পাঠকের মতামত—কেন্দ্রীয় সরকারের টাকা আদায়ের নতুন কল

 

আধার-প্যান সংযোগ করতেই হবে– এ হল কেন্দ্রীয় সরকারের আয়কর দপ্তরের ফতোয়া। না করলে প্যান নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে। ৩০ জুন ২০২৩-এর মধ্যে যারা সেই সংযোগ করেনি, পরে তা করতে তাদের গুনতে হচ্ছে ১০০০ টাকা জরিমানা।

৫ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধরি সংসদে জানালেন, এখন পর্যন্ত জরিমানা বাবদ মোদি সরকার আদায় করেছে ৬০১ কোটি ৯৭ লক্ষ টাকা। সহজ হিসেবে বলা যায়, মাত্র ৬০ লক্ষ ১৯ হাজার ৭০০ জনের কাছ থেকে এই জরিমানা আদায় হয়েছে। মন্ত্রী মহাশয় আরও জানিয়েছেন, প্যান-আধার সংযোগ বাকি আছে আরও ১১ কোটি ৪৮ লক্ষের। ফলে সেই সংযোগ সম্পন্ন হলে আদায় হবে আরও ১১ হাজার ৪৮০ কোটি টাকা।

যাঁরা প্যান-আধার সংযোগ করাননি, তাঁরা ‘ফ্রি’-তে করানোর সময় অর্থাৎ ২০২৩ সালের ৩০ জুনের আগে কেন তা করাননি? খোঁজ নিলে জানা যাবে, তাঁদের ব্যাঙ্কের মাধ্যমে মোটা টাকা লেনদেন করতে হয় না। অথবা অজ্ঞতাবশত এসব কী ভাবে করতে হয় তা তাঁরা জানেন না। কিংবা, এই সংযোগ যে করতে হবে– এ কথাই জানা ছিল না তাঁদের। খোঁজ নিলে দেখা যাবে এঁদের বেশিরভাগই গরিব মানুষ। প্যান-আধার সংযোগে জরিমানা আদায়ের নামে মোদি সরকার কিন্তু এই গরিব মানুষগুলির উপরেই এক বড়সড় আঘাত হানল।

এটা গরিব মানুষের কাছ থেকে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার নতুন ‘কল’! এই ‘কল’ শুধু এখানেই বসানো হয়নি। কেন্দ্রীয় সরকার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে নূ্যনতম পরিমাণ টাকা না রাখলে জরিমানা বাবদ টাকা কেটে নেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। সেই বাবদ শুধুমাত্র স্টেট ব্যাঙ্কই জরিমানা চালুর পরপ্রথম বছর ২০১৭-১৮ সালেই প্রায় ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা আদায় করেছে। অন্যান্য কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির এই জরিমানা আদায়ের মোট যোগফল কত তা অবশ্য তারা জনগণকে ঢাকঢোল পিটিয়ে জানায়নি। ব্যাঙ্কে নূন্যতম টাকা রাখতে না পারা এই মানুষগুলি কারা? এঁরাও হতদরিদ্র গরিব মানুষ। নূন্যতম পরিমাণ টাকা রাখার সামর্থ্যও তাঁদের নেই। অথচ সেই মানুষগুলির কাছ থেকেই মোদি সরকার এই হাজার হাজার কোটি টাকা কেটে নিচ্ছে! এ ভাবেই বোধহয় ‘সব কা সাথ সব কা বিকাশ’ ঘটাচ্ছে কেন্দ্রের মোদি সরকার!

গরিব কৃষকদের মাসে ৫০০ টাকা করে দেওয়াটা মোদি সরকার যেমন ফলাও করে প্রচার করে চলেছে, আর সেই টাকা পেয়ে কৃষকের কী বিপুল উন্নতি হচ্ছে, মোদিজি নিজেই ‘মন-কী-বাত’-এ সে কথা যেমন করে জানাচ্ছেন, তেমন করে যদি টাকার আইনি-ছিনতাইয়ের নতুন ‘কল’টার কথা প্রচার করতেন, তা হলে জনসাধারণ তাঁর গরিব-দরদের স্বরূপ আরও ভাল ভাবে বুঝতে পারত।

সমীর দাস

কৃষ্ণনগর, নদীয়া