Breaking News

পাঠকের মতামতঃ  প্রসূতি মৃত্যু, দায় কার?

গত ১৪ ডিসেম্বর ‘অক্সিটোসিন নাকি ডাক্তারের গাফিলতিতে প্রসূতি মৃত্যুঃ বিতর্ক’– এই বিষয়টি সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা, পরিবারকল্যাণ অধিকর্তারা চিকিৎসকদের দোষারোপ করছেন। আবার চিকিৎসকদের বক্তব্য ‘‘প্রসব সহজ করার জন্য যে ওষুধ অক্সিটোসিন ব্যবহৃত হয় তার মান একেবারেই সন্তোষজনক নয়। সেটি ব্যবহার করার পর বহু সুস্থ প্রসূতির অবস্থা খারাপ হচ্ছে, তাদের কিডনি আচমকা বিকল হয়ে যাচ্ছে, বার বার বলা সত্তে্বও স্বাস্থ্য দফতর কেন্দ্রীয় সরকারের অধিকৃত একটি সংস্থার থেকেই অক্সিটোসিন কিনে যাচ্ছে।’’

সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, চিকিৎসকরা বারবার বলার পরও কেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্য দফতর ওই সংস্থা থেকে নেওয়া ওষুধের গুণমান পরীক্ষা করাচ্ছে না? কেন ওই সংস্থা থেকেই ওষুধ নেওয়া হচ্ছে এখনও? এখানেও কি বিরাট দুর্নীতিচক্র কাজ করছে, নাকি রাজ্য ও কেন্দ্রের আঁতাঁত আছে? ঠিক যেমন ভাবে আর জি কর হাসপাতালে চিকিৎসক-ছাত্রী অভয়ার মৃত্যু প্রসঙ্গে অত্যন্ত তৎপরতার় সঙ্গে সিবিআইকে নিয়োগ, সুপ্রিম কোর্টের সরাসরি প্রবেশ ন্যায়বিচার দিতে!

আমরা সাধারণ মানুষ আশ্চর্য হয়ে লক্ষ করলাম, অভয়ার মৃত্যু বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকার দোষীদের আড়াল করতে চেষ্টা করছে শুধু নয়, তাদের মাথার উপর ছাতাও ধরেছে।

আর কেন্দ্রীয় সরকার নীরবতা পালনের কর্মসূচি নিয়েছে, তাদের নিযুক্ত সিবিআই এবং সুপ্রিম কোর্টের এই দীর্ঘ সময়ে নিট রেজাল্ট শূন্য। ঠিক তেমনি কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থার থেকে কেনা অক্সিটোসিনের ব্যাপারেও রাজ্য সরকার মৌন বরং উল্টে ডাক্তারদের দোষারোপ করতে ব্যস্ত। আর জি কর সহ অন্যান্য সরকারি হাসপাতালে যে দুর্নীতিচক্র চলছে এবং স্বাস্থ্য অধিকর্তাদের ভূমিকাও ইতিমধ্যে মানুষের কাছে পরিষ্কার।

চলতি বছরে মেডিকেল এডুকেশনের প্রবেশিকা পরীক্ষা সংক্রান্ত দুর্নীতি এবং কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকাও দেশের জনগণের কাছে অজানা নয়। এই সমস্ত বিষয়গুলিকে যদি এক সূত্রে বাঁধা যায় তা হলে এটা বোঝা যাবে যে স্বাস্থ্য পরিষেবা, শিক্ষা পরিষেবা উভয় ক্ষেত্রেই কেন্দ্র-রাজ্য উভয় সরকার সমমনস্ক এবং তাদের মধ্যে গভীর আঁতাঁত বর্তমান, যা জনস্বার্থের পরিপন্থী।

একটা গণতান্ত্রিক দেশের সরকারের দায়িত্ব শিক্ষা ও স্বাস্থ্য দুই ক্ষেত্রেই পরিষেবা দেওয়া। কিন্তু বর্তমানে এই দুই ক্ষেত্র সরকার বেসরকারি মালিকেরহাতে তুলে দিতে ব্যস্ত। বেসরকারিকরণের এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ১৯৮০ সালে, যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার সেই নীতি মেনে চলছে। সরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল শিক্ষার একটু একটু করে বেসরকারিকরণ করা হচ্ছে। অর্থাৎ সরকার সাধারণ মানুষের ট্যাক্সের টাকায় গড়ে ওঠা হাসপাতাল ও তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠাগুলি থেকে বেসরকারি মালিকদের মুনাফা লুটতে সুযোগ দিচ্ছে। সরকার কোনও দায়িত্ব নিতে অনিচ্ছুক।

মিঠু নাথ

আনন্দপুর, কলকাতা-১০৭