এস ইউ সি আই (সি) রাজ্য সম্পাদক কমরেড সৌমেন বসু নির্বাচনের দিন রাজ্যে ব্যাপক সন্ত্রাসের প্রতিকার চেয়ে এবং বহু আসনে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়ে ভোট চলাকালীনই নির্বাচন কমিশনারের কাছে পর পর দুটি চিঠি দেন৷ তাতে বলেন,
রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচনে সারা রাজ্যের বহু জেলাতে সকাল থেকেই চলেছে অবাধে ছাপ্পাভোট ও বুথ দখল৷ রাজ্য নির্বাচন কমিশন, রাজ্য পুলিশবাহিনী, প্রশাসন ঠুঁটো জগন্নাথের মত নিশ্চুপ হয়ে থেকেছে৷ ভোটারদের জোর করে বোমা ও বন্দুকের ডগায় সন্ত্রস্ত করে ইতিমধ্যে রাজ্যে ১৭ জনকে হত্যা করে বুথ দখল করা হয়েছে, এজেন্টদেরও বুথ থেকে জোর করে বের করে দেওয়া হয়েছে৷ শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের এই কাজের তীব্র প্রতিবাদ জানান তিনি৷
প্রথম চিঠিতে তিনি বলেন, আমরা দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার কুলতলি থানার বিভিন্ন অঞ্চলে বুথ দখলের ঘটনাগুলি এখানে উল্লেখ করছি৷ অবিলম্বে এই সমস্ত বুথে পুনর্নির্বাচন সহ উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি৷ দক্ষিণ ২৪ পরগণার অন্যত্র এবং উত্তর ২৪ পরগণা, বাঁকুড়া, কোচবিহার, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরে বুথ দখল ও ছাপ্পাভোটও ব্যাপক হয়েছে৷
দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার কুলতলি থানার নিম্নলিখিত দুটি বুথ দখল করতে এসে ক্ষমতাসীন দলের সশস্ত্র ক্রিমিনালদের ছোঁড়া গুলিতে ১ জন মারা গিয়েছেন৷ সেই বুথ দুটি হল:
ক) বুথ নং – ৭/১ বালিরচর এফ পি স্কুল, রুম –১ মেরীগঞ্জ ১ অঞ্চল, খ) বুথ নং – ৭/২ বালিরচর এফ পি স্কুল, রুম –২ মেরীগঞ্জ ১ অঞ্চল
কুলতলি থানার মেরীগঞ্জ–১ গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্য ৬টি বুথ– ক) বুথ নং– ২/১ হোড়খালি এফ পি স্কুল রুম– ১, খ) বুথ নং– ২/২ হোড়খালি এফ পি স্কুল রুম– ২, গ) বুথ নং– ৯, কচিয়ামারা হেমচন্দ্র এইচ এস স্কুল রুম– ১, ঘ) বুথ নং– ১০ কচিয়ামারা হেমচন্দ্র এইচ এস স্কুল রুম– ২, ঙ) বুথ নং– ১২ মেরীগঞ্জ এফ পি স্কুল রুম– ১, চ) বুথ নং – ১৩ মেরীগঞ্জ এফ পি স্কুল রুম– ২, এবং গোপালগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের বুথ নং– ৭৪, খোদাবক্স এফ পি স্কুল৷
পরবর্তী চিঠিতে অন্যান্য জেলার তথ্য দিয়ে তিনি বলেন,
১৷ নদিয়া জেলার নাকাশিপাড়া ব্লকের বিলকুমারী অঞ্চলে ১৭৬, ১৭৭, ১৮৩ নং বুথ এবং ধর্মদা অঞ্চলে ২৩৮, ২৩৯ নং বুথ কালীগঞ্জের পলাশি অঞ্চলের ৮৩ নং বুথ দখল করে ছাপ্পা ভোট হয়েছে৷
