কৃষিকাজের অবস্থা ভাল নয়৷ কাজের আশায় মানুষ চলে যায় অন্য রাজ্যে–দেশে৷ যারা যায় না তারা নদী ও খাঁড়ি থেকে মাছ ও কাঁকড়া ধরে জীবিকা নির্বাহ করে৷ সুন্দরবন সংলগ্ন বিশাল এলাকার এক বড় অংশের জীবনধারা এরকমই৷ এমন পরিবারের সংখ্যা বর্তমানে প্রায় দু’লাখ৷ সরকার চাইলে এখানে শিল্প গড়ে উঠতে পারত৷ কিন্তু বছরের পর বছর তা হয়নি৷ মাছ ধরতে গিয়ে প্রায়শই বাঘ–কুমির–জলদস্যু-প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদিতে প্রাণ চলে যায় দরিদ্র মানুষগুলোর৷ তবু দু’মুঠো অন্নের তাগিদে পুরুষানুক্রমে এই বিপদসংকুল কাজ করতেই হয় তাদের৷
এই ভাবে একরকম চলছিল৷ ১৯৮২ সালে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার বন ও বন্যপ্রাণী রক্ষার অজুহাতে সুন্দরবনের দ্বীপ ও জলে মৎস্যজীবীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করার আইন জারি করে৷ ফলে, তারা জলের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়৷ প্রসঙ্গত, ব্রিটিশ আমলেও একবার এহেন আইন জারির ষড়যন্ত্র হয়েছিল৷ সে সময়ে মৎস্যজীবী এবং রানী রাসমণির প্রতিবাদে তা সফল হয়নি৷ কিন্তু স্বাধীন দেশের সরকার বিকল্প কোনও কাজের ব্যবস্থা না করেই মৎস্যজীবীদের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে৷ এই কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত বনদপ্তর মৎস্যজীবীদের বিএলসি পাশ (নৌকার লাইসেন্স), মেরিন লাইসেন্স, রেজিস্ট্রি লগ বই, জাল ইত্যাদি সহ মাছ ধরার সামগ্রী কেড়ে নিতে দৈহিক অত্যাচার করছে, যা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়৷
এই অত্যাচারের প্রতিবাদে ১৪ মার্চ ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনাইটেড ফিশারম্যান অ্যাসোসিয়েশন নদীপথ অবরোধের কর্মসূচি নেয়৷ এতে বাসন্তীর হেড়োভাঙা নদী, গোসাবার দুর্গা দেওয়ানী নদী, কুলতলির চিতুড়ী ও পেটকুলচাঁদ নদী, রায়দীঘির মণি নদী ইত্যাদি জলপথের পরিবহন ব্যাপক প্রভাবিত হয়৷ একের পর এক নৌকার বেষ্টনীতে বড় বড় জাহাজ দীর্ঘক্ষণ আটকা পড়লে দেশ–বিদেশের পর্যটক সহ নানা সংবাদমাধ্যম দরিদ্র মৎস্যজীবীদের আন্দোলনের খবর পায়৷ তাদের পক্ষ থেকেও আসে আন্দোলনের প্রতি সমর্থন৷
অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক, এস ইউ সি আই (সি) রাজ্য কমিটির সদস্য কমরেড জয়কৃষ্ণ হালদার বলেন, ‘‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছি৷ সমস্ত জায়গায় চিঠিপত্র, স্মারকলিপি দিয়েছি৷ কিন্তু কোনও প্রতিকার হচ্ছে না৷ সুন্দরবনে মৎস্যজীবীরা ১০ হাজার যন্ত্রবিহীন এবং ৭ হাজার যন্ত্রচালিত নৌকা দিয়ে মাছ ধরে৷ এর মধ্যে ব্যাঘ্র প্রকল্প ৯৩২টি এবং রিজার্ভ ফরেস্ট ৪৪৪২টি মাত্র বিএলসি দিয়েছে৷ এই বিএলসি–র শতকরা ৪০ ভাগ পেয়েছে মৎস্যজীবী নয় এমন ব্যক্তিরা৷ বন দপ্তর ইতিমধ্যে ১৭০০ অ–মৎস্যজীবীদের বিএলসি বাতিল করেছে৷ কিন্তু এখনও প্রায় ১২ হাজার নৌকার বিএলসি হয়নি৷ এই কারণে তাদের জীবন বিপন্ন, অর্ধাহারে–অনাহারে দিন কাটছে৷ ফলে, বিএলসি দেওয়া নিয়ে চলছে ব্যাপক দুর্নীতি ও দলবাজি৷ আমরা প্রকৃত মৎস্যজীবীদের অবিলম্বে বিএলসি দেওয়ার দাবি করছি৷’’ ‘মৎস্যজীবী–স্বার্থবিরোধী সমস্ত আইন দ্রুত বাতিল করা না হলে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে উঠবে৷