নবজাগরণের পথিকৃৎ বিদ্যাসাগর (১১)

ভারতীয় নবজাগরণের পথিকৃৎ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দ্বি–শত জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এই মহান মানবতাবাদীর জীবন ও সংগ্রাম পাঠকদের কাছে ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হচ্ছে৷

(১১)

ভাষা, সাহিত্য ও বিদ্যাসাগর

বিদ্যাসাগরের প্রথম মৌলিক এবং অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ গ্রন্থ ‘সংস্কৃত ভাষা ও সংস্কৃত সাহিত্যশাস্ত্র বিষয়ক প্রস্তাব’ (১৮৫৩)৷ এতে তিনি সাহিত্য–আলোচনার অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ দিক উল্লেখ করেছেন৷ যেমন কাব্য সম্পর্কে বলেছেন, কাব্য মানে কেবল অলঙ্কৃত বাক্য নয়, প্রয়োজন সহৃদয়তা৷ কিন্তু সেসব প্রসঙ্গ পরে আলোচনা হবে৷ অন্য একটি বিশেষ কারণে তাঁর এই বইটির প্রসঙ্গ এখানে এল৷ বইটির উপসংহার অংশে তিনি একটি জরুরি বিষয় লিখেছেন, যেটা তাঁর কর্মসূচিকে উপলব্ধি করার সহায়ক৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘ইহা অবশ্য স্বীকার করিতে হইবে, ভারতবর্ষীয় সর্বসাধারণ লোক বিদ্যানুশীলনের ফলভোগী না হইলে তাহাদিগের চিত্তক্ষেত্র হইতে চিরপ্ররূঢ় কুসংস্কারের সমূলে উন্মূলন হইবে না এবং হিন্দী, বাঙ্গলা প্রভৃতি তত্তৎ প্রদেশের প্রচলিত ভাষাকে দ্বারস্বরূপ না করিলে, সর্বসাধারণের বিদ্যানুশীলন সম্পন্ন হওয়া সম্ভব নহে৷’’ বাস্তব পরিস্থিতিকে পর্যালোচনা করে এই যে তিনি একটা কর্মসূচি উপস্থিত করলেন, এটুকু করেই ছাড়লেন না৷ সেই কর্মসূচি রূপায়ণে উদয়াস্ত পরিশ্রমে লিপ্ত হলেন৷ তাই তিনি তাঁর প্রত্যেকটি রচনায় বাংলা ভাষাকে ক্রমশ উন্নত করে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা করতেন৷ প্রায় সবকটি বইয়ের ভূমিকায় (বিজ্ঞাপন) দেখা যায় তিনি লিখছেন, ‘এই রচনার সময় বাংলা ভাষাকে আরও সহজ–সরল করার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি৷’

