সংখ্যা বাড়িয়ে ২০০ জন করা হয়েছে, মেলা, যাত্রা চলছে, জিম, সিনেমা, পানশালা, রেস্তোঁরা, শপিংমল সব খোলা। অথচ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার উপর নিষেধাজ্ঞা জারিই থাকছে। স্কুলগুলি প্রায় দু’বছর বন্ধ। এর ফলে রাজ্যে শিক্ষার ভীষণ ক্ষতি হচ্ছে, শিশুশ্রম ও বাল্যবিবাহ বাড়ছে, ছাত্ররা মানসিক রোগের শিকার হচ্ছে। বিভিন্ন জেলায় শিক্ষকরা নিজস্ব উদ্যোগে অফলাইনে ক্লাস নিচ্ছেন যা অভিভাবকদের সম্মতি ছাড়া সম্ভব হত না। রাজ্যের একটি লোকসভা কেন্দ্রে যদি ৫৩ হাজারের বেশি নাগরিকের টিকাকরণ সম্ভব হয় তা হলে সরকারের সদিচ্ছা থাকলে যে বয়সের ছাত্রছাত্রীরা টিকা পেতে পারে তাদের সকলকে অতি স্বল্প সময়ের মধ্যে টিকার ব্যবস্থা করা যায়। এই পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য সরকারের কাছে টিকাকরণের ব্যবস্থা করে কোভিড বিধি মেনে সমস্ত স্তরেই অতি দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
সেভ এডুকেশন কমিটির প্রতিবাদঃ অতি দ্রুত স্কুল খোলার বিষয়ে অল বেঙ্গল সেভ এডুকেশন কমিটির সম্পাদক অধ্যাপক তরুণকান্তি নস্কর বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসের মিড-ডে মিল দেওয়ার নোটিশ থেকে স্কুল খোলার ভবিষ্যৎ নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে সন্দেহ আরও দানা বেঁধেছে। সরকারের এই দৃষ্টিভঙ্গি শিক্ষার প্রভূত ক্ষতি করলেও বাইজুস ও টিউটোপিয়ার মতো নানা অনলাইন শিক্ষা-অ্যাপ, যার সঙ্গে কেন্দ্র ও রাজ্যের প্রভাবশালীরা যুক্ত, তাদের ব্যবসায় সাহায্য করবে। এই অ্যাপনির্ভর শিক্ষা ক্রমশএ ব্যয়বহুল হবে, যার ফলে আগামী দিনে গরিব-নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত সহ জনসংখ্যার ৯০ ভাগেরও বেশি শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে। এটা মানুষ মেনে নিতে পারেন না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে অ্যাপ-নির্ভর অনলাইন শিক্ষা ব্যবসার তীব্র বিরোধিতা করেন তিনি। অল বেঙ্গল সেভ এডুকেশন কমিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি দ্রুত খোলার দাবিতে ২৭ জানুয়ারি রাজ্যজুড়ে বিক্ষোভ, ধর্না, পদযাত্রা, সই-সংগ্রহ এবং মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীকে স্মারকলিপি পাঠানোর কর্মসূচি পালন করেছে।
এআইডিএসও-র দাবিঃ এ আই ডি এস ও-র রাজ্য সভাপতি সামসুল আলম ও রাজ্য সম্পাদক মণিশঙ্কর পট্টনায়ক জানান, ২০-২১ জানুয়ারি সংগঠনের পক্ষ থেকে রাজ্য জুড়ে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় খোলার দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে। সমস্ত জেলা শহর, মহকুমা, ব্লক স্তরে ছাত্ররা স্কুল খোলার দাবিতে পথে নেমেছে। ছয়-সাত মাস আগে থেকেই স্কুল খোলার দাবিতে রাজ্যজুড়ে আন্দোলনে নেমেছে এআইডিএসও।
বিপিটিএঃ প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠন বিপিটিএ ১৭-২৩ জানুয়ারি সারা বাংলা প্রতিবাদ সপ্তাহে, ‘চলো স্কুলে পড়াই’ কর্মসূচি পালন করেছেন। বিভিন্ন স্কুল মাঠে, গাছতলায়, ক্লাবে তারা প্রকাশ্যে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে ক্লাস করে স্কুল খোলার জরুরি প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন।
এআইএমএসএসঃ স্কুল খোলার দাবিতে ২৮ জানুয়ারি রাজ্যজুড়ে বিক্ষোভ, পদযাত্রায় সামিল হয় অল ইন্ডিয়া মহিলা সাংস্কৃতিক সংগঠন। ‘আমরা স্কুলে যেতে চাই’ পোস্টার নিয়ে মায়েদের সাথে শিশুদের অংশগ্রহণ দাবির মাত্রা বাড়িয়েছে। এর পরেও সরকারের কানে জল না ঢুকলে আন্দোলন তীব্র হবে বলে জানান নেতৃবৃন্দ।