ধর্মগুরু নামিয়ে সিএএ–র পক্ষে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা বিজেপির

 

আন্দোলন ভাঙতে অবশেষে গুরুর শরণাপন্ন হলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ এনআরসি,  সিএএ, এনপিআর– এর বিরুদ্ধে দেশের সর্বত্র ছাত্র যুব মহিলা বুদ্ধিজীবী সহ সর্বস্তরের মানুষ জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে আন্দোলনে ফেটে পড়ছে৷ এই আন্দোলনকে এক বিশেষ সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষের উচ্ছৃঙ্খল আন্দোলন বলে প্রধানমন্ত্রী এবং তার শাগরেদরা দাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও মানুষ তাতে বিভ্রান্ত হয়নি৷ এ লড়াই যে সাধারণ জনগণের জাগ্রত লড়াই তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না৷ বিজেপি সরকারের বর্বর পুলিশি আক্রমণে এখনও পর্যন্ত ২৬ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন৷ আহত হয়েছেন অসংখ্য মানুষ৷ এমনকি ম্যাঙ্গালুরুতে পুলিশ হসপিটালের আইসিসিইউতে ঢুকে বর্বর আক্রমণ করতেও দ্বিধা করেনি৷ মোদি–শাহের পুলিশ জামিয়া মিলিয়া ও আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে ফ্যাসিস্ট বাহিনীর মতো নির্বিচারে লাঠি গুলি চালিয়ে আহত ও গ্রেপ্তার করেছে প্রচুর ছাত্রছাত্রীকে৷ আন্দোলন প্রতিহত করতে বিজেপি শাসিত বহু এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি রাখা হয়েছে দিনের পর দিন৷ সরকার যত অত্যাচার নামিয়ে আনছে মানুষ ততই লড়াইয়ের রাস্তায় প্রতিবাদ প্রতিরোধ চালিয়ে যাচ্ছে৷ ১৬ ডিসেম্বর থেকে দিল্লির শাহিনবাগের লাগাতার আন্দোলন একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত৷ সদ্য–ভূমিষ্ঠ সন্তান কোলে মা, ৯১ বছরের বৃদ্ধা থেকে শুরু করে ছোট ছোট শিশুরা পর্যন্ত তীব্র শীতের কামড় সহ্য করেও দিন থেকে রাত আন্দোলনের ময়দানে সদা জাগরুক৷

মানুষকে বিভ্রান্ত করতে প্রধানমন্ত্রী টুইট করে বলছেন যে, সিএএ কারওর নাগরিকত্ব কেড়ে নেবে না৷ কিন্তু সাধারণ মানুষ তাঁর ছলনায় না ভুলে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন এবং আন্দোলনরত মানুষের সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলেছে৷ মানুষের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত এই আইনকে কৌশলে গ্রহণ করাতে মরিয়া প্রধানমন্ত্রী অবশেষে শরণাপন্ন হলেন সদগুরু জাগ্গি বাসুদেবের৷ প্রধানমন্ত্রী টুইটে ওই গুরুর ২০ মিনিটের একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন, যেখানে গুরু নিজেই বলেছেন আইনটি তিনি পড়ে দেখেননি৷ আইন সম্পর্কে যা শুনেছেন, খবরের কাগজে যা দেখেছেন তাতে তিনি মনে করছেন এই আইনের নাকি খুব প্রয়োজন এবং এরকম আইন নাকি সব দেশেই রয়েছে৷ বোঝা যায় শেখানো বুলিই তিনি বলেছেন৷ ছাত্রদের প্রতিবাদকে পাথর ছোড়ার উচ্ছৃংখল আন্দোলন হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং সরকারি বয়ানের সুরেই পুলিশের সংযমের(?) তিনি প্রশংসা করেছেন৷

সাধারণ মানুষের উপর যেহেতু ধর্মগুরুদের প্রভাব আছে, তাই দলীয় স্বার্থ সিদ্ধ করতে এই সব গুরুদের বারেবারে কাজে লাগিয়েছে বিজেপি সরকার৷ এর আগে অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণে ঐকমত্য গডে তুলতে আসরে নামানো হয়েছিল ধর্মগুরু রবিশঙ্করকে৷ বাবা রামদেব যিনি নিজে কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক, তাঁকে প্রচারে নামানো হয়েছিল নরেন্দ্র মোদির নোট বাতিলের সমর্থনে৷ এমনকি ধর্ষণ কাণ্ডে অভিযুক্ত সদগুরু (!) আশারাম বাপু, রামরহিম, নিত্যানন্দরা বারবার আশীর্বাদ করেছেন ভক্ত বিজেপি নেতাদের৷ এবারে আর এক সদগুরু, যার নিজস্ব ফাউন্ডেশন পরিচালনা নিয়ে নানা মহলে বহু অভিযোগ রয়েছে এমনকি যার স্ত্রীর মৃত্যু নিয়েও বহু রহস্য রয়েছে, সেই জাগ্গি বাসুদেবকে নামানো হল এই বিভাজন সৃষ্টিকারী আইনের পক্ষে প্রচার করতে৷ সাধারণ মানুষের ধর্মীয় আবেগকে কাজে লাগিয়ে এভাবে নরেন্দ্র মোদিরা জনস্বার্থ বিরোধী পদক্ষেপকে কার্যকরী করার চক্রান্ত করছে৷ ধর্মের আফিম দিয়ে মানুষকে ভোলানো শাসক শ্রেণির চিরাচরিত চক্রান্ত৷ তা প্রতিহত করবে আন্দোলনের শক্তিই৷

(গণদাবী : ৭২ বর্ষ ২২ সংখ্যা)