আমি একটি গ্রামীণ এলাকায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। কোনও পড়ুয়ার বাড়িতে সমবয়সী কোনও ছাত্রছাত্রী এলে তারা তাদেরও নিয়ে স্কুলে আসে। দিনকয়েক আগে একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির একটি ছাত্র, যে আমার এক ছাত্রের মাসতুতো ভাই, হঠাৎ আমাকে প্রশ্ন করল,‘স্যার, অন্য স্যার-ম্যামরা আজকে আসবে না?’ আমি জানালাম, আমরা দুজন শিক্ষকই এই স্কুলে। আর অন্য কোনও শিক্ষক নেই। অতিথি ছেলেটি বেশ অবাকই হল। সে বলল, ‘স্যার আমাদের স্কুল তো অনেকজন স্যার-ম্যাম, তোমরা দুজনেই সবাইকে পড়াও?’
আমি একসঙ্গে তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণিকে পড়াচ্ছি দেখেই হয়তো ছাত্রটির মনে এই প্রশ্নটা উঁকি মেরেছে। হ্যাঁ, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর অবস্থা এমনই। বেশিরভাগ স্কুল চলছে দুজন বা তিনজন শিক্ষক দিয়ে। কোনও কোনও স্কুল চলছে একজন শিক্ষক দিয়েও।
ছোট্ট একটি বাচ্চা বিস্মিত হয় এই দেখে যে প্রাক প্রাথমিক থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পাঁচটি ক্লাস দুজন শিক্ষক চালাচ্ছেন। অথচ সরকারের নেতা মন্ত্রীরা বিস্মিত হন না। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে কমপক্ষে পাঁচজন শিক্ষক দরকার। তবেই পঠনপাঠন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা সম্ভব। একজন শিক্ষক একসঙ্গে দুটি ক্লাস করালে খুব স্বাভাবিকভাবেই স্কুলের পঠনপাঠনের বরাদ্দ সময় একেকটি ক্লাসে অর্ধেক হয়ে যায়, যা পড়ুয়াদের প্রতি সরকারের ভয়াবহ বঞ্চনা। শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করার সামিল। এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করে সরকার জনগণের মধ্যে সরকারি শিক্ষার প্রতি অনীহা এবং বেসরকারি শিক্ষার প্রতি আকর্ষণ তৈরি করছে।
সরকারি শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষকের ভয়াবহ ঘাটতি সহ নানা পরিকাঠামোগত সমস্যাগুলি সমাধানের কথা না ভেবে সরকার পিপিপি মডেল এনে সরকারি শিক্ষাব্যবস্থাটাই বেসরকারি করতে চাইছে। এ যে দুয়ারে বিপদ!
আব্দুল জলিল সরকার
হলদিবাড়ি, কোচবিহার