দীপাবলি হোক শুধুই আলোর। বন্ধ হোক শব্দ দানবের উচ্ছৃখল তাণ্ডব। শুধু হাইকোর্টের রায়কে মান্যতা দেওয়া অথবা করোনা প্রতিরোধের জন্যই নয়, এ হল মানব সমাজের অস্তিত্ব আরও কিছুদিন টিকিয়ে রাখার জন্যই। এক শ্রেণির মানুষের সংকীর্ণ স্বার্থবাহী ভয়ঙ্কর অত্যাচার পৃথিবী হয়তো বেশিদিন সহ্য করবে না। আমরা সেই ভয়াবহ বিপর্যয়ের ইঙ্গিত পেতে শুরু করেছি। মেরুপ্রদেশের বরফ গলে যাওয়া, গ্রিনহাউস গ্যাসের অতিরিক্ত নির্গমন থেকে শুরু করে বিশ্ব উষiরায়নের ভয়াবহ পরিণতির দোরগোড়ায় আমরা ইতিমধ্যে উপস্থিত হয়েছি।
পুঁজির লক্ষ্য যেহেতু সর্বোচ্চ মুনাফা, তাই পুঁজিবাদী রাষ্ট্র পরিবেশ দূষণ নিয়ে, তার ফলে প্রাণীদের স্বাস্থ্যসমস্যা নিয়ে, এমনকি জীবজগতের অস্তিত্ব নিয়েও ভাবে না। মানুষের মৃত্যু তাদের ব্যথিত করে না, পৃথিবীর অকাল ধ্বংস তাদের আশঙ্কিত করে না। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার এক শতাংশ পুঁজিপতিদের স্বার্থ পূরণের জন্য বাকি নিরানব্বই শতাংশ মানুষের জীবনকে পুঁজিবাদ চরম সর্বনাশের দিকে ঠেলে দিয়েছে। তাই আমি-আপনি যত সচেতনই হই, যত পরিবেশ বান্ধবই হই, পৃথিবীর এই ধ্বংস হয়ত আমরা আটকাতে পারব না। একমাত্র পুঁজিবাদের বিলুপ্তিই পারে এ থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করতে। তাই সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র চাই, যেখানে উৎপাদন পরিচালিত হয় মানুষের প্রয়োজনের দিকে লক্ষ্য রেখে। মানুষের সামগ্রিক কল্যাণই সেখানে রাষ্ট্রের একমাত্র উদ্দেশ্য। বিজ্ঞানের আবিষ্কার সেখানে সত্যিই মানবকল্যাণে নিয়োজিত। পুঁজিবাদ যেখানে বিজ্ঞানকে ব্যবহার করেছে অতিরিক্ত মুনাফার জন্য, কর্মহীন করেছে লক্ষ লক্ষ শ্রমিককে, সমাজতন্তে্র সেই বিজ্ঞানই হয়ে উঠেছে আধুনিক জীবনে উত্তরণের সোপান। কারণ সমাজতন্তে্র বিজ্ঞানের অভিমুখ থাকে মানবকল্যাণের দিকে।
কিন্তু এই পরিস্থিতির মধ্যেও আমরা পরিবেশের সুস্থতা রক্ষায় যদি আরও একটু সচেতন হই, বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য সম্পর্কে আরও একটু ওয়াকিবহাল হই, তবে এ পৃথিবী প্রাণ ভরে আরও একটু বেশি শ্বাস নিতে পারে। তাই আবর্জনাগুলো না পুড়িয়ে নির্দিষ্ট গর্তে রেখে তা থেকে জৈব সার পেতে পারি। গ্যারেজগুলোতে টায়ার, প্লাস্টিক পোড়ানো বন্ধ করা যায়। জলের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার আমরা বন্ধ করতে পারি। এসব নিয়ে সচেতনতা প্রচারের উদ্যোগ নিতে পারি। তবেই হয়ত কিছুটা হলেও পরিবেশের ধ্বংস বিলম্বিত করতে পারব।
সূর্যকান্ত চক্রবর্তী
তমলুক, পূর্বমেদিনীপুর