হিটলারের প্রচারসচিব গোয়েবলসের নীতি ছিল, ‘‘মিথ্যাকে বারবার বলো, জোরের সঙ্গে বলো, লোকে তা হলে সেটা বিশ্বাস করবে, এমনকি তুমিও একদিন সেটা বিশ্বাস করতে পার।” সেটা ছিল, জার্মানির ১৯৩৬-‘৪৫-এর জমানা। আর এখন ভারতবর্ষে সেই নীতি মেনেই বিজেপি ও তার সহযোগীরা সমস্ত মিডিয়াতে নানা মিথ্যাকে প্রতি ক্ষণে সত্যি বলে বিশ্বাস করানোর অপচেষ্টা রীতিমতো পরিকল্পিত উপায়ে চালিয়ে যাচ্ছে।
তাদের ইতিহাস বিকৃতির নানা কুমতলব, পরিকল্পনা, চেষ্টার কথা বারেবারে প্রকাশ পেয়েছে। তবে যতটুকু প্রকাশ পেয়েছে তা ভাসমান হিমশৈলের চূড়াটুকু বললে অত্যুক্তি হবে না। নাট্যাঙ্গনেও তাদের এই অপচেষ্টার নজির প্রবহমান। কয়েক বছর আগেই বি ভি করন্থ প্রতিষ্ঠিত কর্ণাটকের মাইশোরের ঐতিহ্যমণ্ডিত নাট্য প্রতিষ্ঠান রঙ্গায়নের ডিরেক্টর পদে স্বঘোষিত আরএসএস সমর্থক নাট্যকার এ সি কারিয়াপ্পাকে বসানো হয়। তিনি একখানি নাটক মঞ্চস্থ করেন, ‘টিপ্পু নিজা কাংগসাগালু'(দ্য রিয়েল ড্রিমস অফ টিপু) তাতে দেখান, টিপুর হত্যাকারী দুই কাল্পনিক ভোক্কালিগ গেরিলা যোদ্ধা উরি গৌড়া ও নানজে গৌড়া, ইংরেজরা নয়। অনেকের মনে পড়তে পারে যে, ১৯৯৯-তে টিপু সুলতানের দ্বি-শতবর্ষপূর্তির প্রাক্কালে প্রখ্যাত নাট্যকার গিরীশ কারনাড একটি নাটক লেখেন, ‘দ্য ড্রিমস অফ টিপু সুলতান’। সেই সঠিক ইতিহাস আশ্রিত নাটকটিকে নস্যাৎ করার অক্ষম চেষ্টা করেছেন কারিয়াপ্পা। ভোটের রাজনীতিতে ফয়দা তুলতেই যে এসব তাঁকে দিয়ে করানো হয়েছে তা বুঝতে অসুবিধে হয় না।
ব্রিটিশ বিরোধী বীর হিসেবে টিপু সুলতান ভারতের সর্বত্র, বিশেষত দক্ষিণ ভারতের এই সমস্ত অঞ্চলের জনমানসে বিরাট স্থান অধিকার করে আছেন। তিনি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে নজির রেখেছিলেন সেগুলি এখন বিজেপির গলার কাঁটা। তাই সে সবের বিরুদ্ধে বিজেপির এই গোয়েবলসীয় প্রচার।
এন গোরা, কলকাতা