হাঁসখালিতে নারী নির্যাতনের ঘটনা ও মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের নিন্দায় সোচ্চার হলেন এ রাজ্যের বিশিষ্টজনেরা। নারী নিগ্রহ বিরোধী নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা হাঁসখালি সহ ঘটে চলা নারী নির্যাতনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এক বিবৃতিতে তাঁরা বলেছেন, যেভাবে পরপর ধর্ষণ, গণধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা ঘটছে, বিশেষত নাবালিকারা বীভৎস অত্যাচার ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন তা আমাদের আতঙ্কিত করছে, বিবেককে দংশন করছে। যে প্রশ্নগুলি মনকে পীড়িত করছে তা হল, শাসকের রাজনীতি কি কেবল দুর্বৃত্তদের আশ্রয়স্থল? এ রাজ্যে আইনের শাসন, নারীর নিরাপত্তার অধিকার, আহতের চিকিৎসার অধিকার কি অবলুপ্ত হল? আরও বেশি পীড়িত করছে রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান হিসাবে মুখ্যমন্ত্রীর ঘটনা-পরবর্তী প্রতিক্রিয়া, নাবালিকা ধর্ষিতার অপমৃত্যুকে ‘ছোট ঘটনা’ হিসাবে বর্ণনা, ধর্ষিতার ‘চরিত্র দোষ’ অন্বেষণ প্রভৃতির মাধ্যমে এ রাজ্যকে তিনি কোন পথে চালিত করছেন? হাঁসখালিতে নাবালিকার ধর্ষণ, চিকিৎসার সুযোগ না পেয়ে যন্ত্রণাময় মৃত্যু এবং প্রমাণ লোপের উদ্দেশ্যে তার বাবাকে প্রাণের ভয় দেখিয়ে জোর করে শবদেহ দাহ করার ঘটনা, থানায় অভিযোগ করতে না দেওয়া–এ কি আমাদের পশ্চিমবঙ্গ? হাথরসের যে ঘটনায় সারা দেশ শিউরে উঠেছিল, এ যেন তারই পুনরাবৃত্তি! সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়ায় আমরা বাকরুদ্ধ।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন অপর্ণা সেন (বিশিষ্ট চিত্র পরিচালক), ডাঃ বিনায়ক সেন (বিশিষ্ট সমাজকর্মী), বিভাস চক্রবর্তী (নাট্যব্যক্তিত্ব), কৌশিক সেন (নাট্যব্যক্তিত্ব), মীরাতুন নাহার (সমাজকর্মী), পার্থসারথি সেনগুপ্ত (আইনজীবী), ডাঃ সুশ্রুত বন্দ্যোপাধ্যায়, শতরূপা সান্যাল (চিত্র পরিচালক), অধ্যাপক পবিত্রকুমার গুপ্ত, দিলীপ চক্রবর্তী, কুন্তলা ঘোষ দস্তিদার (ক্রীড়াবিদ), ডাঃ তরুণ মণ্ডল (প্রাক্তন সাংসদ), অধ্যাপক তরুণকান্তি নস্কর (প্রাক্তন বিধায়ক) প্রমুখ।
কমিটির দাবি, হাঁসখালির ঘটনার তদন্তে রাজ্য পুলিশ সিবিআইকে যথাযথ সাহায্য করুক এবং অন্যান্য ঘটনাগুলির নিরপেক্ষ ও দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করুক। কামদুনি, পার্ক স্ট্রিট থেকে কুশমণ্ডি– কোথাও দোষীদের চূড়ান্ত শাস্তি হয়নি। এখানে যেন তার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। নারীর নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে রাজ্য সরকার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করুক। আমরা চাই নারী নিগ্রহহীন বাংলা।