২৷ দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার তালতলা এফ পি স্কুল এবং মায়াহাউড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ভোটারদের ভোট দিতে যেতে দেওয়াই হয়নি৷ মহিষগোট ও খৈয়ামারা, ময়দাতে ভোটারদের মেরে বের করে দেওয়া হয়েছে৷ জাঙ্গালিয়ার চক পাঁচঘড়া এফ পি স্কুলের সামনে বোমা মারা হয়েছে৷ তেলিপুকুর ঠাকুরের চক এফ পি স্কুলে তৃণমূল বাহিনী ব্যালট বাক্স পুকুরে ফেলে দেয়৷ লালপুর অঞ্চলে রাণাঘাট এফ পি স্কুল রুম নং – ১ ও ২, রাণাঘাট এইচ এস স্কুল রুম নং ১, ২, প্রগতি সংঘ এফ পি স্কুল রুম নং ১, ২, মথুরাপুর ১ জিপি ৩০ – সমস্ত বুথ দখল করেছে তৃণমূল সশস্ত্র বাহিনী৷
৩৷ মুর্শিদাবাদ জেলায় বহরমপুর, ভগবানগোলা–১, নওদা ব্লক এবং বেলডাঙা ব্লকের প্রায় সমস্ত বুথ তৃণমূল সশস্ত্র বাহিনী দখল করে অবাধে ছাপ্পাভোট চালিয়েছে৷
৪৷ পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় হলদিয়া, সূতাহাটা, নন্দীগ্রাম, মেছাদার শান্তিপুর ৯, ১১, ১২ নং বুথ, মাতঙ্গিনী ব্লকের ৩৮/১, ৩৮/২ নং বুথ, কাঁথি উত্তরের ২১০/১২ নং বুথ পারুলিয়া অঞ্চলে২১৩/১৪৩ নং বুথ দখল করে ছাপ্পা ভোট চলেছে৷
৫৷ পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলায় প্রায় সমস্ত বুথেই শাসকদলের লোকদের দেখিয়ে ভোট দিতে বাধ্য করা হয়েছে৷
৬৷ বাঁকুড়া জেলার ওন্দা, ইন্দপুর, বড়জোড়া ব্লকের অধিকাংশ বুথই দখল ও ছাপ্পা ভোট চলছে৷
৭৷ কোচবিহার জেলার সর্বত্রই তৃণমূল বাহিনী ব্যাপক সন্ত্রাস চালিয়ে বুথ দখল ও ছাপ্পা ভোট চালিয়েছে৷ তুফানগঞ্জের চিলাখানা বুথে এসইউসিআই (সি) প্রার্থী অশ্বিনীকুমার বর্মনকে তারা মারধোর করে৷ দেওচড়াই গ্রাম পঞ্চায়েতে এসইউসিআই (সি) প্রার্থীকেই ঢুকতে বাধা দেয়৷ হলদিবাড়িতে বুথের সামনে ব্যাপক সন্ত্রাস চালায়৷
৮৷ জলপাইগুড়ি জেলার রাজগঞ্জ ব্লকে সুবানি অঞ্চলে বুথ নং ১৮/১৩৮, ফুলবাড়ি–২ অঞ্চলে বুথ নং ১৭/২৮০, ২৮১, ২৮২, ২৮৩, ২৮৪ নং বুথে সকাল থেকে প্রশাসনের উপস্থিতিতেই ব্যাপক সন্ত্রাস চলেছে৷
৯৷ উত্তর ২৪ পরগণার বসিরহাট–১ এবং স্বরূপনগরের গাছা–আখরপুর, ইটিন্ডা–পানিতর, সুখচূড়া–বাগুন্ডি, নিমদারিয়া–কোদালিয়া, পিফায় প্রায় সমস্ত বুথ দখল হয়ে যায়৷ জেলা পরিষদের ৪৮ এবং ৪৯ নং আসনে প্রায় সব বুথ, পানিতর গ্রাম পঞ্চায়েত ৯ নং বুথে আমাদের প্রার্থী এবং এজেন্টকে বের করে অবাধে ছাপ্পা ভোট দেওয়া হয়৷ উপরোক্ত বুথগুলিতে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানান তিনি৷
(৭০ বর্ষ ৩৯ সংখ্যা ১৮ মে, ২০১৮)