সম্প্রতি সৌদি আরবের যুবরাজ মহম্মদ–বিন সলমন পাকিস্তান সফরে গিয়ে বহু প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন৷ সেই প্রসঙ্গে কমিউনিস্ট পার্টি অফ পাকিস্তানের (সিপিপি) পলিটব্যুরো ১৮ ফেব্রুয়ারি এক বিবৃতিতে বলেছে, সৌদির যুবরাজের পাকিস্তান সফর নিয়ে সংবাদমাধ্যমের বাড়াবাড়ি রকমের প্রচার দেখে মনে হতে পারে যেন তিনি পাকিস্তানের জন্য অচিন্তনীয় সব সৌভাগ্য এবং সমৃদ্ধি বয়ে এনেছেন৷ কিন্তু এ আশা দাঁড়িয়ে আছে ভ্রান্তি এবং বিভ্রমের ওপর৷ প্রচারের এই সমারোহ বিগত সরকারের আমলে চীনের রাষ্ট্রপতির সফর নিয়ে সমারোহকেই হুবহু মনে করিয়ে দেয়৷ কিন্তু মানুষ এই প্রশ্ন করবেই যে, এই রকম নানা চুক্তি কি আদৌ কোনও অগ্রগতি, অর্থনীতিতে সুস্থিতি নিয়ে আসে? কিংবা পাকিস্তানি টাকার দাম একটুও বাড়তে সাহায্য করে? এর উত্তর হল– না৷
সৌদিই হোক বা চীনই হোক তাদের কারও সাথে কোনও চুক্তি, মউ স্বাক্ষর কখনও দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি নিয়ে আসে না, জনগণের সমৃদ্ধিতে কোনও সাহায্য করে না৷ এ কাজ কিছুটাসম্ভব হত, সরকার এবং মিলিটারির বিপুল খরচ কমালে, নেতা–মন্ত্রীরা সরল জীবন যাপন করলে, দেশকে স্বনির্ভর করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হলে৷ দেশের সমৃদ্ধ কৃষিজমি রক্ষা করতে পারলে, শিল্পের দৈন্য কাটানোর ব্যবস্থা নিলে, তেল–গ্যাস সহ সমস্ত খনি জাতীয়করণের মতো কাজগুলি করলে তা জনগণের উন্নতি ও দেশের অগ্রগতিতে কাজে লাগত৷ কিন্তু এর বদলে সরকার দেশের সমস্ত সম্পদ জলের দরে বিদেশিদের হাতে বেচে দিচ্ছে৷ সৌদি যুবরাজের সফরের গোপন উদ্দেশ্যটি আসলে কী ছিল তা নিয়ে বিবৃতিতে গুরুতর আশঙ্কা ব্যক্ত করে সিপিপি বলেছে, সৌদি যুবরাজ যে ভাবে ইরানের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন, তার সাথে মিলিয়ে পাক–সৌদি বিদেশমন্ত্রীর যৌথ ঘোষণাপত্র দেখলেই তা পরিষ্কার বোঝা যায়৷
একদল পাকিস্তানি সেনাকে সৌদি আরবে মোতায়েন করা হয়েছে এবং পাকিস্তানের সেনা বাহিনীর প্রাক্তন প্রধান রাহীল শরিফ বর্তমানে সৌদি রাজপরিবারের হয়ে কাজ করছেন৷ সৌদি–মার্কিন চক্রের সাথে ইরানের দ্বন্দ্ব গভীর হলে ইরানের শাসক পরিবর্তনের কাজে পাকিস্তানের এই বাহিনীকে লাগানো হবে বলে অনেকেই মনে করেন৷ এই সংকটময় মুহূর্তে পাকিস্তানকে যাতে নতুন করে সাম্রাজ্যবাদীদের দস্যুবৃত্তির কাজে ব্যবহার করা না যায় তা নিশ্চিত করতে সে দেশের জনগণকে এগিয়ে আসার জন্য সিপিপি আবেদন জানিয়েছে৷ তারা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে কীভাবে আফগানিস্তানের গণ–বিপ্লবী সরকারকে উচ্ছেদ করার জঘন্য কাজে সাম্রাজ্যবাদীরা একসময় পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদী জেহাদিদের বেসক্যাম্পে পরিণত করেছিল৷ সৌদি আরব, তাদের পশ্চিমী দোসরদের অর্থানুকূল্য এবং পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও মার্কিন মদতেই এ জিনিস ঘটতে পেরেছে বলে সিপিপি দৃঢ় অভিমত জানিয়েছে৷
কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সিআরপিএফ জওয়ানদের উপর সন্ত্রাসবাদী হামলার তীব্র নিন্দা করে সিপিপি বলেছে– সন্ত্রাস এবং নিরীহ মানুষের হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে পাকিস্তান সরকারকে তার রাষ্ট্র–বহির্ভূত কর্মকর্তাদের উপর লাগাম পরাতে হবে৷ একই সাথে ভারত সরকারকেও সে দেশে ক্রমবর্ধমান ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে৷ তা না হলে ভারতও যদি আর একটি পাকিস্তানে পরিণত হয়– তা হবে অতি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা৷
সিপিপি বলেছে, কোনও সন্দেহ নেই যে, জইশ–ই–মহম্মদ আগামী নির্বাচনে বিজেপির ভোটব্যাঙ্ক শক্তিশালী করার কাজে দারুণ সাহায্য করেছে৷ পাকিস্তান–ভারত সীমান্তের দু’পারেই ধর্মের জিগির তোলা জঙ্গি মৌলবাদীরা পরস্পরের ভাল বন্ধু৷ একের বিপদে অন্যজন তাকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসে৷ (ই মেলে প্রাপ্ত)