70 Year 29 Issue 9 March 2018
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার জাতীয় মেডিকেল কমিশন বিল– ২০১৭ পার্লামেন্টে পেশ করেছে৷ দেশ জুড়ে চিকিৎসক সমাজ এবং শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ এই বিল বাতিলের দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন৷ কারণ, তাঁরা মনে করছেন এই বিল মেডিকেল শিক্ষার বৈজ্ঞানিক ভিতকে ভেঙে দেবে৷ মেডিকেল শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে করে তুলবে ব্যয়বহুল ও কর্পোরেট নির্ভর৷ প্রতিবাদের চাপে কেন্দ্রীয় সরকার আপাতত বিলটি পার্লামেন্টারি স্বাস্থ্য বিষয়ক স্থায়ী কমিটিতে বিবেচনার জন্য পাঠিয়েছে৷ অর্থাৎ এই স্থায়ী কমিটির সুপারিশক্রমে যে কোনও সময়ে সামান্য পরিবর্তন বা পরিমার্জন সহ অথবা তা ছাড়াই বিলটি শীঘ্রই আইনে পরিণত হতে পারে৷ বিলটি হুবহু আইনে পরিণত হলে তা মেডিকেল শিক্ষা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, মানুষের স্বাস্থ্যের অধিকার ইত্যাদির উপর কী প্রভাব ফেলবে তা পর্যালোচনা হওয়া দরকার৷
বিলটি যদিও মূলত মেডিকেল শিক্ষা সংক্রান্ত, তবুও তা স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর সরাসরি মারাত্মক প্রভাব ফেলবে৷ কারণ ডাক্তার যেখানে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কেন্দ্র বিন্দুতে রয়েছেন– সেখানে শিক্ষার পদ্ধতি, শিক্ষার উদ্দেশ্য ইত্যাদি পাল্টালে যে ডাক্তার তৈরি হবে তাঁদের মানসিকতা, চিকিৎসার উদ্দেশ্য, রোগীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিও পাল্টাতে বাধ্য৷ তা ছাড়া মেডিকেল শিক্ষা তো কেবল শুধু একটি কলেজের উপর নির্ভর করে না, তার একটা বড় অংশ দাঁড়িয়ে আছে হাসপাতালের উপর৷ ফলে মেডিকেল শিক্ষার নীতিসমূহ পাল্টালে তার সাথে সম্পর্কযুক্ত হাসপাতালের পরিচালন ব্যবস্থা এবং স্বাস্থ্য পরিষেবার নীতিগুলিও একইরকমভাবে পাল্টাবে৷ ফলে এই বিল শুধু চিকিৎসক সমাজের সাথে সম্পর্কযুক্ত নয়, তার সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে রয়েছে সাধারণ মানুষের স্বার্থ৷ ভবিষ্যতে যাঁরা ডাক্তারি পড়বেন, সেই সব পরিবারের স্বার্থ তো জড়িয়ে রয়েছেই৷
এ যাবৎ আমাদের দেশে মেডিকেল শিক্ষা ব্যবস্থার সমস্ত কিছুই— কোর্স–কারিকুলাম তৈরি থেকে শুরু করে কলেজের মানদণ্ড ঠিক করা, ডাক্তারদের চিকিৎসা সংক্রান্ত বিচার করা ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে আসছে মেডিকেল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া বা এমসিআই৷ এমসিআই একটি স্বশাসিত সংস্থা এবং পার্লামেন্টের আইন বলেই তৈরি৷ যেখানে বেশিরভাগ প্রতিনিধিই নির্বাচিত হয়ে আসেন৷ এই কাউন্সিল–স্বীকৃত ডাক্তাররা শুধু এ দেশে নয়, আমেরিকা, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া সহ বিশ্বের নানা দেশে কৃতিত্বের সাথে পেশাগত পারদর্শিতার প্রমাণ রেখেছে এবং রাখছে৷
