বায়ু, জল, মাটি সহ সর্বত্র ভয়াবহ দূষণের কারণ হল বড় বড় কর্পোরেট মালিকরা। অথচ দিল্লির বায়ু দূষণের দায় সরকার চাপাচ্ছে চাষিদের ঘাড়ে। খড় বা নাড়া পোড়ানোর সমস্যা সমাধানের জন্য বিশেষজ্ঞদের অভিমত নিয়ে পদক্ষেপ করা উচিত। কিন্তু এই খড় পোড়ানোকে অজুহাত করে কৃষককে ৫ বছরের জেল ও ১ কোটি টাকা জরিমানার ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার।
ধান কেটে নেওয়ার পর যে অবশিষ্টাংশ পড়ে থাকে, অথবা ধান ঝাড়াই করে নেওয়ার পর যে খড় পড়ে থাকে, তা এখন কৃষকের একটা মারাত্মক সমস্যা। কৃষিতে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে, চাষে গরু নির্ভরতা কমছে। গোখাদ্য হিসাবে খড়ের ব্যবহার কমছে। এই খড় কোথায় ফেলবে কৃষক? নিরুপায় হয়ে মাঠেই তাঁরা পুড়িয়ে দিচ্ছেন। এতে বায়ু দূষণ শুধু ঘটছে তা নয়, একই সাথে ক্ষতি হচ্ছে মাটিরও। মাটির অনেক অনুজীব মারা পড়ছে, মাটির উপাদানের ক্ষতির সম্ভাবনাও রয়েছে। এই সমস্যার পরিবেশবান্ধব সমাধান অবশ্যই অত্যন্ত জরুরি।
এই বর্জ্য-খড় পচিয়ে জৈব সার সৃষ্টি করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে বিজ্ঞানসম্মত ভাবে পচন ঘটানোর পরিকাঠামো গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কৃষিমন্ত্রকের একটা সদর্থক ভূমিকা দরকার। কিন্তু সরকারের সে উদ্যোগ নেই। বিকল্প চেষ্টাও নেই সরকারের। বিপরীতে কৃষককে অপরাধী সাব্যস্ত করে মারাত্মক শাস্তি ঘোষণা করা হয়েছে। ক্ষোভে ফুটছে কৃষকরা।
কৃষক সমাজের অন্নদাতা। কৃষির সমস্যা নিছক কৃষকের সমস্যা নয়, গোটা সমাজেরই সমস্যা। এই সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান সরকারকে করতে হবে। খড় বা নাড়া পোড়ানো জনিত দূষণ একটি নিরবচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, সাময়িক সমস্যা। এ জন্য কৃষককে ৫ বছরের জেল ও ১ কোটি টাকা জরিমানা ধার্য করা হল। অথচ বিভিন্ন শিল্পে যে নিরবচ্ছিন্ন দূষণ ঘটে চলেছে, যার ফলে পরিবেশের ও মানুষের যে ক্ষতি হচ্ছে –সরকার তাদের শাস্তি দিচ্ছে কোথায়? বিজেপি সরকার কতটা কৃষক বিরোধী এই ঘটনা তাও দেখিয়ে দেয়।
কৃষক বিরোধী এই আইন পাল্টানোর স্বীকারোক্তি আদায় করতে একমাস ধরে দিল্লির কনকনে ঠাণ্ডায় কৃষকদের রাজপথে থাকতে হচ্ছে। ৪০ জন কৃষকের জীবনের বিনিময়ে অবশেষে এই কালা অধ্যাদেশ বাতিল করার প্রতিশ্রুতি মিলল।