বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘হু’-কে গবেষণা সংক্রান্ত আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া বন্ধ করার হুমকি দিচ্ছিলেন ট্রাম্প বেশ কিছুদিন ধরে। এবার তা কার্যত বন্ধই করে দিলেন। আমেরিকার প্রেসিডেন্টের অভিযোগ, বিশ্বব্যাপী করোনার সংক্রমণ নিয়ে বহু তথ্যই নাকি সামনে আনছে না বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এভাবে চীনকে নাকি আড়াল করছে তারা।
আসলে চীনকে টেনে এনে নিজের বেহাল দশাকে ঢাকতে চাইছেন ট্রাম্প।
গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহান প্রদেশে প্রথম ধরা পড়ে করোনা সংক্রমণ। এই মুহূর্তে সারা বিশ্বে প্রায় ২০ লক্ষের কাছাকাছি মানুষ ওই রোগে আক্রান্ত এবং এক লক্ষেরও বেশি জন মারা গেছেন সংক্রমিত হয়ে।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বহু দেশেই লকডাউন চলছে, যার জেরে বিশ্ব অর্থনীতি একেবারে মুখ থুবড়ে পড়েছে। আমেরিকার অর্থনীতিতে বহু দিন ধরেই মন্দা চলছে। করোনার আবহে সেদেশের আকাশে নতুন করে অর্থনৈতিক মন্দার মেঘ ঘনিয়েছে। তাই হু-কে অর্থ সহায়তা আর দিতে চাইছেন না ট্রাম্প।
খনিজ তেলে দখল কায়েম করতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশে দেশে হামলা চালিয়েছে আমেরিকা। ইরাকের মতো দেশের সার্বভৌমত্ব নষ্ট করেছে। এই মুহূর্তে বিশ্ববাজারে তেলের দাম নিম্নগামী। ফলে প্রতিদিন ক্ষতির মুখে যুঝছে আমেরিকা।
ধসে গেছে শেয়ার বাজার। দ্য ডাও জোন্স সূচক প্রায় ২০০০ পয়েন্ট নেমেছে সম্প্রতি। গত কয়েক বছরের হিসাব বলছে এটিই নাকি সবচেয়ে বড় পতন। এ বছর জানুয়ারির পর আমেরিকার রপ্তানি কমেছে প্রায় ০. ৯ বিলিয়ন ডলার। শুধু চীনেই রপ্তানি কমেছে ১৮.৭ শতাংশ ও জাপানে ১৯.১ শতাংশ। কৃষিতে আমেরিকার বিপর্যয় ভয়ঙ্কর। চীন আমেরিকা থেকে বিশাল পরিমাণ সোয়াবিন ও ভুট্টা আমদানি করে। সেই ব্যবসাতেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমদানি বন্ধ থাকায় মার্কিন কোম্পানিগুলো চীন থেকে কাঁচামাল আমদানি করতে পারছে না। বহু মার্কিন কোম্পানির কাজ চীনে বন্ধ থাকায় ওই কোম্পানিগুলো রুগ্ন হতে চলেছে। ধুঁকছে আমেরিকার প্রধান গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থা জেনারেল মোটর্স।
২০১৭ সালের হিসেব অনুযায়ী ৯০ লাখ মার্কিন মানুষ ১৬০টির বেশি দেশে পরিযায়ী হিসেবে বসবাস করছেন। বর্তমান বেড়ে চলা বেকার সমস্যায় প্রতি বছরই নাগরিকদের আমেরিকা ছাড়ার হিড়িক বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে বিদেশিদের আমেরিকার মাটিতে চাকরির সুযোগও কমছে।
এই পরিস্থিতে আমেরিকার সামনে একমাত্র অবলম্বন অস্ত্র কারবার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই ভারত পাকিস্তানের মতো পরস্পর বিরোধী দেশগুলোর মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতির আম্পায়রিং করে। সারা বিশ্বে এই কাজই করে থাকে দেশটা। তার পর পরস্পরবিরোধী দেশগুলোকে অস্ত্র ও যুদ্ধবিমান বেচে মুনাফা করে।
এদিকে করোনা যখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বিশ্বে, তখন গত ফেব্রুয়ারির শেষে ট্রাম্পসাহেবের সদলবলে ভারতে আগমন। এসে ঘোষণা করলেন ভারতকে সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করবেন। আসলে সাহায্যের নামে ভারতকে বিপুল দামের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম বেচবেন।
কিন্তু এভাবে কতদিন? বিশ্বব্যাপী পড়ন্ত জমিদারির দেউড়ির বাতিগুলো এক এক করে নিভে চলেছে। এ অবস্থায় দান-খয়রাত না কমিয়ে উপায় নেই।
হু-এর বিরুদ্ধে মার্কিন অভিযোগের পিছনে যে বেহাল অর্থনীতি তা বুঝতে অসুবিধা হয় না।
অনুপ ভট্টাচার্য
কলকাতা