নতুন এই কমিশনে নির্বাচনের কোনও জায়গা নেই৷ কমিশনের ২৫ জন সদস্যের মধ্যে ২০ জনই হবেন কেন্দ্রীয় সরকারের মনোনীত৷ কেন্দ্রীয় সরকারের সম্মতিক্রমে এই বডি মেডিকেল শিক্ষা ব্যবস্থার সমস্ত কিছুই নিয়ন্ত্রণ করবে৷ অর্থাৎ একটি স্বশাসিত এবং নির্বাচিত বডির পরিবর্তে সম্পূর্ণরূপে কেন্দ্রীয় সরকার নিয়ন্ত্রিত এবং মনোনীত ব্যুরোক্র্যাটদের দ্বারা পরিচালিত একটি বডির হাতে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে৷ যা চূড়ান্ত অগণতান্ত্রিকই নয়, দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থী৷ এবং যখন যে রাজনৈতিক দল কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতায় থাকবে কমিশনকে সম্পূর্ণভাবে দলীয় স্বার্থে এবং বিশেষ কিছু ব্যবসায়ীর স্বার্থে ব্যবহার করার সমস্ত ক্ষমতাই সেই রাজনৈতিক দলের হাতে থাকবে৷
উল্লেখ্য এমসিআই এর মতো একটি ৮৩ বছরের পুরনো নির্বাচিত সংস্থা, যা বিভিন্ন সময়ে স্বচ্ছ ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কিছু কাজ করলেও বেশ কিছুকাল ধরে এর মাথায় উপবিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা নানা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন৷ শীর্ষ আদালতের তত্ত্বাবধানে পূর্বতন কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউ পি এ সরকার দুর্নীতির দায়ে এমসিআই প্রধানকে চিহ্ণিত করে, কিন্তু বিশেষ কিছু শাস্তির বিধান করেনি৷ আর বর্তমানের বিজেপি সরকার পরোক্ষে ওই এমসিআই প্রধানকে আরও উচ্চাসনে বসতে সাহায্য করে এবং তিনি এখন সারা বিশ্বের চিকিৎসক সংস্থার মাথায় গিয়ে বসেছেন৷ দেশে দুর্নীতি দমনের নানান আইন থাকা সত্ত্বেও কোনও কেন্দ্রীয় সরকারই এমসিআইয়ের কর্তাব্যক্তিদের দুর্নীতি ধরার কিংবা তার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কোনও চেষ্টা না করে কার্যত এই সব দুর্নীতি চলতে সহযোগিতাই করে আসছে৷ আর আজ সাধুপুরুষ সাজতে মোদিজি বলছেন, দুর্নীতিগ্রস্ত এমসিআইকেই ভেঙে দিলাম৷ অর্থাৎ মাথার চিকিৎসায় মাথাটিই কেটে বাদ দেওয়া৷
গত তিন–চার দশক ধরে চিকিৎসা সংক্রান্ত গাফিলতি, অপচিকিৎসা, চিকিৎসা সংক্রান্ত মানুষের বঞ্চনা ইত্যাদির সুরাহা এম সি আই করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং অভিযোগ পেয়েও জনস্বার্থে তার নিরসন করেনি৷ অথচ নয়া আর্থিক নীতির দ্বারা স্বাস্থ্যকে পণ্য করে তোলার ফলে মালিকদের অধিক মুনাফার স্বার্থ চরিতার্থ করতে বহু ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা মেডিকেল এথিক্স অমান্য করে তাদের ক্রীড়নকে পরিণত হয়েছেন৷ ফলে জনমানসে এই সংস্থা সম্পর্কে বিশেষ কোনও শ্রদ্ধার জায়গাতো নেই–ই, উপরন্তু অনেকে এর কার্যকলাপে ক্ষুব্ধ৷ ফলে এমসিআই–এর বডি নির্বাচিত নাকি স্বৈরতান্ত্রিক– সাধারণ মানুষ আজ এ সব নিয়ে হয়ত ভাবেন না৷
