অযোধ্যা মামলার রায় বাহির হইয়াছে৷ যাঁহার বুকের পাটা আছে তিনি ইহাকে বিচার ব্যবস্থার প্রহসন বলিতেই পারেন৷ যাঁহাদের তাহা নাই, তাঁহারাও ইতিউতি অসন্তোষ ব্যক্ত করিতেছেন৷ রাজনীতির ব্যবসায়ীগণ ‘দেশদ্রোহী’ না হইবার তাগিদে মোটামুটি মানিয়া লইয়াছেন৷ রাষ্ট্রের প্রভুকূল যাহাতে রুষ্ট না হয়েন তজ্জন্য, ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ গোছের অবস্থানে নিজেদেরকে আবদ্ধ রাখিয়াছেন৷
নেট দুনিয়ার কিছু অর্বাচীন বালক প্রশ্ন তুলিতেছেন, এইবার কি রামকে, স্বীয় পত্নীকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করিবার অপরাধে অভিযুক্ত করা হইবে? বা শূদ্র শম্বুক মুনির বিদ্যাচর্চার কারণে, তাঁহার হত্যাপরাধী রূপে রামকে অভিযুক্ত করা হইবে? অথবা লক্ষ্মণকে শূর্পনখার নাসিকাচ্ছেদনের কারণে ‘অ্যাটেম্পট টু মার্ডার’ কেসে অভিযুক্ত করা হইবে? ইত্যাদি, ইত্যাদি, … সে যাহাই হউক, অপর একটি খবর প্রায় লোকচক্ষুর আড়ালে থাকিয়া যাইতেছে৷ রাম মন্দিরের কোষাগারের চাবি কাহার কাছে থকিবে–তাহা লইয়া ধর্মব্যবসায়ীদের মধ্যে চুলোচুলি, হাতাহাতি, লাঠালাঠি, এমনকি খুনকরিবার ষড়যন্ত্র পর্যন্ত হইতেছে৷
সংবাদে প্রকাশ, ‘তপস্বী ছাউনির মহন্ত পরমহংস দাসের অভিযোগ, রামমন্দির তৈরির দাবিতে তিনি জেলে গিয়েছেন, আমরণ অনশনেও বসেছেন, কিন্তু এখন মন্দিরের জন্য সরকারের গড়া অছি পরিষদে তাঁর সামিল হওয়া রুখতে তাঁকে হত্যার চেষ্টা করেছে রামমন্দির ন্যাস৷ তাঁকে হত্যার চেষ্টার জন্যই লোক পাঠিয়েছেন ন্যাসের প্রধান নিত্যগোপাল দাস৷ (আনন্দবাজার পত্রিকা –১৭.১১.২০১৯)
আবার ন্যাসের সদস্য বেদান্তীর অভিযোগ ‘রাম মন্দির নির্মাণের সমস্ত কৃতিত্ব একাই ঝুলিতে পুরতে চায় পরমহংস, সেই কারণেই নাকি তাঁকে নিত্যগোপালকে এবং যোগী আদিত্যনাথকে বদনাম করতে এই সব অপবাদ দিচ্ছেন, চক্রান্ত করছেন৷’ (ওই)
প্রকাশিত হইয়াছে, বিভিন্ন মঠ, আখড়া, মন্দিরের আলোচনায় কে কে থাকিবেন ওই ট্রাস্টে, কাহার হাতেই বা থাকিবে মন্দিরের চাবি, টাকার সিন্দুক, লড়াই মূলত ইহা লইয়াই৷ আবার বিশ্ব হিন্দু পরিষদের বিরুদ্ধেও নির্মোহী আখড়ার মহন্ত দীনেন্দ্র দাসের অভিযোগ তহবিল নয়ছয়ের৷ (ওই)
যাহাই হউক, বিপুল প্রচারের আলোয় আলোকিত মন্দিরে যে বিপুল পরিমাণে অর্থাগম হইবে সকলেরই পাখির চোখ সেই অর্থের উপর৷ বহুদিন তাঁহারা কঠোর সন্ন্যাস ধর্ম পালন করিয়াছেন, বহু ত্যাগ স্বীকার করিয়াছেন (যদিচ দুর্মুখে অন্য কথা বলে)৷ এক্ষণে সুযোগ সদ্ব্যবহার করিতে তাঁহারা, যে কোনও পন্থাই অবলম্বন করিতে পারেন৷ ধন্য সন্ন্যাস, ধন্য ধর্মবিশ্বাস
এস মহাপাত্র, খড়গপুর