দেশে দেশে আধিপত্য বিস্তার ও নজরদারি চালানোর উদ্দেশ্যে বিশ্বসাম্রাজ্যবাদের শিরোমণি আমেরিকা গোটা দুনিয়া জুড়ে বসিয়ে রেখেছে আটশোরও বেশি সেনা ঘাঁটি৷ এবার খোদ আমেরিকার বুকেই সেগুলি বন্ধ করার দাবি উঠল৷ এই দাবিতে ১২ জানুয়ারি শুরু হয়ে দু’দিন ধরে সে দেশের বাল্টিমোর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল৷ ইউএস পিস কাউন্সিল, ইউনাইটেড ন্যাশনাল অ্যান্টিওয়ার কোয়ালিশন, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকশন সেন্টার সহ আমেরিকার বেশ কয়েকটি বামপন্থী ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগঠনের ডাকে এই সম্মেলনে সাম্রাজ্যবাদের ঘৃণ্য লুঠেরা চরিত্রের বিরুদ্ধে বক্তারা প্রতিবাদী বক্তব্য পেশ করেন৷ পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য, সর্বোপরি সাধারণ মানুষের জীবনে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের কুপ্রভাব সম্পর্কে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সংগৃহীত তথ্যগুলিকেও গুরুত্ব সহকারে উপস্থিত করা হয়৷
ল্যাটিন আমেরিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে বক্তব্য রাখতে গিয়ে উঠে আসে গুয়ান্তানামো বে–র উপর মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের দখলদারির কথা৷ কিউবার কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে ১১৫ বছর ধরে এই এলাকা কুক্ষিগত করে রেখেছে আমেরিকা৷ সম্মেলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে কিউবার একটি সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগঠন ‘কিউবান মুভমেন্ট ফর পিস অ্যান্ড সভারেইনটি অফ দি পিপল’ একটি বিশেষ বার্তা পাঠিয়েছিল৷ বার্তাটিতে ভেনেজুয়েলা সহ ল্যাটিন আমেরিকার অন্য দেশগুলিতে মার্কিন হস্তক্ষেপের তীব্র নিন্দা করা হয়৷
এশীয়–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন হানাদারির বিরুদ্ধে চলমান সংগ্রামের কথা উঠে আসে সম্মেলনে৷ ফিলিপাইন দ্বীপপুঞ্জে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগ্রাম দমন করতে সে দেশের সরকারকে সামরিক সাহায্য করছে আমেরিকা৷ এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন বক্তারা৷ জাপানে মার্কিন সেনাঘাঁটি গড়ে তোলার বিরুদ্ধে সেখানকার সাম্রাজ্যবাদবিরোধী জনগণের সংগ্রামের কথাও আলোচিত হয় সভায়৷
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিনিধিরা তাঁদের দেশে মার্কিন সেনাবাহিনীর মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার তীব্র নিন্দা করেন৷ উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে মার্কিন প্রচারমাধ্যমে ব্যাপক অপপ্রচার ও রণহুঙ্কার চলছে৷ এই পরিস্থিতিতে দক্ষিণ কোরিয়ার সাম্রাজ্যবাদবিরোধী আন্দোলনের কর্মীরা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসী ভূমিকার বিরুদ্ধে যে সংগ্রাম চালাচ্ছেন, সে কথা উপস্থিত মানুষজন বিপুল আগ্রহের সঙ্গে শোনেন৷ পশ্চিম এশিয়ায় মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বেহাল দশা নিয়ে সম্মেলনে আলোচনা হয়৷ সিরিয়ায় সাত বছর ধরে বোমাবর্ষণ ও বেনাম–যুদ্ধ চালানোর পরেও আমেরিকার লেজে–গোবরে অবস্থা এবং ইরানের বিরুদ্ধে ট্রাম্প সরকারের সাম্প্রতিক হিংস্রতা নিয়েও সম্মেলনে আলোচনা হয়৷ আফ্রিকায় সাম্রাজ্যবাদী থাবা বিস্তারের লক্ষ্যে শান্তি বজায় রাখার অজুহাত তুলে তৈরি করা ‘ইউ এস আফ্রিকা কম্যান্ড’ বা ‘আফ্রিকম’–এর বিস্তার ঘটানো সহ নানা কৌশলে সেখানে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠ সোচ্চার হয় সম্মেলনে৷
ভবিষ্যতে ন্যাটো ও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সেনাঘাঁটি বন্ধ করার দাবিতে বৃহত্তর আকারে আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করার সিদ্ধান্তের কথা সম্মেলনের শেষে ঘোষণা করা হয়৷