করোনা অতিমারির আকস্মিক ধাক্কা এবং পুঁজিবাদী শোষণ বঞ্চনার ক্রমবর্ধমান প্রভাবে ভারতীয় মধ্যবিত্তের বড় অংশ দরিদ্রের স্তরে নেমে যাচ্ছে। এই বিপদ সঙ্কেত সম্প্রতি শোনা গেছে স্টেট ব্যাঙ্ক গোষ্ঠীর মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা সৌম্যকান্তি ঘোষের কথায়। এসবিআই কার্ডের মাধ্যমে কেনাকাটার তথ্য বিশ্লেষণ করে তিনি এ কথা বলেছেন। তাঁর ভাষায়, তেলের দাম বাড়ার ফলে বিভিন্ন দরকারি পণ্য ও পরিষেবার খরচ কমাতে বাধ্য হচ্ছেন ক্রেতারা। মুদিখানার পণ্য থেকে শুরু করে চিকিৎসার ওষুধ পর্যন্ত সবই রয়েছে এই তালিকায়।
ডেবিট কার্ডে যাঁরা কেনাকাটা করেন বা যাতায়াতের জন্য ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করেন, এঁদের একটা স্থায়ী কাজ এবং মোটা বেতন আছে। সরকারি বা বেসরকারি ক্ষেত্রে তারা কাজ করেন অথবা ভাল উপার্জনের ব্যবসা করেন। সমাজে এতদিন তাঁরা আর্থিক ভাবে সুরক্ষিত, এমনই ভাবা হত। কিন্তু করোনার জেরে লকডাউন ও তার বহু আগে থেকেই চলে আসা অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাবে এদেরও আর্থিক সুরক্ষা টাল খাচ্ছে। এদের অনেকেই কাজ হারিয়েছেন, অনেকের বেতন কমে গিয়েছে। এই অবস্থায় সব পণ্যের তীব্র মূল্যবৃদ্ধি সঙ্কটকে আরও পাকিয়ে তুলেছে। দেশের গরিব ও নিম্নবিত্ত মিলে জনসংখ্যার যে সিংহভাগ, তারা ইতিমধ্যেই সঙ্কটের তলদেশে নিমজ্জিত। এদের নিয়ে বুর্জোয়া অর্থনীতিবিদরা খুব একটা আলোচনা করেন না। কিন্তু যাদের ক্রয়ক্ষমতাকে ভিত্তি করে তাঁরা বাজারের হিসেব করেন সেই মধ্যবিত্তের অবস্থাও এখন টলোমলো।
মধ্যবিত্ত কাদের বলা হয়? একটা হিসেবে মাথাপিছু দৈনিক ২২০ থেকে ৪৪০ টাকা খরচ করতে সক্ষম যারা তারাই মধ্যবিত্ত। গড়ে একটি পরিবারে সদস্য সংখ্যা চার ধরে হিসাব করলে যে পরিবারের মাসিক ব্যয় ২৬,৪০০ থেকে ৫২,৮০০ টাকা সেই পরিবারগুলি মধ্যবিত্ত পরিবার। ভারতে জনসংখ্যার কত অংশ উচ্চবিত্ত? মাত্র ০.২১ শতাংশ। উচ্চমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত কত? মোট ১২ কোটি অর্থাৎ জনসংখ্যার ৮.৭ শতাংশ।
মার্কিন গবেষণা সংস্থা পিউ রিসার্চের সমীক্ষা ২০২০ সালে কোভিড অতিমারির প্রকোপে ৩ কোটি ২০ লক্ষ ভারতীয় মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্ত শ্রেণিতে নেমে এসেছে। পিউ-র অনুমান ২০১৯ থেকে ২০২০-র মধ্যে চার কোটি ভারতীয় মধ্যবিত্ত কমে গিয়েছে। ১২ কোটির মধ্যে ৪ কোটি কমে যাওয়া মানে ৩৩ শতাংশ হ্রাস। অর্থাৎ ভোগ্যপণ্যের বাজার ৩৩ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। সমীক্ষা অনুযায়ী ৯৩ শতাংশ জনগণই ভারতে গরিব ও নিম্নবিত্ত যারা প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যটুকু কিনতে অপারগ। ফলে ভোগ্যপণ্য কেনায় তাদের কাটছাঁট করতে হচ্ছে। এই তথ্য ভারতীয় পুঁজিবাদের গভীর মন্দাকেই দেখিয়ে দেয়।