বিদ্যাসাগর দেখেছিলেন, অত্যন্ত আড়ম্বর ও কাঠিন্যের কারণে সংস্কৃত ভাষার চল আর নেই৷ কিন্তু, আদিরসাত্মক বর্ণনাগুলি বাদ দিলে, সংস্কৃত ভাষায় যে কাব্যসৌন্দর্য এবং দর্শন ইত্যাদি আলোচনা হয়েছে, অতীতকে বোঝার জন্য সেসব যদি কেউ ভাল করে জানতে চায় তাহলে তাকে সংস্কৃত ভাষা শিখতে হয়৷ অথচ ব্যাকরণের বিষম জটিলতার কারণে সেটা শেখা মোটেই সহজ নয়, দীর্ঘ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার৷ তাই বিদ্যাসাগর বাংলা ভাষায় যথাসম্ভব সহজ করে সংস্কৃত ব্যাকরণের একটা বই লিখলেন, ‘সংস্কৃত ব্যাকরণের উপক্রমণিকা’ (১৮৫১)৷ এর পর তিনি রামায়ণ–মহাভারত সহ সংস্কৃত, বাংলা, হিন্দি ও ইংরেজি ভাষা থেকে নানা গল্প অনুবাদ করলেন এবং ‘ঋজুপাঠ’ নামে প্রকাশ করলেন৷ এসবের মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রবল গতিবৃদ্ধি সম্ভব তো হয়েছেই৷ তার সাথে বিদ্যাসাগরের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল জীবনে–চরিত্রে যথার্থ মূল্যবোধ সঞ্চারিত করা৷ যেমন, কবি কালিদাস সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি দেখালেন, কালিদাস শুধু বড় কবিই নন, তিনি ছিলেন নিরহং এক মানুষ৷ বিদ্যাসাগর লিখলেন, ‘‘কি স্বদেশে কি বিদেশে, কালিদাসের নাম অদ্যপি দেদীপ্যমান রহিয়াছে৷ …এইরূপ অদ্বিতীয় রচনাশক্তিসম্পন্ন হইয়াও, এরূপ অভিমানশূন্য ছিলেন এবং আপনাকে এরূপ সামান্য জ্ঞান করিতেন যে শুনিলে বিস্ময়াপন্ন হইতে হয়৷… রঘুবংশের প্রারম্ভে (কালিদাস) লিখিয়াছেন, …‘যেমন বামন উন্নতপুরুষপ্রাপ্য ফলের গ্রহণাভিলাষে বাহু প্রসারিত করিয়া উপহাসাস্পদ হয়, সেইরূপ, অক্ষম আমি, কবিকীর্তিলাভে অভিলাষী হইয়াছি, উপহাসাস্পদ হইব’৷’’(সংস্কৃত ভাষা ও সংস্কৃত সাহিত্যশাস্ত্র বিষয়ক প্রস্তাব)৷ কালিদাসের এই নিরহঙ্কারী মন বিদ্যাসাগরকে আকৃষ্ট করেছিল৷ সেই মনের চর্চা অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে তিনি নিজে করেছিলেন এবং অন্যদেরও করাতে চেয়েছিলেন৷

বিশিষ্ট ভাষাবিদ অধ্যাপক সুকুমার সেন বলেছেন, ‘‘বিদ্যাসাগর অ–সাধারণ মানুষ ছিলেন, একদম আপ–টু–ডেট৷ তাঁর মতন ‘আধুনিক’ মানুষ আজ পর্যন্ত আমাদের দেশে জন্মায়নি৷ ঊনবিংশ শতাব্দী থেকে আমাদের মধ্যে ইতিহাস সম্পর্কে সচেতনতা দেখা দিয়েছে, তখন থেকে আজ পর্যন্ত আপ–টু–ডেট বলতে আড়াইজন মানুষের নাম করতে পারি৷ একজন বিদ্যাসাগর, অন্যজন রবীন্দ্রনাথ, আর অর্ধেক হলেন রামমোহন রায়৷… বিদ্যাসাগর সর্বাগ্রগণ্য৷’’ বাংলা গদ্যরীতির আলোচনা করতে গিয়ে অধ্যাপক সেন লিখেছেন, ‘‘বাঙ্গালা গদ্যের জটিলতা ঘুচাইয়া বাক্যে অনেকখানি ভারসমতা ও ব্যবহারযোগ্যতা দিয়াছিলেন অক্ষয়কুমার৷ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর পরিমিত ও লালিত্য সঞ্চার করাইয়া বাঙ্গালা গদ্যে প্রাণসঞ্চার করিলেন৷… তিনি বাঙ্গালা গদ্যের তাল বাঁধিয়া দিলেন৷’’ বাস্তবে বিদ্যাসাগরের হাতে এ এক নতুন সৃষ্টি৷ পুরনো সমস্ত প্রচেষ্টার ধারাবাহিকতায় ছেদ ঘটিয়ে তিনি ভাষা ও সাহিত্য ক্ষেত্রে এক গুণগত পরিবর্তন ঘটালেন৷ নতুন দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে জ্ঞানচর্চার উর্বরতর জমি তৈরি করলেন৷ অধ্যাপক প্রমথনাথ বিশী তাই লিখেছেন, ‘‘হিন্দু কলেজের শিক্ষিত সমাজকে ইয়ং বেঙ্গল বলা হইয়া থাকে, বিদ্যাসাগরীয় রীতির শিক্ষিত সমাজকে মডার্ন ম্যান বলা অন্যায় হইবে না৷ বিংশ শতক বিদ্যাসাগরীয় রীতিতে শিক্ষিত সমাজের উত্তরপুরুষ– বিদ্যাসাগরকে তাহার আত্মীয় মনে না হওয়া অসম্ভব৷… মায়ের মুখের ভাষা মাতৃভাষা– এখানে বিদ্যাসাগরকে মাতা মনে করিলে অন্যায় হইবে না– তাঁহার মুখের ভাষা পরবর্তী যুগকে মুখর করিয়া তুলিয়াছে  তাঁহার কলমের গাছে অত্যল্প কালের মধ্যে অপূর্ব নব্য গদ্যের সুফল ফলাইয়াছে৷’’

