পাশ–ফেল চালু করতে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক

ফাইল চিত্র

শিক্ষার বেসরকারিকরণের লক্ষ্য নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার পাশ–ফেল প্রথা তুলে দিয়ে শিক্ষার কোমর ভেঙে দিয়েছে৷ এর পরিণামে সরকারি স্কুলে শিক্ষার মানের ভয়াবহ অবনমন ঘটেছে৷ বিভিন্ন সমীক্ষা বারে বারে তুলে ধরেছে শিক্ষার সেই বেহাল অবস্থা৷ পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র দ্বিতীয় শ্রেণির বাংলা বই পড়তে পারে না, পারে না দুই অঙ্কের যোগ বিয়োগ গুণ ভাগ৷ আর্থিকভাবে সক্ষম অভিভাবকরা নিজেদের ছেলেমেয়েদের সরকারি স্কুলে না দিয়ে ভর্তি করাচ্ছেন বেসরকারি স্কুলে৷ সারা দেশে এখন বেসরকারি শিক্ষাই আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু৷

এস ইউ সি আই (সি) বরাবরই এই ভ্রান্ত নীতির বিপক্ষে৷ এই ইস্যুতে সিপিএম সরকারের বিরুদ্ধে প্রায় তিন দশক এস ইউ সি আই (সি) লড়েছে, তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়ে চলেছে প্রায় ৮ বছর ধরে৷ বহু মিটিং–মিছিল–ধরনা– অমান্য–স্বাক্ষর সংগ্রহের ধারাবাহিকতায় বিগত ২০১৭ সালের ১৭ জুলাই এস ইউ সি আই (সি) সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দেয়৷ পশ্চিমবঙ্গের দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষ ধর্মঘট সফল করতে ঘরে ঘরে প্রস্তুত হয়৷ জনমতের প্রবল চাপে শিক্ষামন্ত্রী পাশ–ফেল চালুর প্রতিশ্রুতি দেন৷ কিন্তু সরকার সে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে৷ দেশজুড়ে পাশ–ফেল চালুর আন্দোলনের চাপে কেন্দ্রীয় সরকার আইন সংশোধন করে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে পাশ–ফেল চালুর ঘোষণা করলেও কৌশলে তা কার্যকর করার বিষয়টি রাজ্যের উপর চাপিয়ে দিয়েছে৷ রাজ্য সরকার চালুর প্রশ্নে এখনও চরম উদাসীন৷ আবার একটা নতুন শিক্ষাবর্ষ এগিয়ে আসছে৷ সরকারি স্তরে কোনও উদ্যোগ, কোনও ঘোষণা নেই৷ জনগণের প্রত্যাশার কোনও মূল্য না দিয়ে সরকার ক্রমাগত তার জনবিরোধী চরিত্র প্রকট করছে৷

জনগণের অজ্ঞতাই শাসকের শক্তির উৎস, তাই কোনও শাসকই চায় না জনগণ শিক্ষা পাক৷ কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের শিক্ষাদপ্তরগুলো যেন শিক্ষা ব্যবস্থাটাকে ধ্বংস করার জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে৷ বাস্তবে সরকারি পরিকল্পনাতেই ধীরে ধীরে সরকারি শিক্ষা পরিকাঠামো ধ্বংস করে শিক্ষাকে বেসরকারি মালিকদের ব্যবসায়িক পণ্যে পরিণত করা হচ্ছে৷ একে রুখতেই হবে৷ তা না হলে শিক্ষা চলে যাবে সাধারণ মানুষের নাগালের একেবারে বাইরে৷ আগামী শিক্ষাবর্ষেই পাশ–ফেল চালুর ঘোষণা করতে সরকারকে বাধ্য করতে এস ইউ সি আই (সি) আবারও স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান শুরু করছে৷ মুখ্যমন্ত্রীকে ডেপুটেশনের মধ্য দিয়ে আন্দোলন আরও তীব্র করা হবে৷

(গণদাবী : ৭২ বর্ষ ৫ সংখ্যা)