কিন্তু স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কী হবে? মানুষ তো এর বাইরে থেকে বাঁচতে পারবে না দুর্নীতি, জালিয়াতি এ দেশের আর কোথাও কি নেই? হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যাঙ্ক জালিয়াতি সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে৷ এ ছাড়া সরকারি কোষাগারের লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা লুণ্ঠিত হয়েছে৷ এ ধরনের নানা দুর্নীতির সাথে পার্লামেন্ট থেকে পঞ্চায়েত পর্যন্ত প্রায় সর্বত্রই অসংখ্য নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি যুক্ত৷ তা প্রমাণও হচ্ছে৷ তাই বলে কি মোদিজি পার্লামেন্টকে ভেঙে দেবেন সুতরাং খোলা মনে ভেবে দেখা দরকার নির্বাচিত গণতান্ত্রিক বডি, যেখানে চিকিৎসা বিজ্ঞানেরই বেশিরভাগ প্রতিনিধি রয়েছেন, সুবিচার বা কম দুর্নীতি মুক্ত কাজকর্মের পরিবেশ তাঁরা যদি দিতে না পারেন, তা কি স্বৈরতান্ত্রিক, মনোনীত এবং বেশিরভাগটাই চিকিৎসাবিদ্যায় অজ্ঞ ব্যুরোক্র্যাটদের দ্বারা দেওয়া সম্ভব হবে? ইতিহাস বলছে – গণতান্ত্রিক পরিমণ্ডলের চেয়ে হাজার গুণ দুর্নীতির জন্ম দেয় স্বৈরতান্ত্রিক প্রশাসন৷ কারণ সেখানে প্রশাসনের কেন্দ্রিকতার সাথে দুর্নীতিও কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়ে৷ বিশেষ জ্ঞানের অভাবে এবং সম্পূর্ণ মুনাফাভিত্তিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অপপ্রয়োগ ঘটানোরও প্রভূত সুযোগ তৈরি হয়৷ নানা রকম অবৈজ্ঞানিক পদক্ষেপ প্রয়োগের ফলে স্বাস্থ্য পরিষেবা সম্পূর্ণরূপে ব্যবসায়ে পরিণত হয়৷ যার ফলে আমাদের দেশের কোটি কোটি সাধারণ মানুষ বিনা চিকিৎসায় এবং অপচিকিৎসার শিকার হতে বাধ্য৷
ঢালাও মেডিকেল কলেজ খোলার সুযোগ করে দেওয়ার মধ্য দিয়ে মেডিকেল শিক্ষার মান এক ধাক্কায় তলানিতে এসে ঠেকবে৷ মেডিকেল কলেজ চালাতে গেলে সারা বিশ্বব্যাপী তার কী কী পরিকাঠমো এবং কোন যোগ্যতাসম্পন্ন কত লোক থাকবে তার একটা মাপকাঠি রয়েছে৷ আমাদের দেশেও সেটা রয়েছে৷ যদিও বিগত কয়েক বছর ধরে এম সি আই এই মানদণ্ডকে অনেকাংশে লঘু করে ফেলেছে৷ কিন্তু এখনও পর্যন্ত নির্ধারিত এই মানদণ্ড কোনও কলেজ না মানলে তার স্বীকৃতি বাতিল হয়ে যায়৷ নতুন নিয়মে এই মানদণ্ডের বালাই আর থাকবে না৷ যতটুকুও থাকবে তা যদি কোনও মেডিকেল কলেজ পূরণে ব্যর্থ হয় তা হলেও তাকে মেডিকেল কলেজ খোলার অনুমতি দেওয়া হবে৷ পরবর্তীকালে ঘাটতিগুলি পূরণে ব্যর্থ হলেও আর তার স্বীকৃতি বাতিল হবে না– কেবলমাত্র মোটা অঙ্কের ফাইন দিলেই হয়ে যাবে৷
