নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যালয়ের পুনর্মিলন উৎসব ছিল ২৫ ডিসেম্বর। উৎসবের প্রধান উদ্যোক্তা বিদ্যালয়ের প্রাক্তনী এবং পৃষ্ঠপোষক অবশ্যই আমাদের সবার প্রিয় নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম।
বিবেকানন্দ শতবার্ষিকী হলে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি শেষ হওয়ার পর যখন আমরা সিনিয়র সেকশন স্কুল বিল্ডিংয়ের সামনে এলাম, তখন একটি বিজ্ঞাপন দেখে স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। বিজ্ঞাপনটি একটি হীরের জুয়েলারি সংস্থার। তাতে অর্ধ্বনগ্ন নারীবক্ষের ছবি, অবশ্যই হীরের নেকলেস পরানো। এতদিন আমরা আমাদের বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠানকে মিশনকে সম্পূর্ণ ‘নারী বিবর্জিত’ প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখে এসেছি, যেখানে পুরুষ ছাড়া নারীর কোনও ভূমিকা বা স্থান ছিল না। সেখানে শুধুমাত্র বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে অর্থ রোজগারের সংগ্রহের জন্য এই ছবিটি ব্যবহার করা হল, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনের স্বার্থে।
এই দৃশ্য-দূষণকে সহ্য করতে না পেরে আমাদের ‘৭২ এর ব্যাচের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে লিখলাম ‘at last, our sacred institution has embraced view pollution…’! তাৎক্ষণিক জবাবে আর এক সহপাঠী লিখল ‘only the money matters…’। এরপর আম্রকুঞ্জের দিকে এগোতেই দেখলাম বেশ কয়েকটি বিজ্ঞাপন, বিশেষত ইলেকট্রনিক গ্যাজেট ও ইকুইপমেন্টের এবং কিছু স্টাডি মেটেরিয়ালের। ইতিপূর্বে এমনকি স্কুলের সুবর্ণ জয়ন্তীতেও কোনও বিজ্ঞাপন দেখিনি ২০০৮ সালে। তখনও প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়েছিল। যতদূর জানি প্রাক্তনীরা এই তহবিলে এবং রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠানকেও যথেষ্ট ও যথাসাধ্য আর্থিক সাহায্য দিয়ে থাকেন। তা হলে এই দৃশ্য দূষণকারী বিজ্ঞাপন কী কারণে? উল্লেখ্য যে, সেদিন যে সহস্রাধিক ছাত্রের উপস্থিতি ঘটেছিল তাদের সঙ্গে বেশ কিছু ছাত্রের স্ত্রী এবং কারও কারও ক্ষেত্রে ছোট সন্তানরাও ছিলেন।আসলে বিশ্বায়িত বাজার অর্থনীতির আগ্রাসন থেকে কেউই মুক্তি পাচ্ছে না। এমনকি শ্রীরামকৃষ্ণের আদর্শে অনুপ্রাণিত বিবেকানন্দের মতো মহান মানুষের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত রামকৃষ্ণ মিশনও!
দেবাশিস রায়
লক্ষ্মীনারায়ণ তলা রোড, হাওড়া