মোবাইল ফোন আমাদের জীবনে ভীষণই অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। কর্মক্ষেত্র এমনকি ব্যক্তিগত জীবনও আজ মোবাইল ছাড়া অচল। আমাদের যাবতীয় পরিচয়পত্র সহ ব্যাঙ্ক, রান্নার গ্যাস, ইলেকট্রিসিটি, সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ নথিতে একটি রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বর রাখা আবশ্যিক। অথচ জনগণের ট্যাক্সের টাকায় গড়ে ওঠা বিএসএনএল-এর মতো সরকারি সংস্থার পরিকাঠামো ও সম্পত্তি বেসরকারি হাতে বেচে দেওয়া হচ্ছে। আজ অন্য সব পরিষেবার মতো ফোন পরিষেবাকেও বেসরকারিকরণ করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এরকম একটা গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা পুঁজিপতিদের মুনাফার খুবই লোভনীয়় ক্ষেত্র। ইচ্ছাকৃতভাবেই বিএসএনএল-এর পরিষেবাকে রুগ্ন করে দিয়ে সাধারণ মানুষকে বাধ্য করা হচ্ছে বেসরকারি পরিষেবা নিতে। তাই মুনাফা, আরও মুনাফার জন্য জিও, এয়ারটেল, ভোডাফোন-এর মতো মোবাইলের নেটওয়ার্ক ব্যবসায়ীরা একচেটিয়াভাবে তাদের মাশুল বাড়িয়েই যাচ্ছে। কয়েক বছর আগে রিলায়েন্স জিও কোম্পানি বিনামূল্যে ইন্টারনেট ও আনলিমিটেড ভয়েস কলের পরিষেবা দিয়ে মানুষকে ইন্টারনেটের নেশায় আসক্ত ও অভ্যস্ত করে দিয়েছে। এখন ইচ্ছামতো বিল বাড়িয়ে অর্থনৈতিকভাবে শোষণ তীব্র করছে। একটা পরিবারে যদি চার জন সদস্য থাকেন, তা হলে সকল সদস্যের মোবাইল বিলের জন্য মাসে প্রায় হাজার টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে।
একদিকে দেশের সাধারণ মানুষের আর্থিক দুর্দশা বেড়ে চলেছে। বেকারত্ব বাড়ছে, বাড়ছে জিনিসের দাম। কমছে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা। তার উপর এই মোবাইল রিচার্জের মাশুল বৃদ্ধি মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের সমান। মোবাইলের এইপ্রতিদিনের দেড় জিবির ইন্টারনেট যুবকদের বেকারত্বের জ্বালা ভুলিয়ে দিচ্ছে, আফিমের মতো একপ্রকার নেশায় আচ্ছন্ন করে রাখছে ছাত্র-যুবদের। ইন্টারনেটে অসংখ্য রিল-ভিডিও, অনলাইন গেম, অশ্লীল সিনেমা-ছবি-ভিডিও কেড়ে নিচ্ছে সুন্দর শৈশব-কৈশোর-যৌবন। নিষ্পাপ শিশুরাও রক্ষা পাচ্ছে না এর করাল গ্রাস থেকে।
রিলায়েন্সের মতো পুঁজিপতি কোম্পানি যারা সদ্যসমাপ্ত অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি, তৃণমুল কংগ্রেস, কংগ্রেস সহ শাসক দলগুলিকে ইলেক্টোরাল বন্ডের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা দিয়়েছিল, আজ সেই টাকা তারা জনগণের ঘাড় ভেঙে উসুল করে নিচ্ছে। টেলিকম রেগুলেটারি অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (ট্রাই)-এর মতো সরকারি সংস্থা যাদের কাজ মাশুল বৃদ্ধি সহ টেলিকমিউনিকেশন সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয় নিয়ন্ত্রণ করা, তাকে কাঠের পুতুল বানিয়ে রেখে বেসরকারি কোম্পানিগুলোকে ইচ্ছেমতো মুনাফা বৃদ্ধির সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে।
মহম্মদ মহিউদ্দিন রেজা
কলকাতা- ৭০