অন্ধ বিশ্বাস ও ভক্তির পরিবর্তে সঙ্গত যুক্তি ও বিচারধারার যে যুগ, ভারতে সেই যুগের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব বিদ্যাসাগর৷ যে–কোনও ধরনের উগ্রতা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত থেকে তিল তিল করে এই যুগ নির্মাণ করেছেন তিনি৷ হাতে–কলমে গড়েছেন নতুন চরিত্র, যারা যথার্থ জ্ঞানচর্চার উজ্জ্বল মশাল বহন করবে৷ তাঁদের মধ্যে অন্যতম অক্ষয়কুমার দত্ত৷ প্রথম জীবনে অক্ষয়কুমারের উপর প্রভাব ছিল দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের৷ তিনি ব্রাহ্ম হয়ে প্রার্থনায় মুক্তি খোঁজার চেষ্টা করছিলেন৷ কিন্তু এর দ্বারা তিনি অক্ষয়কুমারকে প্রভাবিত করতে পারলেন না৷ অক্ষয়কুমার বললেন, প্রার্থনা নয়, পরিশ্রমেই মুক্তি৷ কৃষকরা পরিশ্রম করে শষ্য পায়, প্রার্থনা দ্বারা নয়৷ জীবনযাপনের জন্য যা যা প্রয়োজন, দেখা যায় সেসবই একমাত্র কঠোর পরিশ্রমের বিনিময়েই উৎপাদন করা সম্ভব৷ তা হলে,

পরিশ্রম= ফসল

পরিশ্রম+ প্রার্থনা= ফসল

অতএব, প্রার্থনা= শূন্য (০)

১৮৫১ সালে অক্ষয়কুমার একটা বই প্রকাশ করলেন, ‘বাহ্য বস্তুর সহিত মানবপ্রকৃতির সম্বন্ধ বিচার’৷ তারপর ‘চারুপাঠ’ (১৮৫৩)–এর প্রথম ভাগ–এ লিখলেন, ‘‘…জন্তুর ন্যায় কেবল নিজের ও নিজ পরিবারের ভরণ–পোষণ করিয়া ক্ষান্ত থাকা মনুষ্যের ধর্ম্ম নয়৷… আপন আপন জীবিকা নির্ব্বাহের চিন্তা করা যেরূপ আবশ্যক, সময়ে সময়ে একত্র সমাগত হইয়া, স্বদেশের দুঃখ–বিমোচন ও সুখ সম্পাদনার্থ যত্ন ও চেষ্টা করাও সেইরূপ আবশ্যক৷’’ এইসব বইগুলিকে ছাত্রদের পাঠ্য তালিকায় দিয়ে দিলেন বিদ্যাসাগর৷

