সুপ্রিম কোর্টের চারজন প্রবীণ বিচারপতি একযোগে সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধান বিচারপতি এবং বিচারবিভাগীয় প্রশাসনের চূড়ান্ত অনিয়মের বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন এমন ঘটনা সচরাচর ঘটে না৷ কিন্তু যখন ঘটে, বুঝতে হয় বহু দিনের ধামাচাপা পড়া ক্ষোভ অগ্ন্যুৎপাতের মতো বিস্ফোরক শক্তি অর্জন করেছে৷ ১২ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের চার প্রবীণ বিচারপতি জে চেলমেশ্বর, রঞ্জন গগৈ, মদন লোকুর এবং কুরিয়েন জোসেফ তড়িঘড়ি ডাকা এক সাংবাদিক সম্মেলনে যখন বললেন, গণতন্ত্রের স্বার্থে বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা রক্ষা অত্যন্ত জরুরি, তাঁরা মুখ খুলতে বাধ্য হচ্ছেন, না হলে দেশের মানুষ বলবে সকলেই তাদের বিবেক বিক্রি করে দিয়েছে– বোঝা গেল সংকট কত গভীর বিচারবিভাগের স্বাধীনতার যে মিষ্টি বুলি সরকার শোনায় তা যে কত অসার, তা স্পষ্ট হয়ে গেল বিচারপতিদের ক্ষোভের অভিঘাতে৷
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কোনও রাজনৈতিক দল যেন এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করে৷ শুনলে মনে হয় কত গণতান্ত্রিক তিনি অথচ বাস্তব হল ২০০২ সালে তাঁর মুখ্যমন্ত্রীত্বে গুজরাটে সংখ্যালঘু নিধন যজ্ঞের বিচারে পদে পদে হস্তক্ষেপ হয়েছে৷ এমনকী নারোদা পাটিয়া হত্যাকাণ্ডের মামলায় উচ্চ আদালতের ছ’জন বিচারক প্রাণনাশের হুমকি পেয়ে বিচার থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন৷ গত বছর সেপ্টেম্বরে সরকারের অপছন্দের হওয়ায় বিচারপতি জয়ন্ত প্যাটেলকে কর্ণাটক হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি করা হয়নি৷ বর্তমান প্রধান বিচারপতিকেও গত নভেম্বর মাসেই সংবিধান দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী সরকারের প্রতি ‘বিশ্বস্ত’ থাকার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন৷ এগুলি কোন গণতন্ত্রের নিদর্শন? বহু মানুষেরই অভিজ্ঞতা আছে কীভাবে সরকারি এবং প্রশাসনিক ক্ষমতা ন্যায়বিচারের রাশ টেনে ধরে৷ অর্থ, প্রভাব–প্রতিপত্তির কাছে বিচারের বাণী যে মাথা খুঁড়ে মরে তা জানা থাকলেও সাধারণ মানুষ তা মুখ ফুটে বলতে পারেন না৷ সংবাদমাধ্যমে তার খবর বেরোয় না৷ শাসক দল কলকাঠি নাড়ায় নিরপরাধ সজ্জন মানুষ মিথ্যা খুনের মামলায় যাবজ্জীবন জেলে পচছেন, আর শাসক দলের নেতা অসংখ্য খুনের সাথে যুক্ত থেকেও নিশ্চিন্তে ঘুরছেন–এমন ঘটনা কম নয়৷
ক্ষুব্ধ চার বিচারপতি বলেছেন, প্রধান বিচারপতি তাঁর পছন্দের বিচারপতিদের বেঞ্চের কাছেই জাতীয় ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলি পাঠিয়ে দেন৷ এ ক্ষেত্রে পরীক্ষিত রীতি এবং ঐতিহ্য মানা হচ্ছে না৷ ক্ষুব্ধ বিচারপতিদের কথায় স্পষ্ট যে, সরকার অস্বস্তিতে পড়তে পারে এমন মামলাগুলি বিশেষ বিশেষ বিচারপতিদের হাতে রাখা হচ্ছে৷ ক্ষুব্ধ বিচারপতিরা সিবিআই বিশেষ আদালতের বিচারপতি ব্রিজগোপাল হরকিষেণ লোয়ার সন্দেহজনক মৃত্যু সংক্রান্ত জনস্বার্থ আবেদনের বিচার নিয়ে বিশেষভাবে আপত্তি তুলেছেন৷ শাসকদল এবং সরকারের চাপের সামনে বিচারবিভাগের নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে এমন ইঙ্গিতই তাঁদের কথা থেকে বেরিয়ে আসছে৷ তাঁরা এমন কথাও বলেছেন, গুরুতর অনিয়ম হচ্ছে, এমনকী বিচারপতি নিয়োগের জন্য কলেজিয়ামে অনৈতিক কাজ হচ্ছে৷ কলেজিয়ামের একাংশের মধ্যে দেনাপাওনার সম্পর্ক তৈরি হয়েছে৷
