‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই’। মধ্য যুগের বাংলার এক চারণ কবি বড়ূ চণ্ডীদাস সমগ্র বিশ্বকে শুনিয়ে ছিলেন তাঁর এই ঐতিহাসিক মানবিক বাণী। কিন্তু আজকের সমাজে তাঁর এই বাণীর কতটুকু! মানুষের মানবিকতা আজ ভূলুন্ঠিত, কলঙ্কিত। কেন এই কথার অবতারণা করলাম তার একটা গল্প বলি। আমার স্ত্রী মালা দাস এনায়েতনগর সাব সেন্টারের আশা কর্মী। ৭ মার্চ সোমবার সকাল ৯টায় সামান্য একটু টিফিন করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় এ সি এফ কর্মসূচিতে। ভেবেছিল দুপুরে বাড়ি ফিরে ভাত খাবে। কিন্তু বেলা সাড়ে এগারটা নাগাদ সুপারভাইজার দিদির হঠাৎ ফোন–এক্ষুণি পল্লিশ্রী স্কুলে যাও, মাধ্যমিকের সিট পড়েছে, স্বাস্থ্যকর্মী হিসাবে ডিউটিতে বসতে হবে। পড়ি কি মরি করে মাঠ ভেঙে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্কুলে এসে ডিউটিতে যোগ দিল। ১২টা থেকে বেলা ৩টে পর্যন্ত ডিউটি চললো। ডিউটি চলাকালীন প্রত্যেক শিক্ষক-শিক্ষিকা যারা গার্ড দিচ্ছিলেন এমনকি স্কুল সেক্রেটারি পর্যন্ত প্রত্যেকেই টিফিন পেলেন, খেলেন, শুধু বোঝা হয়ে গেল উক্ত স্বাস্থ্যকর্মীটি যে কিনা অন্যের স্বাস্থে্যর দায়িত্ব নিতে বসে আছে। বাড়িতে এসে বলছে আর কাঁদছে যে দুটো পয়সা রোজগারের জন্য কি চাকরি করছি যেখানে ন্যূনতম সম্মানটুকুও নেই। আমরা তো রাস্তার কুকুরের থেকেও অধম। রাস্তার কুকুরকেও মানুষ দুটো বিস্কুট কিনে খেতে দেয়। আমাদের তো সেই সম্মানটুকুও জোটে না।
এই মর্মবেদনা, এই মানসিক যন্ত্রণা একজন স্বাস্থ্যকর্মীর স্বাস্থ্যের পক্ষে কতটা হানিকর সেটা উর্ধ্বতন স্বাস্থ্য কর্তারা নিশ্চয়ই ভাল জানেন। যাঁরা ডিউটিতে বহাল করলেন তাঁদের শুধু ওইটুকুই দায়িত্ব। আশারা বসার জায়গা পেল কি না, তারা টিফিন পেলেন কি না এসব সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে বলার প্রয়োজন নেই? কেন? আশারা স্থায়ী সরকারি কর্মী নয় বলে? তাদের যেভাবে খুশি যেমন খুশি ব্যবহার করা যায়? বিএমওএইচ স্যার তাঁর মতো বলেন। সুপারভাইজার দিদি তাঁর় মতো বলেন। প্রথম এএনএম দিদি তাঁর মতো বলেন, দ্বিতীয় এএনএম তাঁর মতো বলেন। আর ব্যেফ্ দিদি উপরিওয়ালার কথা মতো ফরমায়েস করেন। এরই নাম ‘আশা’ নামক এক অদ্ভুত জীব।
মালা এক জন হার্টের রোগী। গত জুনে একটা স্টেন্ট বসেছে, ডাক্তার বাইপাসের জন্য বলেছেন। কিন্তু এই মুহূর্তে তা সম্ভব হচ্ছে না। এখন মাসে ওষুধ লাগে পাঁচ হাজার টাকা। আর আমি সরকার স্বীকৃত প্রতিবন্ধী। পশ্চিমবঙ্গ আশা কর্মী ইউনিয়নকে ধন্যবাদ, তাঁরা আশাকর্মীদের এই শোষণ, বঞ্চনা, অপমানের বিরুদ্ধে লাগাতার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা নিশ্চয় সফল হবেন এবং আশাকর্মীরা উপযুক্ত মর্যাদা নিয়ে কাজ করতে পারবেন।
জনৈক আশাকর্মীর স্বামী