ইতিমধ্যে তিনি হাত দিয়েছেন ‘অভিজ্ঞানশকুন্তলম’–এ৷ ‘শকুন্তলা’ (১৮৫৪) প্রকাশ নানা কারণে সাহিত্যজগতে বিদ্যাসাগরের এক অনবদ্য কাজ৷ সংস্কৃত নাটক থেকে বাংলা কাহিনী করার কোনও সম্যক দৃষ্টান্ত এর আগে ছিল না৷ অথচ, মূল গ্রন্থের কোনও রকম বিকৃতি না ঘটিয়ে বাংলায় শকুন্তলাকে যে ভাবে পুনরাবিষ্কার করলেন বিদ্যাসাগর, তা আজও তাবড় সাহিত্যবিশারদকে বিস্মিত করে৷ এই কাহিনীর ভাষায়–সংলাপে এবং মানবমনের কোমল হৃদয়গ্রাহী আবেদনকে বিদ্যাসাগর নিখুঁত শিল্পের মতো করে সৃষ্টি করেছিলেন৷ তাই আজও সাহিত্যবিদদের মতে, বিদ্যাসাগরের অনুবাদ আক্ষরিকতার সীমা ছাড়িয়ে ভাবধর্মী হয়েছে এবং প্রায় নতুন সৃষ্টিরই আকার ধারণ করেছে৷

‘শকুন্তলা’র মতো এমন একটা সৃষ্টিতে তিনি নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন কারণ, অন্যান্য কাহিনীর ক্ষেত্রেও যেমন, নিছক একটা গল্পপাঠ করাতে তিনি চাননি৷ তাহলে কী চেয়েছিলেন? যেটা চেয়েছিলেন তা স্পষ্ট করে কোথাও তিনি লেখেননি৷ শরৎসাহিত্য নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে এ–যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মার্কসবাদী চিন্তানায়ক শিবদাস ঘোষ দেখিয়েছেন, জীবনের সঠিক পথকে ‘‘যারা বুদ্ধি দিয়ে গ্রহণ করতে পারবেন তাঁদের জন্য তো তত্ত্বের আকারে জ্ঞান–বিজ্ঞানের বই–ই রয়েছে৷ তাহলে সাহিত্যের প্রয়োজন কী? …যারা তেমন শিক্ষার বনিয়াদ এবং ক্ষমতা না থাকার জন্য যুক্তি বা বুদ্ধি দিয়ে বড় কথাগুলো গ্রহণ করতে পারেন না– রসসৃষ্টির মাধ্যমে ব্যথা–বেদনা জাগিয়ে দিয়ে তাঁদের মনেও সেটা খানিকটা গেঁথে দেওয়া৷ এই কাজটি করার জন্যই তো সাহিত্যের প্রয়োজনীয়তা৷’’ বিদ্যাসাগর এই কাজটাই করেছেন৷ বিদ্যাসাগর ছিলেন আদ্যন্ত কর্মপ্রাণ ব্যক্তিত্ব৷ তাঁর দর্শন ছিল, ‘‘যে ব্যক্তি যে দেশে জন্মগ্রহণ করেন, সে দেশের হিতসাধনে সাধ্যানুসারে সচেষ্ট ও যত্নবান হওয়া, তাহার পরম ধর্ম ও তাহার জীবনের সর্বপ্রধান কর্ম৷’’ তাঁর সামনে পুরনো জরাজীর্ণ সমাজকে ভেঙে গড়ার কাজ ছিল বিস্তর৷ কর্মপ্রেরণা এবং কর্মপথ সৃষ্টির তাগিদে তাঁকে আসতে হয়েছিল ভাষা ও সাহিত্য ক্ষেত্রে৷ বিদ্যাসাগরের সাহিত্যকর্মকে তাঁর কূপমণ্ডুক সমাজকে ভাঙার লড়াই থেকে আলাদা করা যায় না৷ নতুন যুগের নতুন যুক্তি–বিচার ধারার আপাত নীরসতাকে ব্যথা–বেদনা জাগিয়ে মানুষের হৃদয়ে গেঁথে দেওয়া এবং এর মাধ্যমে তাকে সত্য জানতে শেখানো ও সামাজিক স্বার্থে চরিত্রকে গড়ে তুলে সক্রিয় করা– এই ছিল বিদ্যাসাগরের মূল উদ্দেশ্য৷

