সিএমআইআই-এর সাম্প্রতিক সমীক্ষা দেখাচ্ছে, লকডাউন ঘোষণার পর পাঁচ মাসে ভারতে বাঁধা বেতনের ২ কোটি ১০ লাখ চাকরিজীবী কাজ হারিয়েছেন। ২০১৯-২০ সালে দেশে বাঁধা বেতনের চাকরি ছিল ৮ কোটি ৬০ লাখ। লকডাউন ঘোষণার পাঁচ মাসের মধ্যে তা নেমে এসেছে ৬ কোটি ৫০ লাখে।
এই ছাঁটাইয়ের জন্য লকডাউনকে দায়ী করা হলেও বাস্তবে দেশে ছাঁটাইয়ের একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া চলছিল। ২০১৬-১৭ সালে দেশে চাকরি ছিল ৮ কোটি ৬৩ লাখ। ২০১৯-২০ সালে লকডাউনের আগেই তা কমে দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ৬১ লাখ। অর্থাৎ, ৩ বছরে ছাঁটাই হয়েছে ২ লাখ চাকরিজীবী। বছরে প্রায় ৬৭ হাজার। মাসে ছাঁটাই প্রায় সাড়ে ৫ হাজার। এটার জন্য কোন ভাইরাস দায়ী?
এর জন্য দায়ী অবশ্যই পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। শোষক পুঁজিপতিদের সমস্যা হল, এই সত্যকে তারা স্বীকার করতে পারে না। কিন্তু অন্ধ হলে কি প্রলয় বন্ধ থাকে?
ফলে ওরা স্বীকার না করলেও পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে ছাঁটাই চলে। কেন চলে? কারণ, পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে উৎপাদনের উদ্দেশ্য মুনাফা অর্জন। বা সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জন। সর্বোচ্চ মুনাফার অন্যতম শর্ত উৎপাদন ব্যয় কমানো। উৎপাদন ব্যয় কমানোর অনেক শর্তের মধ্যে অন্যতম হল কম শ্রমিক দিয়ে বেশি সময় কাজ করানো। ফলে, শ্রমিক ছাঁটাই পুজিবাদের অন্তর্নিহিত ধর্ম। এই অর্থনীতি বহাল থাকলে কোনও রাম রাজত্বই শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ করতে পারে না।
এই অর্থনীতি বহাল থাকলে কোনও ত্রাণ প্যাকেজ মন্দার গহ্বর থেকে পুঁজিবাদকে বাঁচাতে পারে না। কারণ, মন্দার মূলে রয়েছে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ক্রয়ক্ষমতার হ্রাস। সিএমআইআই-এর যে সমীক্ষা নিয়ে এই আলোচনার সূচনা, সেই তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ১৩০ কোটির বেশি জনগণের দেশ ভারতে মাত্র সাড়ে ছ’কোটি মানুষের নিশ্চিত কাজ ও বেতন আছে। চাকরিজীবী পিছু চারজন করে লোক ধরলে মোট ২৬ কোটি মানুষের নিশ্চিত খাওয়া পরার ব্যবস্থা আছে। অর্থাৎ, ১০৪ কোটিরও বেশি মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা টলমল। এই কারণে বলা হয় এই অর্থনীতি মরণাপন্ন। এই অর্থনীতিকে ত্রাণ প্যাকেজের ঠেকনা দিয়ে কদ্দিন খাড়া করে রাখা যাবে? বামফ্রন্টের বিকল্প উন্নততর বামফ্রন্টের মতো পুঁজিপতি ও তাদের সুবিধাভোগীরা বলছে, পুঁজিবাদের বিকল্প মানবিক পুঁজিবাদ। কিন্তু যে পুঁজিবাদ শোষণমূলক সে কি মানবিক হতে পারে? বিশ্বের কোথাওই পুঁজিবাদ মানবিক নয়, দানবিক। একে টিকিয়ে রাখতে যারা প্রাণপাত করছেন, ছাঁটাইয়ের খাঁড়া তাদের উপর নেমে আসছে। বাঁচার পথ কী? বাঁচতে গেলে লড়তে হবে, লড়াই করে বাঁচতে হবে। কিন্তু, কার বিরুদ্ধে লড়াই? শোষণ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে। কী দাবিতে লড়াই? শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার দাবিতে। এ ছাড়া বাঁচার অন্য কোনও পথ নেই। অন্য যে সব পথ পুঁজিবাদীরা দেখায় তা প্রবঞ্চনার।