এ নিয়ম চালু মেডিকেল কলেজগুলির আসন বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে৷ এই বিলে বলা হয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষই ঠিক করতে পারবে তার কতগুলি আসন থাকবে৷ অর্থাৎ বর্তমানে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলোর যে দশা হয়েছে মেডিকেল কলেজগুলির সেই দশায় পৌঁছানো শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র৷ পরিণতিতে অত্যন্ত নিম্নমানের হাজার হাজার চিকিৎসক তৈরি করা হবে যাঁরা নামমাত্র পারিশ্রমিকে কর্পোরেট হাসপাতালের মামুলি কর্মচারীতে পরিণত হবেন৷ এর সাথে জনগণের পাশ করা চিকিৎসক বা চিকিৎসা পাওয়ার কোনও সম্পর্ক নেই৷
এই বিল বলছে, এখন থেকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ম্যানেজমেন্ট ৬০ শতাংশ আসনের ফি কত হবে তা ঠিক করবে৷ বাকি ৪০ শতাংশের উপরই মাত্র নিয়ন্ত্রণ থাকবে সরকারের৷ আরও বলা হয়েছে, মেডিকেল কলেজগুলির গুণমান কেমন তার জন্য একটি ranking করা হবে৷ আর এই ranking এর দায়িত্ব দেওয়া হবে বেসরকারি রেটিং সংস্থার হাতে৷ অর্থাৎ এখানেও কারসাজির সুযোগ থাকছে৷ টাকা দিয়ে কোনও কলেজ উচ্চ rank আদায় করতে পারলে বাজার অর্থনীতির নিয়ম অনুযায়ী তার কলেজের ডাক্তারি আসন বিকোবে অনেক বেশি টাকায়৷
ন্যাশনাল লাইসেন্সিয়েট পরীক্ষা বা এনএলই এবং নিট পরীক্ষা (ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি কাম এন্ট্রান্স টেস্ট) বৃহৎ কোচিং সেন্টারগুলির মুনাফা বহুগুণ বাড়াবে, এই আইনের বলে এমবিবিএস–এর সাড়ে পাঁচ বছরের পাঠক্রম শেষে আবার একটি পরীক্ষা দিতে হবে এবং এমবিবিএস–এ ভর্তি হওয়ার জন্যও নিট পরীক্ষায় বসতে হবে৷ যাকে বলা হচ্ছে– গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ড পরীক্ষা এবং যে কোনও দেশের নাগরিকই এই পরীক্ষায় বসতে পারবেন৷ সম্পুর্ণ এমসিকিউ নির্ভর এই পরীক্ষা যেখানে প্র্যাক্টিক্যালের কোনও জায়গা নেই৷ কেবলমাত্র এই পরীক্ষাটায় পাশ করলেই শেষমেশ ডাক্তারি করার লাইসেন্স মিলবে বা এমডি অথবা এমএস পড়ার সুযোগ মিলবে৷ যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত চারটি প্রফেশনাল এমবিবিএস পরীক্ষা, থিয়োরি এবং প্র্যাক্টিক্যাল সবই রয়েছে তার কোনও মূল্যই থাকবে না৷ তেমনই, পৃথিবীর যে কোনও ছাত্র কেবলমাত্র এনএলই পরীক্ষায় পাশ করলেই এ দেশে ডাক্তারি করার সুযোগ পাবেন বা উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাবেন৷ সেখানে তার আদৌ কোনও প্র্যাক্টিক্যাল জ্ঞান আছে কি না তা বিবেচিত হবে না৷ আবার এই সব পরীক্ষা যেহেতু কোচিং সেন্টারকেন্দ্রিক, ফলে বড় বড় কোচিং সেন্টারগুলির পোয়াবারো হবে৷ ধনী ঘরের দুলালরা এখানে লক্ষ লক্ষ টাকা ঢালবে আর এমবিবিএস ডিগ্রি কিনে নেবে৷ কোথায় থাকবে চিকিৎসার মান? কোথায় থাকবে চিকিৎসার দায়বদ্ধতা? কোথায় থাকবে মেডিকেল এথিক্স? পাশ করার পরে বিনিয়োগ করার টাকা কতদিনে তুলতে পারবে সেটাই হবে অধিকাংশের একমাত্র লক্ষ্য৷ সরকারি চাকরিতে যোগ দেওয়ার কোনও প্রশ্নই এখানে উঠছে না৷