ভাষা ও সাহিত্য ক্ষেত্রে বিদ্যাসাগরের বিস্তৃত কর্মকাণ্ড সম্পর্কে যথোপযুক্ত উপলব্ধির জন্য তাঁর এই উদ্দেশ্যবোধ ভাল করে জানা জরুরি৷ জীবনের এই উদ্দেশ্য তাঁর সামনে উপস্থিত হয়েছিল আকস্মিক ভাবে নয়, বরং একটা ধারাবাহিকতায়৷ সেই কালপর্ব হল এদেশে ইংরেজি শিক্ষা প্রসারের পর্ব৷ সে সময় ইংরেজি ভাষা অনেকেই শিখেছিলেন৷ ইংরেজি ভাষার সাহিত্যের কিছুটা রসোপলব্ধি করার যোগ্যতাও ছিল৷ কিন্তু যাকে বলে ‘স্পিরিট অফ ইংলিশ’– অর্থাৎ, ষোড়শ শতকে ইউরোপের রেনেসাঁস বা নবজাগরণের যে মানবতাবাদী চিন্তাধারা ঐতিহাসিক ভাবে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের সাথে যুক্ত, সেই চিন্তাধারাকে নিজের জীবনে কার্যকরী ভাবে গ্রহণ করেছিলেন বিদ্যাসাগর৷ তাই তিনি কখনও বহুমূল্য পোশাক পরে সাহেবিয়ানা দেখাননি৷ বা নিজেকে ‘আধুনিক’ প্রমাণ করার জন্য কোনও বিশেষ অভ্যাসকে প্রশ্রয় দিতে হয়নি৷ এই কারণেই, মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁর সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘ফার্স্ট ম্যান অ্যামং আস’৷ এই ‘ম্যান’–এর অর্থ হল, ঐতিহ্যবাদ থেকে মুক্ত আধুনিক মনের অধিকারী মানুষ৷ তার সাথে, জাত–ধর্ম–বর্ণ ইত্যাদি পরিচয় ছেড়ে কেবলমাত্র দোষ–গুণের আধারে মানুষকে দেখেন– এমন ব্যক্তিত্বকেই মাইকেল ‘ম্যান’ বলেছেন৷ তাঁর ‘ম্যান’ আদতে সমাজের সর্বাংশে মানবতাবাদী মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করার যোদ্ধা৷ সেই অর্থেই বিদ্যাসাগর এদেশে ‘ফার্স্ট ম্যান’৷ তাই তাঁর আগে অনেকেই বহুবিবাহ বন্ধ এবং বিধবাবিবাহ চালুর প্রসঙ্গ তুললেও সমাজে প্রতিষ্ঠিত প্রবল প্রতাপশালী রক্ষণশীলদের বিরুদ্ধে সেভাবে দাঁড়াতে পারেননি৷ কিন্তু বিদ্যাসাগর অটল ভাবে দাঁড়িয়ে অবিচল লড়েছিলেন এবং জয়ী হয়েছিলেন৷ এক্ষেত্রে যে বাংলা ভাষা ও বাংলা গদ্যশৈলীকে তিনি আসন্ন এক যুদ্ধের হাতিয়ারের মতো করে গড়েছিলেন, তার ভূমিকা অসামান্য৷ যেমন, ১৮৫৫ সালে তাঁর অবিস্মরণীয় রচনা ‘বিধবাবিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিৎ কিনা এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব’ বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের এক অন্যতর প্রশস্ত পথের সন্ধান দেয়৷   (চলবে)

(গণদাবী : ৭২ বর্ষ ৯ সংখ্যা)