লোকসভা ভোটের আগে প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘দেশে যখন রেকর্ড আর্থিক বৃদ্ধি হচ্ছে, তখন চাকরিও নিশ্চয়ই হচ্ছে৷’ কিন্তু তথ্য বলছে, ২০১৭ সালে বেকারবৃদ্ধির হার ছিল ৩.৫২ শতাংশ৷ ২০১৮ সালে তা হয়েছে ৬.১০ শতাংশ৷ অর্থাৎ, বেকারবৃদ্ধির হার এক বছরে প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে৷
বছরে ২ কোটি করে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ প্রতিশ্রুতি রক্ষায় তিনি ডাহা ফেল৷ পাঁচ বছরে ১০ কোটি চাকরি দূরের কথা বছরে ১ কোটির বেশি চাকরির সুযোগ কমেছে৷ পাকোড়া ভাজার তত্ত্ব দিয়েও যা ঢাকা যাচ্ছে না৷ শুধু তিনি নয়, রাজ্যে রাজ্যে যে সব নেতা–মন্ত্রীরা ভোটে জেতার টোপ হিসাবে দেশের তরুণ প্রজন্মকে ধাপ্পা দিতে কোটি কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তাঁরা প্রত্যেকেই ডাহা ফেল৷
দু–এক মাস বাদেই দেশে সপ্তদশ সাধারণ নির্বাচন, দিল্লির সিংহাসন দখল করার লড়াই৷ সকলের চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর চাপ একটু বেশিই৷ গত পাঁচ বছরের যাবতীয় চূড়ান্ত ব্যর্থতা ভাল করে ধামাচাপা দিয়ে নতুন স্বপ্ন ফেরি করতে তিনি স্বাভাবিক ভাবেই এখন ব্যস্ত৷ ক্ষমতায় বসার আগে তিনি ক্যামেরার সামনে ‘ছাপ্পান্ন ইঞ্চি’ ছাতি ঠুকে বলতেন ‘একশো দিনের মধ্যে দেশ বদলে দেব’৷ প্রায় পাঁচ বছর পর ক্ষমতা থেকে যাওয়ার সময় তিনি বলছেন, ‘অনেক কিছুই করা হয়নি৷’ অর্থাৎ, আরেকবার সুযোগ দিন, এবারে সুদিন আনবোই৷
১৯৪৭ সালের মধ্যরাতে যেদিন ভারত স্বাধীন হল, সেদিন জওহরলাল নেহরু বলেছিলেন, ভারতের সেবা মানে ভারতের অসংখ্য দরিদ্র–বঞ্চিত–রোগ মানুষের সেবা৷ …আমরা এমন দেশ বানাবো যেখানে সকলে সুখে থাকতে পারবে৷
১৯৬৮ সালে অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন মোরারজি দেশাই বলেছিলেন, প্লাস্টিক সার্জারিতে যেমন দেহের এক অংশের চামড়া কেটে আরেক অংশে লাগানো হয়, তেমনই সমাজের সম্মৃদ্ধ অংশের থেকে নিয়ে অনুন্নত অংশে দিতে হবে৷
১৯৭১ সালে ভোটে বাজিমাত করতে ইন্দিরা গান্ধী ধুয়ো তুলেছিলেন, গরিবি হঠাও দেশ বাঁচাও৷
১৯৯১ সালে মনমোহন সিংহ বাজেট বক্তৃতায় বললেন, ‘আমিও গরিব ঘরের সন্তান৷ বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃত্তি ও সাহায্য পেয়ে কোনও রকমে ইংল্যাণ্ডে গিয়ে পড়াশুনা করেছি৷ সেই ঋণ এবার কিছুটা শোধ করবো দেশসেবা করে৷
২০০৪ সালে অটলবিহারী বাজপেয়ি বলেছিলেন, তিনি ‘ভারত উদয়’ ঘটাবেন৷ সে জন্য শুধু বিজ্ঞাপনেই খরচ করেছিলেন কুড়ি মিলিয়ন মার্কিন ডলার, দেশের সাধারণ মানুষের দেওয়া ট্যাক্সের টাকা৷
সাত দশকের বেশি সময় ধরে এই এত দেশসেবার পরিণাম আজ দাঁড়িয়েছে কোটি কোটি বেকারবৃদ্ধি, চাষির আত্মহত্যা, শ্রমিক ছাঁটাই, অনাহারে মৃত্যু ইত্যাদি৷ বর্তমান প্রধানমন্ত্রীও সেইরকম আরেক ‘দেশসেবক’৷ তিনিও বলছেন, ‘দেশ এগোচ্ছে’৷ আর মোসায়েবরাও সেই ধুয়ো তুলছে৷ কিন্তু মানুষ জানতে চাইছে, চাকরি যদি হয়ে থাকে তো তারা কারা? সেটা জানালেই তো প্রমাণ হয়ে যায়, কোথায় কী চাকরি হয়েছে৷ কিন্তু তা না করে প্রধানমন্ত্রী কেবল ভাববাচ্যে কথা বলছেন কেন?