দেশ জুড়ে নেতাজি জন্মজয়ন্তী

চিত্তরঞ্জন পার্ক, দিল্লি

ধর্ম এবং রাজনীতিকে মিলিয়ে দিয়ে যেভাবে ভোটব্যাঙ্ক তৈরির অপরাজনীতি চলছে, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু সারা জীবন ধরে তার বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ধর্ম মানুষের ব্যক্তিগত বিষয়, রাজনীতিতে তাকে টেনে আনা উচিত নয়। রাজনীতির চলা উচিত অর্থনীতি এবং বৈজ্ঞানিক যুক্তিকে ভিত্তি করে। তিনি হিন্দু এবং মুসলমানের স্বার্থ পরস্পরের পরিপন্থী বলেও মনে করতেন না।স্বাধীনতা আন্দোলনে আপসহীন বিপ্লবী ধারার নেতা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর প্রকৃত শিক্ষা ও তাঁর শোষণহীন ভারত গড়ার স্বপ্নকে ভুলিয়ে দিতে সচেষ্ট শাসকদলগুলি। তারা নিছক কিছু আড়ম্বরের মধ্যে নেতাজি-চর্চা চাপা দিতে বদ্ধপরিকর।

এই মহান মানুষটির সংগ্রামকে দেশের মানুষের বিশেষত ছাত্র যুব সমাজের মধ্যে জাগরূক রাখার দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে এসেছে এআইডিএসও, এআইডিওয়াইও, এআইএমএসএস-এর মতো সংগঠনগুলি। এদের পক্ষ থেকে ২৩ জানুয়ারি ১২৭তম নেতাজি জন্মজয়ন্তীতে সারা দেশের সঙ্গে এ রাজ্যে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, বাজার-স্টেশন-মোড়-পার্ক সহ কয়েক হাজার জায়গায় নেতাজির ছবিতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এ ছাড়াও অসংখ্য আলোচনা সভা, উদ্ধৃতি ও ছবি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। এই ধরনের কর্মসূচি জানুয়ারি মাসের বাকি দিনগুলি ধরে চলে।

শ্যামবাজার মােড়, কলকাতা

শ্যামবাজারে নেতাজি মূর্তিতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা জানান ছাত্র সংগঠন এআইডিএসও রাজ্য সম্পাদক বিশ্বজিৎ রায় এবং এসইউসিআই (সি)-এর কলকাতা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কমরেড সমরেন্দ্র প্রতিহার। মৌলালি যুবকেন্দ্রের অ্যানেক্স হলে সারা বাংলা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন কমিটির উদ্যোগে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সভাপতিত্ব করেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রাক্তন ডিরেক্টর অফ মেডিকেল এডুকেশন ডাঃ মনোজ ভট্টাচার্য। বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক বিশ্বরঞ্জন প্রধান, অধ্যাপক মনোজ গুহ ও কমিটির সম্পাদক ডাঃ অশোক সামন্ত।

মালদার হরিশ্চন্দ্রপুর় বৃত্তিপরীক্ষা কমিটির পক্ষ থেকে শহিদ মোড়ে নেতাজির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বিশ্বজিত সাহা, উজ্জ্বলেন্দু সরকার প্রমুখ। সারা বাংলা মিড ডে মিল কর্মী ইউনিয়নের পক্ষ থেকে পিপলা গ্রামে নেতাজি জন্মদিবস উদযাপিত হয়। শিবমন্দির পাড়ায় নেতাজির প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ছাত্র-যুব-মহিলারা। নেতাজির মূল্যবান উদ্ধৃতির প্রদর্শনী করেন উদ্যোক্তারা।

