পাঠকের মতামতঃ ‘বামপন্থার ঝান্ডা তুলে রেখেছ তোমরাই’

শ্যামলাল সাউ। আমার শ্যামলাল কাকা। বাবার ছোটবেলার বন্ধু এবং ঘনিষ্ঠ কমরেড। বামপন্থী কর্মী হওয়ার সুবাদে ‘৭২-এর আধা ফ্যাসিবাদী সন্ত্রাসের সময় আক্রান্ত হয়েছেন। ভোটের প্রচার চলাকালীন কিছুদিন অন্তর দেখা হয়েছে পাড়ায়। একক বামপন্থী দল হিসাবে আমরা দেশে ১৫১টি ও রাজ্যে ৪২টি আসনে লড়ছি এবং বামপন্থার ঝান্ডাকে আমরাই উর্ধ্বে তুলে রেখেছি– এই রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের জন্য তিনি সাধুবাদ জানিয়েছেন।

ভোটের দিন সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ যখন বুথের ভেতর থেকে বেরিয়ে বাড়ির সামনে বুথ ক্যাম্পে এসে বসি, তার উল্টোদিকেই সিপিআই(এম)-এর অস্থায়ী বুথ ক্যাম্প ছিল। শ্যামলাল কাকা নিজের থেকে এসেই কথা বলেন। খোঁজখবর নেন। তারপর আবার আমি বুথের ভেতর ফিরে যাই। আমার বুথেই ওনার ভোট ছিল। ভোট দিয়ে বেরিয়ে যাবার সময় আমার দিকে খানিক হাসেন।

পরে যখন বুথের পাঠ চুকিয়ে পাড়া হয়ে পার্টি সেন্টারে ফিরছি, তখন তাঁরা রাস্তার পাশে চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন, আমাকে দেখে ছুটে এসে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন, আজ গোটা দিন ধরেই তোদের নিয়ে আলোচনা চলছে।

তোরা যেভাবে বাইরে সাজিয়ে গুছিয়ে সারাদিন বুথ ক্যাম্প আগলে বসে থাকলি, কতগুলো ইয়াং ছেলেমেয়ে বসে থাকল, এটা আমাকে অনেক বেশি আনন্দ দিয়েছে। এটুকু জেনে রাখিস পার্টির নেতারা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেই সিদ্ধান্তের সাথে তোর বাবা, আমি কেউ একমত নই! এই কংগ্রেসীরা আমার বাড়ির ভেতর ঢুকে আমার মাকে চুলের মুঠি ধরে মেরেছে। চালের হাঁড়ি লাথি মেরে উল্টে দিয়েছে, তোর বাবাকে মেরেছে পোস্টার মারতে গিয়ে, সেই কংগ্রেসের সাথে আমাদের জোট মেনে নিতে হবে? এটা আবার বলিস না কোথাও। আমার ভোটটা তোদের কাছেই গেছে। তোদের ক্যাম্পে যে সমস্ত শিক্ষিত ছেলেমেয়েদের দেখলাম তাতে মনে হয় এসইউসি ক্ষমতা পাক আর না পাক কিন্তু তোদের দলেই এমন ছেলেমেয়েরা আসবে। তোরা লড়ে যা।

এরপর আমি পার্টির হোলটাইমার হিসেবে জীবন বেছে নিয়েছি শুনে মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। তখন শ্যামলাল কাকুর চোখের কোনা চিকচিক করছে। কী ভাবে সেন্টারে থাকি, কারা থাকি সব খোঁজ-খবর নিলেন। বললেন, আসিস পরে কথা হবে।

সত্যজিৎ দে, কলকাতা