২২ মার্চ সেই বহু প্রতীক্ষিত মহামিছিলের সাক্ষী হলাম। শিক্ষার বেসরকারিকরণ, গৈরিকীকরণ, বেকারত্ব বৃদ্ধি এবং শ্রমিক ছাঁটাই, মাদক দ্রব্যের ঢালাও ব্যবসা, বিদ্যুৎ সহ পেট্রোপণ্যের দাম বৃদ্ধির মতো বহু জ্বলন্ত সমস্যার শিকার সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ের দাবিতে মিছিল এগোল হেদুয়া পার্ক থেকে ধর্মতলার দিকে। চেনা রাস্তা। আরও সরল করে বললে রোজকার যাতায়াতের পরিসর। কতবারই তো বাসে, হেঁটে, মেট্রো কিংবা ট্রামে যাতায়াত করেছি। তবে আজ সেই চেনা রাস্তাটা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা কমরেডদের ভিড়ে ঠাসা রাজপথ। রাজপথের দু’ধারে পড়ে থাকা অভুক্ত শিশু, পোড়া হাঁড়ি, ছেঁড়া কাপড়ের তালিমারা জামাকাপড়ের মানুষগুলির মুখও যেন মিশে গিয়েছিল মিছিলের সাথে। ওদের বেঁচে থাকার দাবিও মিছিলের দাবির সাথে মিলেমিশে এক হয়ে গিয়েছিল।
শয়ে শয়ে মানুষের হাতে লাল পতাকা আর ফেস্টুন। একই দাবিতে হাজার হাজার মুষ্ঠিবদ্ধ হাত যেন আকাশ ছুঁতে চাইছে। প্রখর রোদ, গলা-ফাটা তেষ্টা, পুলিশি পাহারা ওদের থামাতে পারে না। মিছিলে হাঁটছি আট থেকে আশি সবাই।
এত বড় জনস্রোতে কারও কারও কিছু অসুবিধা হয়তো ঘটেছে। কাজে যাওয়ার পথে কাউকে হয়তো কিছু সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। তবু সব ছাপিয়ে এই সুসজ্জিত, শান্তিপূর্ণ মিছিলের প্রতি কোনও বিরূপতা চোখে পড়েনি। বরং সহযোগিতাই করেছেন প্রায় সকলে। এই প্রথমবার এক বিপুল জনস্রোতে নিজেকে খুব সুরক্ষিত বলে মনে হল। কোনও নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে খুঁজতে ইচ্ছে করেনি। যার সঙ্গেই দেখা হয়েছে, হাসিমুখে কমরেড বলে সম্বোধন করেছেন। জলের বোতল এগিয়ে দিয়েছেন অচেনা মুখ। এ যেন রক্তের সম্পর্ক ছাপিয়ে আরও অনেক গভীর সম্পর্ক। ব্যক্তিস্বার্থ থেকে বেরিয়ে এসে যৌথ স্বার্থের কথা ভাবতে শেখার প্রথম ধাপ। এক অনাবিল আনন্দ। আকাশ-বাতাস কাঁপানো ইনকিলাবের স্লেগান যেন দিন বদলের দৃপ্ত অঙ্গীকার।
প্রিয়াঙ্কা চ্যাটার্জী, কলকাতা-৪