চিত্তরঞ্জন পার্ক, দিল্লিঃ নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোস মেমোরিয়াল অল ইন্ডিয়া কমিটির উদ্যোগে ২৩ জানুয়ারি দিল্লির সি আর পার্কে একটি জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। নেতাজি পার্কে মূর্তি ও প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান দিল্লি ইউনিভার্সিটির পূর্বতন অধ্যাপক শুভেন্দু ঘোষ, ন্যাশনাল ফিজিক্যাল ল্যাবরেটরির পূর্বতন বিজ্ঞানী অধ্যাপক অমিতাভ বসু, কমিটির সর্বভারতীয় কার্যকরী সদস্য ঋতু কৌশিক, দীনেশ মহন্ত ও প্রশান্ত কুমার প্রমুখ। বক্তা ছিলেন অধ্যাপক অমিতাভ বসু ও ঋতু কৌশিক। ছাত্রছাত্রী ও স্থানীয় বাসিন্দারা একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এরপর প্রভাত ফেরি এবং নেতাজির ছবি সংবলিত ব্যাজ পরানো হয়। সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু ১২৫তম জন্মবার্ষিকী কমিটি, দিল্লির সম্পাদক সুমন।

ত্রিনগরঃ দিল্লির ‘শহিদ ও মনীষী স্মরণ সমিতি’র উদ্যোগে ২৩ জানুয়ারি ত্রিনগরে নেতাজির জীবনসংগ্রাম সংক্রান্ত ছবি ও তাঁর অমূল্য উদ্ধৃতি প্রদর্শিত হয়।পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানানোর পর বক্তব্য রাখেন সমিতির সম্পাদক ম্যানেজার চৌরাসিয়া, প্রকাশ দেবী, সুরেশ সৈনী প্রমুখ।বহু সাধারণ মানুষ অনুষ্ঠানটিতে উপস্থিত ছিলেন।

জৌনপুর, উত্তরপ্রদেশঃ ২৩ জানুয়ারি স্বাধীনতা আন্দোলনের আপসহীন বীর যোদ্ধা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে এআইডিএসও, এআইডিওয়াইও, এআইকেকেএমএস এবং কমসোমলের উদ্যোগে জৌনপুরের বদলাপুরে সব্জি মান্ডির পাশে জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের আগে নেতাজির প্রতিকৃতি ও নানা ব্যানারে সজ্জিত মিছিল পথ পরিক্রমা করে।

জৌনপুর, উত্তরপ্রদেশ

জনসভায় সভাপতিত্ব করেন জওয়াহিরলাল মিশ্র, ইন্দুকুমার শুক্ল এবং সন্তোষ প্রজাপতিকে নিয়ে গঠিত সভাপতিমণ্ডলী। বক্তব্য রাখেন রবিশঙ্কর মৌর্য, মিথিলেশ মৌর্য, দিলীপ কুমার, রাজেন্দ্র প্রসাদ তিওয়ারি প্রমুখ। প্রধান বক্তা ছিলেন এআইডিএসও-র পূর্বতন সর্বভারতীয় সম্পাদক কমরেড অশোক মিশ্র। সভায় বিপুল সংখ্যায় ছাত্র, যুব, কৃষক, শ্রমিক ও বুদ্ধিজীবী উপস্থিত ছিলেন।

এলাহাবাদঃ অধিবক্তা মঞ্চের উদ্যোগে ২৩ জানুয়ারি আইনজীবীরা এলাহাবাদের সিভিল লাইন্সে নেতাজি সুভাষ চৌরাহাতে পৌঁছে নেতাজি সুভাষচন্দে্রর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করেন। সেখানে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন প্রবীণ আইনজীবী কে কে রায়। সভা পরিচালনা করেন অধিবক্তা মঞ্চের সংযোজক রাজবেন্দ্র সিং।

এলাহাবাদ

এই উপলক্ষে ২৫ জানুয়ারি ‘সৃজন এক পহল, এলাহাবাদ’ পত্রিকার পক্ষ থেকে একটি কাব্যপাঠ ও আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়। প্রধান বক্তা ছিলেন বিজয় শঙ্কর সিং। আলোচনা করেন মিথিলেশ ভক্ত। সভা পরিচালনা করেন বিকাশ কুমার মৌর্য।

সুপ্রিম কোর্টের সামনে

লিগাল সার্ভিস সেন্টারের উদ্যোগে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মজয়ন্তী পালিত হয়। কিছু আইনজীবী ও শিক্ষকদের উদ্যোগে দিল্লিতে সুপ্রিম কোর্টের সামনে মাল্যদান অনুষ্ঠান হয়।