বিচারপতি লোয়ার মৃত্যুর সাথে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে৷ ২০০৫ সালের নভেম্বরে গুজরাটে সোহরাবুদ্দিন সেখকে পুলিশ ভুয়ো সংঘর্ষে হত্যা করে৷ তার একবছর পর ২০০৬–এর ডিসেম্বরে সোহরাবুদ্দিনের সহযোগী তুলসিরাম প্রজাপতিকেও একইভাবে হত্যা করা হয়৷ অভিযোগ ওঠে ২০০৩ সালের মার্চ মাসে গুজরাটের তৎকালীন বিজেপি সরকারেরই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হরেন পান্ডিয়াকে হাইকোর্টের সামনে হত্যার জন্য এই দু’জনকে কাজে লাগিয়েছিল রাজ্যের শাসক দলের উচ্চ মহল৷ যাতে ওই দলের বর্তমান নেতৃত্ব নিরঙ্কুশ থাকতে পারে৷ অভিযোগ, হরেন পান্ডিয়া হত্যার প্রমাণ লোপাটের জন্যই এই খুন৷ বিজেপির বর্তমান সভাপতি অমিত শাহ সে সময় ছিলেন গুজরাটের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷ ২০১০ সালে সুপ্রিম কোর্ট সিবিআই তদন্তের আদেশ দেয় এবং মামলাটি গুজরাটের বাইরে স্থানান্তরিত হয়৷ গুজরাট পুলিশের তৎকালীন ডিআইজি ডিজি বানজারা যিনি ‘মোদি মাই গড’ বলে নরেন্দ্র মোদির স্তুতি করতেন, তিনি এই মামলায় কিছুদিন জেল খাটার পর ২০১৩ সালে এক চিঠিতে এই খুনের সাথে উচ্চ মহলের যোগসাজশের কথা বলেন৷ ২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় এসেই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে উপেক্ষা করে সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসারকে রাজ্যের বাইরে বদলি করে দেয়৷ বিচারক জে টি উটপটকেও শুনানির মাঝপথে বদলি করা হয়৷ তাঁর জায়গায় দায়িত্ব নিয়ে বিচারপতি লোয়া বিজেপি সভাপতি অমিত শাহকে মামলা থেকে ছাড় দিতে অস্বীকার করে তাঁকে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন৷ ঠিক তার পরেই ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে নাগপুরে একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে তাঁর মৃত্যু হয়৷ বিচারপতি লোয়ার স্থলাভিষিক্ত পরবর্তী বিচারপতি তাঁর নিয়োগের ২০ দিনের মধ্যে অমিত শাহকে বেকসুর মুক্তি দিয়ে দেন৷ কিছুদিন পর বিচারপতি লোয়ার পরিবার অভিযোগ করে অমিত শাহকে ছাড় দেওয়ার জন্য বম্বে হাইকোর্টের এক বিচারপতির মাধ্যমে লোয়াকে ১০০ কোটি টাকা ঘুষ দিতে চাওয়া হয়েছিল৷ তাঁর মৃত্যু স্বাভাবিক নয়৷
সুপ্রিম কোর্টের চার প্রবীণ বিচারপতি কিছুদিন আগে প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দিয়ে বলেছিলেন বম্বে হাইকোর্টে বিচারপতি লোয়ার মৃত্যু নিয়ে মামলা চলছে৷ তার সাথে সুপ্রিম কোর্টে একই মামলার সমান্তরাল শুনানি হলে মামলায় তার প্রভাব পড়বে৷ মুম্বই আইনজীবী সংগঠনের পক্ষে প্রবীণ আইনজীবী দুষ্মন্ত দাভে, এবং আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংও সুপ্রিম কোর্টকে চিঠি লিখে একই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন৷ প্রধান বিচারপতি এর কোনও উত্তর দেননি৷
২০১৭ সালের অক্টোবরে আর পি লুথরা বনাম ভারত সরকারের মামলায় বিচারপতি আদর্শ কুমার গোয়েল এবং বিচারপতি উদয় উমেশ বলেছিলেন, বিচারপতি নিয়োগের জন্য গঠিত কলেজিয়াম কী মাপকাঠিতে বিচার করবে (মেমোরেন্ডাম অফ প্রসিডিওর) এবং কোনও বিচারপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতির মতো অভিযোগ উঠলে ইম্পিচমেন্টের মতো দীর্ঘ প্রক্রিয়া ছাড়াও আর কীভাবে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব তার পদ্ধতি ঠিক করতে দেরি করা চলবে না৷ তাঁরা অ্যাটর্নি জেনারেলকে আদালতে এসে সরকারের বক্তব্য জানাতে বলেছিলেন৷ কিন্তু এই বিচার চলার মধ্যেই প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র তাঁর সাথে অন্য আরও দুই বিচারপতিকে নিয়ে একটি বেঞ্চ গঠন করে দুই বিচারপতির বক্তব্য খারিজ করে দেন৷ প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ বলে, এগুলি আদালতের বিচার্যই নয়৷ কিন্তু কেন নয় তার ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি৷ প্রবীণ চার বিচারপতি দু’মাস আগে প্রধান বিচারপতিকে বলেছিলেন, এত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিচারের মাঝপথে এই হস্তক্ষেপ একেবারেই ঠিক নয়৷ জনস্বার্থের দিক থেকেও বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ দীর্ঘদিন ধরেই কেন্দ্রীয় সরকার বিচারপতি নিয়োগের পুরো প্রক্রিয়াটিতেই হস্তক্ষেপ করে নিজেদের কুক্ষিগত করতে চাইছে৷ এই পরিস্থিতিতে প্রধান বিচারপতির সিদ্ধান্ত বাস্তবে বিচারবিভাগের উপর সরকারের অগণতান্ত্রিক স্বৈরাচারী হস্তক্ষেপেরই সুবিধা করে দেবে বলেই অনেকের আশঙ্কা৷
ক্ষুব্ধ চার বিচারপতির বক্তব্যের পর প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে পুরনো কিছু অভিযোগ সামনে এসেছে৷ তিনি আইনজীবী থাকাকালীন তথ্যে কারচুপি করে ভূমিহীনদের জন্য বরাদ্দ জমি সরকারের থেকে ব্যক্তিগতভাবে নিয়েছিলেন, পরে কটকের জেলাশাসক আবেদনপত্রে এই কারচুপি ধরে ফেলে জমি বন্টন বাতিল করেন৷ সিবিআই তদন্তেও বিষয়টি উঠে আসে৷ অরুণাচলের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কালিখো পুলের সুইসাইড নোটেও তাঁর নাম ছিল, যদিও এ নিয়ে কোনও তদন্ত হয়নি৷ ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে লখনউয়ের প্রসাদ ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্স সহ ৪৬টি প্রতিষ্ঠানের অনৈতিক কাজের বিরুদ্ধে মামলায় ওড়িশা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি আইএম কুদ্দুসি ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন৷ সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার শুনানির সময় অন্য বিচারপতিদের কাছ থেকে এই মামলা মাঝপথে প্রধান বিচারপতির গঠিত বেঞ্চে নিয়ে যাওয়া হয়৷ খ্যাতনামা আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ বলেন, প্রধান বিচারপতি ওড়িশা হাইকোর্টে কর্মরত থাকার সময় এই মামলার শুনানিতে যুক্ত ছিলেন, তাই সুপ্রিম কোর্টে তাঁর এই মামলা শোনা উচিত নয়৷ পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয় যে, আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণকে নিরাপত্তা রক্ষী দিয়ে আদালত থেকে বার করে দেওয়া হয়৷ সম্প্রতি সিবিআইয়ের হাতে আসা একটি ফোনের রেকর্ড ফাঁস হতে জানা যাচ্ছে মেডিকেল কলেজের মামলা ‘ম্যানেজ’ করার জন্য এলাহাবাদ, ওড়িশা এবং দিল্লির কোন কোন ‘মন্দিরে’ ‘প্রসাদ’ চড়াতে হবে তা নিয়ে কুদ্দুসি এবং এক দালালের সাথে কথা বলেছেন অভিযুক্ত মেডিকেল কলেজের কর্তারা৷ স্বাভাবিকভাবেই দেশের মানুষ উদ্বিগ্ন৷ বিচারালয়ের শীর্ষ স্তর নিয়ে এমন অভিযোগ উঠলে মানুষ যাবে কোথায়? ফলে জনস্বার্থে এই দুর্নীতির অভিযোগের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা অবিলম্বে প্রয়োজন৷
পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের অন্যতম স্তম্ভ হিসাবে বিচার বিভাগ এমনিতেই রাষ্ট্রের সেবক হিসাবে কাজ করে৷ পুঁজিবাদ যতদিন বিকাশশীল ছিল, একচেটিয়া স্তরে পৌঁছায়নি, ততদিন বিচার ব্যবস্থারও কিছুটা নিরপেক্ষতা ছিল৷ এমনকী কিছুদিন আগেও যতদিন বিশ্বে সমাজতান্ত্রিক শিবির ছিল সেখানকার জনমুখী, কল্যাণমুখী রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতি মানুষের প্রবল আকর্ষণ দেখে আতঙ্কিত পুঁজিবাদী শাসকরাও কিছুটা জনকল্যাণের কথা বলত৷ বিচারালয়ের রায়েও তার কিছু কিছু প্রতিফলন ঘটত৷ সমাজতান্ত্রিক দেশের বিচারব্যবস্থার প্রতি আকৃষ্ট কিছু মানবতাবাদী বিচারকও ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় শ্রমিক– কৃষকদের অধিকারের প্রতি মর্যাদা দিতেন৷ অতীতে বিচারপতি ভি আর কৃষ্ণ আয়ারের মতো দেশের খেটে খাওয়া মানুষের প্রতি দরদি বিচারপতিরা যতটুকু শ্রমিক–কৃষক–সাধারণ মানুষের ন্যায্য গণতান্ত্রিক অধিকারকে আইনি রক্ষাকবচ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, ধীরে ধীরে সেটুকু সমবেদনার বাষ্প বিচারালয় থেকে কবেই উবে গেছে৷ পুঁজিবাদের সংকট যত বেড়েছে, রাষ্ট্র তত বেশি করে গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করছে৷ আদালতেও তার প্রতিফলন ঘটছে৷ বিশ্বায়ন–উদারিকরণের যুগে বিচার বিভাগও বেসরকারিকরণ, শিক্ষায় ম্যানেজমেন্ট কোটা, ক্যাপিটেশন ফি ইত্যাদির পক্ষেই অবস্থান নিয়ে চলছে৷ এখন প্রতিবাদ, ধর্মঘট সহ অত্যাচারের বিরুদ্ধে মানুষের যে কোনও রকম রুখে দাঁড়ানোর চেষ্টার উপরই আদালত খড়গহস্ত৷ বিচারবিভাগের আপাত স্বাধীনতা একই সাথে ক্রমাগত খর্ব হচ্ছে রাজনৈতিক–প্রশাসন দাপটের সামনে৷ সারা দুনিয়াতেই তাই চলছে৷ যে কারণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অন্যায় অভিবাসন নীতির প্রতি সেদেশের তথাকথিত স্বাধীন আদালতও প্রথমে বিরোধিতা করলেও শেষপর্যন্ত আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছে৷
ভারতে বিচার ব্যবস্থায় প্রশাসনিক–রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ দীর্ঘদিন ধরেই সাধারণ ঘটনায় পর্যবসিত হয়েছে৷ কংগ্রেস নেত্রী ইন্দিরা গান্ধীর জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে একমাত্র একজন বিচারপতি প্রকাশ্যে মুখ খুলেছিলেন৷ সেই বিচারপতি এইচ আর খান্না সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণতম বিচারপতি হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে প্রধান বিচারপতি করা হয়নি৷ তিনি প্রতিবাদে পদত্যাগ করেন৷ ইন্দিরা গান্ধী চালু করেছিলেন ‘কমিটেড জুডিশিয়ারি’ শব্দবন্ধটি৷ অর্থাৎ বিচারবিভাগের টিকি বাঁধা থাকবে দিল্লির সাউথ ব্লকের কর্তাদের হাতে৷ সব সরকারই সেই পথেই বিচার বিভাগকে বেঁধে রাখতে চেয়েছে৷
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের বর্তমান ক্ষোভ হয়ত একদিন চাপা পড়ে যাবে, নানা ঘটনা প্রবাহের মধ্যে তা সংবাদমাধ্যমের খবরেও পিছনের সারিতে চলে যাবে৷ কিন্তু দেশের মানুষের সামনে বুর্জোয়া বিচারালয়ের স্বরূপটি যেভাবে বেআব্রু হয়ে গেল তা সহজে ঢাকার নয়৷ মানুষকে বুঝতে হবে এই শোষণমূলক রাষ্ট্রের বিচারালয় থেকে শুরু করে সংসদীয় গণতন্ত্র পর্যন্ত যে কোনও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সুরাহা পাওয়ার মোহে ভুলে বসে থাকলে যতটুকু গণতান্ত্রিক অধিকার টিকে আছে, বেঁচে থাকার দাবি জানানোর যতটুকু পরিসর আছে তাও ক্রমাগত রুদ্ধ হবে৷ ন্যায্য দাবি আদায় করতে হলে, এমনকী ন্যায়বিচার পেতে গেলেও আজ একমাত্র পথ সংগঠিত গণআন্দোলন৷