দীর্ঘ আন্দোলন, প্রবল জনমতের চাপ, সর্বোপরি ২০১৭ সালের জুলাই মাসে বাংলা বনধের ডাকের সামনে দাঁড়িয়ে রাজ্য সরকার ঘোষণা করেছিল স্কুলস্তরে পাশফেল প্রথা ফিরিয়ে আনবে৷ কিন্তু এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকার উভয়েই টালবাহানা করে চলেছে৷ নতুন শিক্ষাবর্ষের একটি মাস ইতিমধ্যেই অতিবাহিত৷ জনগণ জানতে চায় কবে এবং কোন শ্রেণি থেকে পাশ–ফেল ফিরবে? এই বিষয়ে তাঁদের উদ্বেগ তুলে ধরলেন শিক্ষাবিদ, শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষানুরাগীরা কলকাতার ভারত সভা হলে, ৩ ফেব্রুয়ারি অলবেঙ্গল সেভ এডুকেশন কমিটি আহূত শিক্ষা কনভেনশনে৷
সভাপতিত্ব করেন অল ইন্ডিয়া সেভ এডুকেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক অনীশ রায়৷ মূল প্রস্তাব পেশ করেন কমিটির রাজ্য সম্পাদক কার্তিক সাহা৷ প্রস্তাবকে সমর্থন করে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ পবিত্র গুপ্ত বলেন, শিক্ষা কোন পথে চলেছে তার একটা বড় নিদর্শন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক স্তরের সাম্প্রতিক ফলাফল৷ একেবারে গোড়া থেকে সবাইকে পাশ করিয়ে দেওয়ার সর্বনাশা নীতির পরিণামে উপরের স্তরেও শিক্ষার মানে যে ধস নামতে বাধ্য এ ঘটনা তাকে একেবারে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল৷ প্রাক্তন উপাচার্য চন্দ্রশেখর চক্রবর্তী বলেন, প্রথম শ্রেণি থেকে পাশ–ফেল ফেরানোর আন্দোলন এমন একটা আন্দোলন যার পাশে না দাঁড়ালে নিজের বিবেকের কাছে অপরাধী হতে হয়৷ বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব বিভাস চক্রবর্তী ইংরেজি চালুর দাবিতে এসইউসিআই (কমিউনিস্ট)–এর ডাকা বনধের উল্লেখ করে বলেন, শিক্ষার দাবিতে এই একটি দলই বনধ ডেকেছিল, আমি সেই বনধ সমর্থন করি এবং তার জন্য আমাকে অনেক সমালোচনাও শুনতে হয়েছে৷ এই ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ভোটে জয়ী তথাকথিত জনপ্রতিনিধিরা কখনই এই শিক্ষাব্যবস্থার সদর্থক পরিবর্তনে অগ্রবর্তী হবেন না৷ তাই সমাজব্যবস্থা পরিবর্তনের আসল লডাইয়ের পথের সন্ধানে এগিয়ে চলার কথা বলেন তিনি৷ অধ্যাপক এন আর প্রধান তাঁর বক্তব্যে পাশফেল তুলে দিয়ে বুনিয়াদি শিক্ষা ধ্বংস করার সাথে সাথে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সমস্ত গণতান্ত্রিক বডিগুলো ভেঙে দিয়ে এবং উচ্চপর্যায়ের গবেষণার সুযোগ আটকে দিয়ে শিক্ষার স্বাধিকারকে ভূলুণ্ঠিত করার অপপ্রয়াসের কথা তুলে ধরেন৷ অধ্যাপক তরুণ নস্কর বলেন, রাজ্য সরকার বারবার পাশফেল চালুর প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে৷ অথচ পার্লামেন্টে তৃণমূলের প্রতিনিধিরা এ নিয়ে কোনও কথা তুলছেন না৷ কেন্দ্রীয় সরকার আইন সংশোধনের প্রসঙ্গে সম্পূর্ণ নীরব৷
প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায় শারীরিক কারণে কনভেনশনে আসতে না পারায় লিখিত বক্তব্য পাঠান৷ সভায় তা পাঠ করেন অধ্যাপক মানস জানা৷ বর্তমান শিক্ষাবর্ষেই প্রথম শ্রেণি থেকে পাশ– ফেল চালুর দাবিতে আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় এক বিশাল পদযাত্রার ডাক দিয়েছে এই শিক্ষা কনভেনশন৷