নেপালে নতুন যে স্কুলশিক্ষা বিলটি এনেছে সরকার, তা সম্পূর্ণ শিক্ষাস্বার্থবিরোধী। এই বিলের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন হাজার হাজার শিক্ষক। নতুন বিলে গোটা শিক্ষাক্ষেত্রটিই অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন শিক্ষকরা। এই বিল এমনকি শিক্ষকদের ইউনিয়ন করার অধিকার, চাকরির নিরাপত্তা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বশাসনের অধিকারও কেড়ে নেবে। ছাত্রদের স্বার্থও এই বিলে বিপন্ন হবে। প্রতিবাদে স্কুলে ধর্মঘট করে সরকারের এই শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন শিক্ষকরা।
১৩ সেপ্টেম্বর নেপাল সরকার পার্লামেন্টে এই বিল নিয়ে এলে শিক্ষকরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। দেশের ৩৪ হাজার স্কুলের শিক্ষকরা কাজের নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করার দাবিতে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হন। অস্থায়ী শিক্ষকদের স্থায়ীকরণ, পদ বাড়ানো, পদোন্নতি, শিশুশিক্ষার স্তরে শিক্ষকসংখ্যা আরও বাড়ানো, অধ্যক্ষ নিয়োগ, পেনশন সমস্যার সমাধান, বদলি ও তাঁদের কাজের মূল্যায়ন নিয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে ২০ সেপ্টেম্বর রাজধানী কাঠমান্ডুতে পার্লামেন্টের সামনের রাস্তা অবরোধ করেন ১ লাখেরও বেশি শিক্ষক। বেগতিক বুঝে শয়ে শয়ে পুলিশ কাঁটাতার এবং লোহার ব্যারিকেড দিয়ে রাজপথে শিক্ষকদের আটকে দেন। সেখানে পুলিশের সাথে আন্দোলনকারী শিক্ষকদের ধস্তাধস্তি হয়। শিক্ষকদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কিন্তু তাতেও আন্দোলনকারী শিক্ষকদের দমানো যায়নি। লাগাতার ৪ দিন স্কুল বন্ধ রেখে আন্দোলন চালিয়ে যান শিক্ষকরা। অবশেষে সরকার স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ, পদোন্নতি, শিক্ষকদের ইউনিয়ন করার অধিকার সহ বিভিন্ন দাবি মেনে নেওয়ায় ধর্মঘট প্রত্যাহৃত হয়। যদিও বাকি দাবিগুলি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষকরা।
এই বিলের মাধ্যমে স্থানীয় প্রশাসনের হাতে অনেক ক্ষমতা তুলে দিতে চাইছে নেপাল সরকার। এর মাধ্যমে সরকার শিক্ষার দায়িত্ব কার্যত নিজ কাঁধ থেকে ঝেড়ে ফেলতে চাইছে। স্কুলের মান নির্ধারণ, স্কুল স্থানান্তর এবং স্কুল বন্ধ করার ক্ষমতাও তুলে দেওয়া হয়েছে পঞ্চায়েত-পুরসভার মতো স্থানীয় প্রশাসনের হাতে। শিক্ষকদের অনেকেই মনে করছেন, এতে শিক্ষার মানের চূড়ান্ত অবনমন ঘটবে। এ ছাড়াও এই বিল শিক্ষকদের কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে এবং আন্দোলনে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
ভারত সরকারও জাতীয় শিক্ষানীতিতে পঞ্চায়েত-পুরসভার হাতে শিক্ষার দায়িত্ব তুলে দেওয়ার সুপারিশ করেছে। এখানেও বিজেপি সরকার জাতীয় শিক্ষানীতির মাধ্যমে শিক্ষাক্ষেত্রের স্বাধিকার হরণ, শিক্ষকদের চাকরির নিরাপত্তা হরণ করছে। নেপালের পুঁজিবাদী সরকারও একই কাজ করছে। আসলে দুটি দেশই বিশ্ব পুঁজিবাদী অর্থনীতির নিয়মে শিক্ষাকে পণ্য হিসাবে দেখছে। শিক্ষা নিয়ে বেসরকারি ব্যবসার বিস্তার ঘটাতে সরকারি শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হচ্ছে পরিকল্পিত ভাবে। আশার কথা, নেপাল কিংবা ভারত দুটি পুঁজিবাদী দেশেই শাসকদের আক্রমণের প্রতিবাদে আন্দোলনের পথকেই বেছে নিয়েছেন শিক্ষকদের সাথে ছাত্র এবং অভিভাবকরাও।