এই বিল আয়ুষ– (এওয়াইইউ এসএইচ) ডাক্তারদের ৬ মাসের ব্রিজ কোর্স করিয়ে আধুনিক চিকিৎসা করার অধিকার দেবে৷ আমাদের দেশে বাস্তব কারণেই বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতির উৎপত্তি ঘটেছে৷ তার মধ্যে আয়ুর্বেদ, হোমিওপ্যাথি, ইউনানি, যোগা, সিদ্ধা–র মতো চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে৷ মানুষের প্রয়োজনে এইসব পদ্ধতিগুলি তার তার মতো ভূমিকা পালন করে চলেছে৷ যদিও সময়ের সাথে সাথে চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিজ্ঞাননির্ভর পদ্ধতির যে প্রভূত উন্নতি হয়েছে এবং পৃথিবী জুড়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কারগুলি যেভাবে সমৃদ্ধ হয়েছে, তার বাস্তবোচিত প্রয়োগ সমাজ–সভ্যতার পক্ষে অপরিহার্য৷ সেখানে বহু চিকিৎসা ধারা যুগ যুগ ধরে একই জায়গায় রয়ে গিয়েছে৷ প্রত্যেকটি পদ্ধতিরই যথেষ্ট উন্নয়নের সুযোগ ছিল কিন্তু সরকারি দৃষ্টিভঙ্গির অভাবে তা হয়ে ওঠেনি৷ উপযুক্ত বাজেট বরাদ্দ, বৈজ্ঞানিক গবেষণার মধ্য দিয়ে তা করা দরকার ছিল৷ তা না করে বিলের মধ্য দিয়ে সরকার চটজলদি আধুনিক চিকিৎসকের ঘাটতির কথা বলে ৬ মাসের ব্রিজ কোর্স করিয়ে আয়ূষের ডাক্তারদের আধুনিক চিকিৎসা করার অধিকার দেওয়ার কথা বলছে৷ যা শুধু অনৈতিক নয়, অবৈজ্ঞানিক, অন্যান্য পদ্ধতিগুলির পক্ষে অবমাননাকর এবং জনস্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত বিপজ্জনকও বটে৷ তা ছাড়া আধুনিক চিকিৎসকদের ঘাটতির কারণও অন্য, যা সরকার আড়াল করছে৷
সামগ্রিকভাবে জাতীয় মেডিকেল কমিশন বিল আইনে পরিণত হলে জনস্বাস্থ্য ও মেডিকেল শিক্ষাকে তা করে তুলবে অত্যন্ত নিম্নমানের কিন্তু ব্যয়বহুল৷ চিকিৎসা এবং মেডিকেল শিক্ষার অধিকার এ দেশের সাধারণ নাগরিকরা হারাবেন৷ তা কিনতে হবে চড়া দামে৷ কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলি জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রের কর্তব্য হিসাবে স্বাস্থ্যের দায় ঘাড় থেকে নামিয়ে ফেলে স্বাস্থ্য ও মেডিকেল শিক্ষাকে ব্যয়বহুল পণ্যে পরিণত করার লক্ষ্যে একের পর এক প্রথম জাতীয় স্বাস্থ্য নীতি (১৯৮৩), দ্বিতীয় জাতীয় স্বাস্থ্য নীতি (২০০২), তৃতীয় জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি (২০১৭) ইত্যাদি গ্রহণ করেছে৷ মেডিকেল কমিশন বিলও তারই অঙ্গ৷ আজ কংগ্রেস বিরোধী পক্ষে বসে এর বিরুদ্ধে কথা বললেও এই বিলের সূত্রপাত তার সরকারের হাত ধরেই হয়েছে৷ তারই পরিপূরক এই বিল মোদি সরকার পাশ করানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে৷ এর বিরুদ্ধে ডাক্তার, মেডিকেল ছাত্র সহ সর্বস্তরের মানুষের প্রতিবাদ আন্দোলন জরুরি৷ মেডিকেল সার্ভিস সেন্টার, সার্ভিস ডক্টরস ফোরাম ও সহযোগী সংগঠনগুলি ইতিমধ্যেই আন্দোলনে নেমেছে৷
4 comments
Pingback: order original cialis
Pingback: viagra price shoppers drug mart
Pingback: ivermectin pills canada
Pingback: hong kong viagra