বিজেপি শাসিত আসামে মাইক্রোফিনান্স বা ক্ষুদ্র পুঁজির ঋণের জালে জড়িয়ে পড়ছেন বহু মানুষ। ঘটিবাটি বেচেও সেই ঋণের সুদ মেটানো যাচ্ছে না। পাওনাদারদের তাড়ায়় অধিকাংশ গ্রামবাসী শেষপর্যন্ত বাধ্য হচ্ছেন কিডনি বেচতে।
করোনা অতিমারিতে অভাবের জেরে গত এক বছরে এই প্রবণতা ভয়ঙ্কর আকার নিয়েছে। গরিব মানুষের টাকার প্রয়োজনকে কাজে লাগিয়ে জাল বিস্তার করেছে অঙ্গ পাচারকারীরা।
তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, গুয়াহাটি থেকে প্রায় ৮৫ কিলোমিটার দূরে মরিগাঁও জেলার দক্ষিণ ধরমতুল গ্রামই কিডনি পাচারের কেন্দ্রবিন্দু। দালাল চক্রের হোতারা কিডনি দাতাদের আগে থেকে শিখিয়ে পড়িয়ে গুয়াহাটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাজ্য অঙ্গদান সংস্কৃতি কমিটির কাছে নিয়ে যায়। সেখানে তাদের দিয়ে বলানো হয়, তারা স্বেচ্ছায় কিডনি দান করতে যাচ্ছে। এরপর ৫ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের কলকাতায় এনে কিডনি বের করে নেওয়া হয়। কিন্তু প্রতিশ্রুতি মতো টাকা পান না কেউই। অনুমান, এখনও পর্যন্ত প্রায় ৩০ জনের কিডনি বিক্রি করেছে এই চক্র।
পেশায় রাজমিস্ত্রি সুমন দাস থাকেন মরিগাঁও জেলার এক গ্রামে। তাঁর ছেলের হৃদযন্তে্রর সমস্যা রয়েছে। অস্তে্রাপচার দরকার। কিন্তু টাকা নেই। তাই নিজের একটি কিডনি বিক্রি করতে রাজি হয়েছিলেন। ৫ লক্ষ টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও পেয়েছেন মাত্র দেড় লক্ষ টাকা। তা দিয়ে ছেলের ঠিক মতো চিকিৎসা করাতে পারেননি। এদিকে একটি কিডনি চলে যাওয়ায় তাঁর কাজ করার ক্ষমতা কমে গিয়েছে। সুমনের স্ত্রী এক সংস্থা থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘রোজই টাকার জন্য তাগাদা দেয় সংস্থার কর্মীরা। তাই ভেবেছিলাম, যদি মোটা টাকা পাওয়া যেত, সমস্যা মিটত।’ মাইক্রোফিনান্স সংস্থা থেকে মহিলাদের নেওয়া ঋণ মকুব করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল বিজেপি। কিন্তু এখন বিভিন্ন শর্ত চাপিয়ে নেতা-মন্ত্রীরা কথা ঘোরাতে ব্যস্ত। বিজেপির প্রতারণায় মানুষ ক্ষুব্ধ। তাদের সুশাসনের কঙ্কালসার চেহারা উঠে এসেছে কিডনি পাচারের ঘটনায়।