কেন্দ্রের বিজেপি সরকার যে কোনও রকম বিরোধী কণ্ঠকে স্তব্ধ করতে যে ভাবে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে, দেশদ্রোহে অভিযুক্ত করে প্রতিবাদীদের জেলে ভরছে, গণতান্ত্রিক মানুষমাত্রেই তার তীব্র প্রতিবাদ করছেন। বিচার ব্যবস্থার অভ্যন্তরের ব্যক্তিরাও সরকারের অগণতান্ত্রিক এমন সব কাজের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। এবার প্রশাসনের অভ্যন্তরের ব্যক্তিরাও বিজেপি সরকারের অগণতান্ত্রিক এবং স্বৈরাচারী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেন। সম্প্রতি নয় জন প্রাক্তন আইপিএস অফিসার, যাঁরা সকলেই ‘কনস্টিটিউশনাল কনডাক্ট গ্রুপ-এর সদস্য এবং দীর্ঘদিন ধরে সরকারের বিশ্বস্ত আমলা হিসাবে নানা রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দফতরগুলিতে কাজ করে এসেছেন, তাঁরাও বিজেপি সরকারের স্বৈরাচারী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেন।
এ বছর ফেব্রুয়ারিতে দিল্লিতে বিজেপি নেতাদের নেতৃত্বে যে একতরফা দাঙ্গা সংগঠিত হয়েছিল, দিল্লি পুলিশ তার যে তদন্ত করছে তাকে একতরফা, রাজনৈতিক পক্ষপাতমূলক এবং সংখ্যাগুরুবাদের চরম নিদর্শন বলে দিল্লির পুলিশ কমিশনার এস এন শ্রীবাস্তবকে এক খোলা চিঠিতে অভিযোগ করেছেন এই পুলিশ অফিসারেরা। এই অফিসারেরা তাঁদের ক্ষোভ গোপন না করেই বলেছেন, দিল্লি পুলিশ যে ভাবে দিল্লি দাঙ্গার তদন্ত করছে তাতে ভারতীয় পুলিশের ইতিহাসে আজ এক দুর্ভাগ্যময় দিন। তাঁরা চিঠিতে বলেছেন, পুলিশের এই তদন্ত দাঙ্গার শিকার সংখ্যলঘু মানুষগুলির এবং তাঁদের পরিবারের কাছে বিচারকে প্রহসনে পরিণত করবে এবং সংখ্যাগুরু অংশের যে দুষ্কৃতীরা এই দাঙ্গায় জড়িত তারা এমন দুষ্কর্মের লাইসেন্স পেয়ে যাবে।
এই কনস্টিটিউশনাল গ্রুপের একজন অত্যন্ত সিনিয়র সদস্য জুলিও রিবেইরো, যিনি মুম্বই, গুজরাট এবং পাঞ্জাব পুলিশের প্রধান ছিলেন এবং রাষ্ট্র যাঁকে পদ্মভূষণ পুরস্কার দিয়েছে, তিনি আগেই দাঙ্গার এই তদন্ত সম্পর্কে শ্রীবাস্তবকে এক চিঠিতে লিখেছিলেন, কমিশনার যেন তাঁর কমান্ডের সদস্যদের স্মরণ করিয়ে দেন, তাঁরা তাঁদের চাকরিতে যে শপথ নিয়ে ঢুকেছিলেন, তা মেনে চলছেন কি না। তিনি চিঠিতে প্রশ্ন তুলেছেন, বিজেপির যে নেতারা দাঙ্গার আগে উস্কানিমূলক ভাষণ দিয়েছিলেন দাঙ্গার চার্জশিটে তাঁদের নাম নেই কেন?
উল্লেখ্য, দিল্লি দাঙ্গায় পুলিশ যে চার্জশিট পেশ করেছে তাতে যে ১৫ জনের নাম রয়েছে তাঁরা সকলেই নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে সামিল হয়েছিলেন। বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র, প্রবেশ ভার্মা এবং অর্থ প্রতিমন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর, যাঁরা প্রকাশ্যে এই দাঙ্গায় প্ররোচনা দিয়েছিলেন, তাঁদের কারও নামে পুলিশ এফআইআর পর্যন্ত করেনি। অথচ দিল্লি সংখ্যালঘু কমিশনের তথ্য সংগ্রহকারী দল এদের সকলকে দোষী সাব্যস্ত করেছে।
আইপিএস অফিসারেরা চিঠিতে বলেছেন, দিল্লি পুলিশ এই দাঙ্গায় যারা অপরাধী তাঁদের বক্তব্যের ভিত্তিতেই তদন্ত চালাচ্ছে, যা ন্যায্য তদন্তের পদ্ধতিকেই লঙ্ঘন করছে। বলেছেন, এটা অত্যন্ত দুঃখের যে, যাঁরা সিএএ-র বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন এবং প্রতিবাদে যোগ দিয়েছেন, তাঁদের এই মামলায় জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ প্রতিবাদ করাটা তাঁদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার।
তাঁরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এমন ধরনের পুলিশি তদন্ত জনসাধারণের মধ্যে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, স্বচ্ছতা এবং সংবিধান সম্পর্কেই সন্দেহ জাগিয়ে তুলবে। যা শেষপর্যন্ত সমাজের শৃঙ্খলাকেই নাড়িয়ে দেবে। তাই আমরা এই দাঙ্গা মামলার তদন্ত পুনরায় সততার সঙ্গে এবং পক্ষপাতশূন্য ভাবে করার জন্য অনুরোধ করছি, যাতে আক্রান্তরা এবং তাঁদের পরিবারগুলি আইনের শাসন মেনে সঠিক বিচার পায়।