এখন একটা কথা তোলা হচ্ছে যে, সরকারি বিদ্যালয়ে ছাত্র কমে যাচ্ছে, সবাই বেসরকারি স্কুল পছন্দ করছে। সুতরাং সরকারি স্কুল বন্ধ করা হোক, সরকারি টাকার বাজে খরচ দরকার নেই। ভাবখানা এমন যেন, সরকার কোনও বাজে খরচই করে না। এই যে অজস্র দুর্নীতি, এতেই তো বিপুল টাকা নষ্ট হচ্ছে! একে আটকানোর চেষ্টা কোথায় সরকারের? অনেকে এমনও বলেন, সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই তাদের ছেলেমেয়েদের সরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তি করে না।
সরকারি বিদ্যালয়ের ওপর মানুষ কেন এখন ভরসা রাখতে পারছে না, আগে তো পারত, এমনকি এখনও উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে, বিশেষ করে ডাক্তারি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে তারা তো সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে পড়ে! এখন যে মানুষ প্রাইমারি বা মাধ্যমিকে বেসরকারি স্কুলের দিকে ছুটছে তার জন্য দায়ী কে? ভালো পরিকাঠামো, ছাত্র শিক্ষকের অনুপাত যথাযথ রেখে উপযুক্ত সংখ্যক শিক্ষক দেওয়া, পাশ-ফেল প্রথা চালু, সঠিক পরিবেশ বজায় রাখা– এটা কার দায়িত্ব? জনগণের করের টাকা জনগণকে পরিষেবা দেওয়ার জন্য খরচ করা হবে এটাই তো স্বাভাবিক। তা না করে এত রমরমিয়ে বেসরকারি বিদ্যালয় গড়ে তোলার অনুমতি কে দেয়? সরকারই তো! ব্যবসা করার তো অনেক জায়গা আছে, চিকিৎসা, শিক্ষাক্ষেত্রগুলি ব্যবসায়ীদের হাতে না তুলে দিলে কি চলছিল না? ক’জনের ক্ষমতা আছে এই সুযোগ নেওয়ার? হয়তো কোনও রকমে সন্তানদের অনেক কষ্টে প্রাইমারিতে পড়াতে পারবে, তারপর? এখন সেমেস্টার পদ্ধতিতে পড়া মানে তো বারবার টাকা দিয়ে ভর্তি হওয়া। চার বছরের ডিগ্রি কোর্স চালু হচ্ছে কোনও রকমের পরিকাঠামোর ব্যবস্থা না করেই। তাতে ছাত্রদের গুণগত শিক্ষা দেওয়া যাবে, না তা কম খরচে হবে?
শিক্ষার মতো হাসপাতাল তথা স্বাস্থ্যক্ষেত্রকেও বেসরকারি মালিকদের হাতে বেচে দিচ্ছে সরকার। যে শিক্ষানীতি বা স্বাস্থ্যনীতি গ্রহণ করার ফলে আজ সরকারি স্কুল এবং হাসপাতালের এই হাল, সেই নীতি গ্রহণের প্রশ্নে ভোটসর্বস্ব দলগুলোর কোনও পার্থক্য আছে কি?
মানুষ কঠিন পবিশ্রম করে যে আয় করছে, তা বেশিরভাগ খরচ হচ্ছে চিকিৎসা ও শিক্ষা কিনতে। এই যে সর্বত্র দেশের রাজনীতিবিদদের সাথে পুঁজির মালিকদের যোগসাজশ চলছে, যার ফল ভোগ দেশের সাধারণ মানুষকে করতে হচ্ছে তা বন্ধ হবে কী করে?
গৌতম দাস, মালদা