কলকাতায় ৭৫টি সরকারি ও সরকার পোষিত স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে৷ হিন্দু অ্যাকাডেমি, বঙ্গবাসী হাই স্কুল, যাদবপুর সম্মিলিত বয়েজ হাই স্কুল, বাগবাজার বাণী গার্লস হাই স্কুল সহ শুধু ৭৫টি স্কুলই নয়, খবরে এও প্রকাশিত হয়েছে, কলকাতায় আরও ১০০–র মতো এমন স্কুল বন্ধ হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে৷
কেন স্কুলগুলি বন্ধ হওয়ার মুখে? কারণ ছাত্র সংখ্যা অত্যন্ত কম৷ সরকারি বাংলা মাধ্যম এইসব স্কুলের উপর মানুষের আস্থা নেই কেন?
ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনার প্রতি মানুষের আগ্রহ এখন বেশি৷ এটা শুধু ঠাট বজায় রাখা বা চাকরি পাওয়ার জন্য নয়৷ জ্ঞান–জগতের বহু বিষয়কে জানা, উন্নত চিন্তা– চেতনায় সমৃদ্ধ হওয়ার জন্য এবং সামগ্রিক জ্ঞানচর্চার বিকাশের জন্যও ইংরেজি শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম৷ কিন্তু তার জন্য কিছু ইংরেজি মাধ্যম স্কুল চালু করলেই সমস্যার সমাধান হবে না৷ বাংলা মাধ্যম স্কুলেই বাংলার পাশাপাশি গুরুত্ব দিয়ে ইংরেজি পড়ানো দরকার৷ এর জন্য যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ এবং পঠন–পাঠনের উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে তোলা অত্যন্ত প্রয়োজন৷
সরকারি স্কুলের প্রতি সাধারণ মানুষ আস্থা হারিয়েছে পাশ–ফেল এবং ইংরেজি তুলে দেওয়ার পরিণামেই৷ এর ফলে স্কুলের পঠন–পাঠনের মান নেমে গিয়েছিল৷ এই সুযোগে পাড়ায় পাড়ায় গজিয়ে ওঠে প্রাইভেট ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল অথবা বাংলা মাধ্যম স্কুল যেখানে ইংরেজি আবশ্যিকভাবে পড়ানো হয়৷ সেই সব স্কুলে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের অত্যধিক অর্থ দিয়ে পড়াতে বাধ্য হন৷
কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের অধীনে বহু প্রাইমারি স্কুল ছিল, যেগুলির বেশিরভাগই এখন উঠে গেছে৷ এই স্কুলগুলিতে এক সময় ছাত্র সংখ্যা ছিল যথেষ্ট পরিমাণে৷ সরকার এই স্কুলগুলিতে যথাযথ পরিকাঠামো গড়ে তুলে রক্ষণাবেক্ষণ করেনি, মানোন্নয়নের চেষ্টা করেনি৷
কেন করেনি? এখানেই রয়েছে সরকারি শিক্ষানীতির ভূমিকা৷ নীতিগতভাবে সরকার শিক্ষায় বেসরকারিকরণ চাইছে৷ আর তা জোরালোভাবে করতে হলে সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্বল করা চাই, যাতে মানুষ স্বেচ্ছায় এই সব স্কুল থেকে মুখ ফেরায়৷ ইংরেজি ও পাশ–ফেল তুলে দেওয়া সেই বেসরকারিকরণের প্রক্রিয়াকেই ত্বরান্বিত করেছে৷ আজকে মাধ্যমিক–উচ্চমাধ্যম্ স্তরের সরকারি বাংলা মাধ্যমের স্কুলগুলি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পিছনেও একই কারণ রয়েছে৷
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশ–ফেল প্রথা ফিরিয়ে না আনলে সরকারি স্কুল বিলীন হওয়ার রোগ মহামারী আকার নেবে৷