কেন্দ্রীয় সরকারের অপদার্থতায় তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকার জনজীবন এক নতুন সংকটে পড়েছে। বেশ কিছু রাজ্য জুড়ে চলছে ঘন্টার পর ঘন্টা লোডশেডিং। গরমে সামান্য স্বস্তি পেতে একটু পাখা চালানোর উপায়ও মানুষের নেই। কারণ, দেশের প্রায় সমস্ত তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, বিশেষত যেগুলি কয়লাখনি অঞ্চল থেকে দূরে অবস্থিত, সেগুলিতে কয়লার মজুত একেবারে তলানিতে ঠেকেছে। ফলে টান পড়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদনে। যদিও বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লার এমন সংকট প্রথম নয়, ২০২১-এর অক্টোবরেও এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। তার থেকে কেন্দ্রীয় সরকার কোনও শিক্ষা নিলে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারত না। এই প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের সর্বভারতীয় সংগঠন এআইইসিএ ৩০ এপ্রিল কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রীর উদ্দেশে লেখা চিঠিতে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রকের মধ্যেকার সমন্বয়ের অভাবকেই দায়ী করেছে।
এআইইসিএ-র সাধারণ সম্পাদক সমর সিনহা এই চিঠিতে বলেছেন, দেশের মোট বিদ্যুতের ৭০ শতাংশ আসে তাপবিদ্যুৎ থেকে। কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের নিয়ম অনুসারে প্রতিটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে অন্তত ২০ দিনের কয়লা মজুত থাকার কথা। অথচ ১৫০টি সরকারি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে ৮১টিতেই কয়লার অভাব চরমে পৌঁছেছে। সরকারি কর্তারা এই সমস্যা জেনেও কিছুই করেননি। ইতিমধ্যে কিছু কিছু রাজ্যে ৩ থেকে ৮ ঘন্টা বিদ্যুৎ ছাঁটাই চলছে। এদিকে বিদ্যুতের চাহিদা গত ফেব্রুয়ারির শেষ থেকে এপ্রিলের শুরুর মধ্যেই বৃদ্ধি পেয়েছে ১০ হাজার মেগাওয়াটের বেশি।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লা বহনের জন্য রেল ওয়াগনের অভাব এ ক্ষেত্রে একটা বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। যেখানে কমপক্ষে ৪৫৩টি মালগাড়ি প্রয়োজন, রেল কর্তৃপক্ষ কখনও ৩৭৯ বা কোনও দিন বড় জোর ৪১৫টি মালগাড়ি বরাদ্দ করেছে। কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষও মালগাড়ির অভাবকে বিদ্যুৎ সংকটের অন্যতম প্রধান কারণ বলে চিহ্নিত করেছে।
তিনি চিঠিতে বলেন, কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ, কয়লা এবং রেল মন্ত্রকের মধ্যে সমন্বয় রাখায় কেন্দ্রীয় সরকার অপদার্থতার পরিচয় দেওয়াতেই এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এখন এই পরিস্থিতি মেকাবিলার নামে বিদ্যুৎকেন্দ্রগামী কয়লার মালগাড়িকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলে সাধারণ মানুষকে বলির পাঁঠা করা হচ্ছে। রেলমন্ত্রক এক্সপ্রেস, প্যাসেঞ্জার ও লোকাল মিলিয়ে ৭৫৩টি যাত্রীবাহী ট্রেন বাতিল করেছে।
সর্বস্তরের বিদ্যুৎগ্রাহকদের সর্বভারতীয় সংগঠন এআইইসিএ কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে, ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি যাতে কোনও মতে তৈরি হতে না পারে তার জন্য সঠিক পরিকল্পনার ভিত্তিতে স্থায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের গাইডলাইন মেনে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কয়লা সরবরাহ করতে রেলের সাধারণ যাত্রী পরিষেবায় কোনও যাতে প্রভাব না পড়ে তার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করতে হবে।