Breaking News

পাঠকের মতামতঃ নীল সাদা ইউনিফর্ম খামখেয়ালি সিদ্ধান্ত

রাজ্য সরকার সম্প্রতি সমস্ত স্কুল ইউনিফর্মের রঙ নীল-সাদা করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নবান্নের মতে, রাজ্য সরকারি ও সরকার পোষিত স্কুলে একরঙা পোশাক চালু করে নিজস্ব পরিচয় তৈরি করতে চাইছে। প্রশ্ন জাগে, নীল-সাদা রঙই বেছে নেওয়া হল কেন? আর কোনও রঙ কি বেছে নেওয়া যেত না? নাকি, এ রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের প্রিয় রঙ বলেই তা বিল্ডিং, ফ্লাইওভার থেকে স্কুলপোশাক সর্বত্র সেই রঙ ব্যবহার করতে হবে? রঙ বা মতাদর্শ, শাসকের পছন্দ হলে সেটাই সব জায়গায় মান্যতা পাবে আর ভিন্ন মত বা রঙের জায়গা হবে না? এমন মনোভাবের পিছনে যে একপ্রকার একনায়কতান্ত্রিক মানসিকতা রয়েছে, সেটা তাঁরা অস্বীকার করতে পারেন কি?

শিক্ষামন্ত্রী অবশ্য বিধানসভায় নীল-সাদা রঙের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, নীল-সাদা রং এক ধরনের শুভর প্রতীক। সাদা রঙ শান্তি বা শুভ-স্বচ্ছতার প্রতীক বলে জানি। কিন্তু নীল সাদা রঙের এমন বিশেষ ‘শুভার্থবহ তাৎপর্য’ আছে বলে জানা ছিল না। যাইহোক, রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী যখন বলেছেন, তখন নিশ্চয়ই আছে। আসলে শিক্ষামন্ত্রী ভালো করেই জানেন, মুখ্যমন্ত্রীর প্রিয় রঙ ছাড়া নীল সাদা রঙকে বেছে নেওয়ার আর কোনও কারণনেই। এই একনায়কতান্ত্রিক মানসিকতাকে আড়াল করতে গিয়েই তিনি এমন বালখিল্যসুলভ মন্তব্য করেছেন।

নবান্নের শীর্ষমহলের বক্তব্য, রাজ্যের ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্পীদের সুবিধা করে দিতেই নাকি এই উদ্যোগ। এটিও একটি ভ্রান্ত যুক্তি। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে জানি, প্রায় সব স্কুলেই অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্থানীয় দর্জি বা বস্ত্র ব্যবসায়ীদের ডেকে শিক্ষার্থীদের মাপ নিয়ে পোশাক তৈরি করানো হয়। বর্তমান ব্যবস্থাতেই ক্ষুদ্র শিল্পী ও ব্যবসায়ীদের লাভ হয়। একে কেন্দ্রীভূত করে দিলে সরকার ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরাই তার সুযোগ পাবে সেটা নিশ্চিত করতেই কি এই উদ্যোগ?

স্কুলগুলি যখন তাদের ইউনিফর্মের রঙ বা ডিজাইন ঠিক করে, তখন তাদের মাথায় রাখতে হয়, সেই স্কুলের অতীত ঐতিহ্যের কথা, তার প্রতিষ্ঠাতাদের আদর্শের কথা এবং নানা ব্যবহারিক সুবিধার কথা। স্কুলপোশাক ও তার রঙ তাই স্কুলের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। সব স্কুলের পোশাকের রঙ একই হয়ে গেলে যেমন তার ঐতিহ্যকে অস্বীকার করা হবে, তেমন তার সাংস্কৃতিক বিশিষ্টতাকেও অগ্রাহ্য করা হবে।

বহু শিক্ষক শিক্ষিকাও এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন। প্রত্যেক স্কুলের পোশাকের রঙ একই হয়ে গেলে শিক্ষার্থীদের আলাদা করে চিনে নিতে সমস্যা হবে। আরও নানা ব্যবহারিক অসুবিধার কথা উঠে আসছে শিক্ষকদের বক্তব্যে।

পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাব্যবস্থায় সমস্যা কম নেই। সরকারি স্কুলগুলির পরিকাঠামোগত দৈন্যদশা প্রকট হয়ে উঠেছে করোনা মহামারীর সময়ে। অবৈজ্ঞানিক ও সেকেলে সিলেবাসেরও পরিবর্তন দরকার। ব্যাপক সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগের দিকেও নজর দেওয়া দরকার। স্কুলপোশাকের ‘রঙবদল’ না করে রাজ্য সরকার বরং এইসব প্রয়োজনীয় সমস্যাগুলি সমাধান করার দিকে মন দিক। তাতেই ছাত্রদের মঙ্গল।

 জিতাংশু নাথ, কলকাতা-৫৯

গণদাবী ৭৪ বর্ষ ৩৪ সংখ্যা ১৫ এপ্রিল ২০২২