Breaking News

পাঠকের মতামতঃ ভোটের ভাষ্য

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে ধর্মনিরপেক্ষতা ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির আওয়াজ উঠেছিল। আজকের ভারত বাস্তবে ধর্ম প্রেক্ষিত থেকে কতটুকু মুক্ত হতে পেরেছে? স্বাধীনতার পর থেকেই এ দেশের শাসক দলগুলি ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকে তাদের ভোটবাক্স ভরার একটি হাতিয়ার করে ফেলেছে। বর্তমানে তাকে আরও ভয়ঙ্করভাবে ব্যবহারে খামতি নেই। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রের সরকারি দল এবং রাজ্যের সরকারি দল উভয়েই উন্মত্ত প্রতিযোগিতায় মত্ত। রামনবমী ঘিরে যে উন্মাদনা, যে অস্ত্রের ঝনঝনানি দেখা গেল তার পরিণাম যে কোনও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের মনে অস্থিরতা ও ভীতি সৃষ্টি না করে পারে না। বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই এ যেন একটি অত্যন্ত সাধারণ ঘটনায় পর্যবসিত হয়েছে।

২০১৬ সাল থেকে তৃণমূল সরকারের এ বিষয়ে ভূমিকাও যথেষ্ট প্রশ্নের সামনে দাঁড়ায়। নিজস্ব ভোটব্যাঙ্করক্ষার লক্ষ্যে নানা দেব-দেবীর পুজো এবং আঞ্চলিক স্বার্থ পূরণ করে এমন কিছু উপসর্গ খুঁজে তাকে উৎসাহ দেওয়ায় কমতি কই? রামনবমী থেকে তারা যাতে ফায়দা তোলাতে পিছিয়ে না পডে, সে জন্য তাদের পক্ষেও আয়োজন ছিল যথেষ্ট। এমনকি প্রশাসনিক ক্ষেত্রে যে রামনবমীর বার্তা দেওয়া হয়েছে সেখানেও রামের তীর-ধনুক হাতে ছবি-প্রদর্শিত হয়েছে।

২০২৪-এর পর থেকে রামনবমী উপলক্ষে রাজ্য সরকার ছুটিও ঘোষণা করেছে। তাদের দলের পক্ষ থেকেও নানা রকমের বর্ণাঢ্য অস্ত্র-মিছিল হয়েছে। এই ধর্মভিত্তিক রাজনীতি এখন সংসদীয় দলগুলির কাছে ভোটের অনুষঙ্গ।

স্বাধীনতা-উত্তর ভারতে কংগ্রেসের ভূমিকাও অনুরূপ। এ রাজ্যে ৩৪ বছরের দীর্ঘ সিপিএম শাসনে বাম রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে তাদের যতখানি সংগঠিত ভাবে মানুষকে সচেতন ও প্রগতিমুখী করার কথা ছিল, তার ভীষণ অভাব দেখা গেছে। সেই দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে বিভেদকামী রাজনৈতিক শক্তিগুলি। রাষ্ট্রশক্তি যখন মৌলবাদী শক্তির হাতিয়ার হয়ে ওঠে, তখন তা ভয়ের কারণ হয়। মৌলবাদের জবাব দিতে আর একটি মৌলবাদকে আশ্রয় করে ভোট বৈতরণী পারের চিন্তা ভ্রান্ত। ভোটের লক্ষ্যে ইমামভাতা, পুরোহিতভাতা সরকারি তহবিল থেকে দেওয়া ধর্মনিরপেক্ষতার পরিপন্থী। ধর্মের আড়ালে যেভাবে ভোটবাক্সের পুঁজি রাজনৈতিক দলগুলো ভরতে চায় তাকে ঠেকাতেই হবে। সাম্প্রদায়িক চিন্তার বিপরীতে চাই শিক্ষা-স্বাস্থ্য-রুজি-রুটি বাসস্থানের দাবিতে আন্দোলন।

তনুশ্রী বেজ, মেদিনীপুর

লেখাটি গণদাবী ৭৭ বর্ষ ৩৬ সংখ্যা ১৮ এপ্রিল ২০২৫ এ প্রকাশিত