সম্প্রতি নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে কেন্দ্রে দ্বিতীয় মন্ত্রীসভা গঠিত হল৷ আমরা এ দেশের কোটি কোটি নিরন্ন বুভুক্ষু মানুষ গত ৫ বছরে মোদিজির শাসন থেকে কী পেয়েছি আর আগামী ৫ বছরে কী পেতে পারি এক বার ভেবে দেখা কি উচিত নয়? এডিআর (অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস)–এর হিসাব অনুযায়ী ভারতে ২০১৪ সালে সাংসদদের ৪৪৩ জন ছিলেন কোটিপতি, আর ২০১৯ সালে নব নির্বাচিত ৫৪২ জনের মধ্যে ৪৭৫ জন কোটিপতি৷ এবারের নির্বাচিতদের মধ্যে ২৩৩ জন সাংসদ মানুষ খুন, খুনের চেষ্টা, নারী পাচার, নারী ধর্ষণ, কিডন্যাপ এবং অস্ত্র ব্যবসায়ের অভিযোগে অভিযুক্ত (গণদাবী ৭১ বর্ষ–৪৬ সংখ্যা)৷
ভারতবর্ষে ১৩০ কোটি মানুষের ৯০ শতাংশেরও বেশি দরিদ্র–নিম্নবিত্ত সম্প্রদায়ের, বড়জোর মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের অন্তর্গত৷ আর ১০ শতাংশেরও কম মানুষ কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক৷ বিশ্বের তথাকথিত বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ ভারতের সংসদীয় ব্যবস্থায় দেশ পরিচালনার জন্য নীতি নির্ধারণ, আইন–কানুন প্রভৃতি ঠিক হয় সংসদে৷ সেখানে বিপুল সংখ্যক কোটিপতি–শিল্পপতি–কর্পোরেট মালিক কাদের প্রতিনিধিত্ব করবেন তা সহজেই অনুমেয়৷ ভারতবর্ষে লক্ষ লক্ষ চাষি ফসলের দাম না পেয়ে ঋণের দায়ে আত্মহত্যা করছে, ঘরে ঘরে বেকার যুবক–যুবতীরা হাহাকার করছে, নারী পাচার, শিশু পাচার, নারী নির্যাতন দেশ জুড়ে অবাধে চলছে৷ শিক্ষা–চিকিৎসা নিয়ে অবাধে ব্যবসা করছে কর্পোরেট মালিকরা৷ অনাহারে, অপুষ্টিতে বিনা চিকিৎসায় রাজ্যে রাজ্যে শিশুমৃত্যুর অবিরাম স্রোত বইছে, নীতি–নৈতিকতা, মূল্যবোধ প্রায় নিশ্চিহ্ণ, জাত–পাত, ধর্ম–বর্ণকে উস্কানি দিয়ে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে মানুষকে বিভক্ত করা হচ্ছে সর্বগ্রাসী পুঁজিপতি শ্রেণির স্বার্থে৷ পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অমোঘ নিয়মেই দেশের কোটি কোটি নিরন্ন বুভুক্ষু মানুষের উপরে চলছে শোষণ–জুলুম–অত্যাচার আর মুষ্টিমেয় মানুষের হাতে জমা হচ্ছে কোটি কোটি কালো টাকার পাহাড়৷ কোটিপতি সাংসদরা এই পুঁজিপতি শ্রেণিরই প্রতিনিধি৷ তাঁরা মুখে যতই বলুন ‘আচ্ছে দিন’ আসবে, ‘সব কা বিকাশ সব কা সাথ’ হবে, দেশের সাধারণ মানুষের মঙ্গল হবে, – তা বাস্তবে আদৌ কী সম্ভব? স্বাধীনতা পরবর্তীকালে কিছুদিন পর্যন্ত যাঁরা রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন, তাঁদের চরিত্রে নূ্যনতম কিছু গুণ ছিল৷ সততা, নিষ্ঠার অভাবও পুরোপুরি হয়নি৷ যদিও তার কিছু দিন পর থেকেই কংগ্রেস এমনকি সিপিএম নেতারাও দুর্বৃত্তদের আশ্রয় দিয়ে তাদের কাজে লাগাতেন বিভিন্ন সময়ে– কখনও ভোটের ময়দানে, কখনও বিরোধী রাজনৈতিক দলকে কোণঠাসা করতে, এমনকি গণআন্দোলন দমন করতেও৷ বর্তমান যুগে এই দুর্বৃত্তরাই হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক দলের নেতা৷ এরাই আবার এমএলএ, এমপি হিসাবে নির্বাচিত হচ্ছে৷
বর্তমান সময়ে রাজ্যে রাজ্যে বা কেন্দ্রে অধিকাংশ নির্বাচিত সদস্যই দুর্নীতিগ্রস্ত এবং শত শত কোটি টাকার মালিক, কর্পোরেট পুঁজির প্রতিনিধি৷ ফলে, পুঁজির স্বার্থ চরিতার্থ করাটাই তাঁদের একমাত্র লক্ষ্য৷ আপামর জনসাধারণের প্রতি এঁদের কোনও দায়বদ্ধতা নেই৷ তাঁদের একমাত্র লক্ষ্য মিথ্যা নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বিলিয়ে আর কালো টাকার বিনিময়ে অসৎ উপায়ে ভোটে জেতার কৌশল আবিষ্কার করা৷
জনগণের স্বার্থবাহী আদর্শভিত্তিক রাজনীতিকে শক্তিশালী করা ছাড়া এই অবস্থা থেকে মুক্তির পথ নেই৷
জয়দেব সরকার,
দক্ষিণ ২৪ পরগণা