১৬ জুলাই পশ্চিম মেদিনীপুরে বিজেপির জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বত্তৃণতায় জেলার লঙ্কা–চিনাবাদাম–পান চাষিদের সমস্যার কোনও কথাই শোনা গেল না৷ অথচ এটাইআজ ওই জেলার চাষিদের সমস্যা৷ প্রধানমন্ত্রীর সভার দিন তিনেক আগে পূর্ব মেদিনীপুরের এগরায় কৃষকরা এআইকেকেএমএস–এর নেতৃত্বে মহকুমা অফিসের সামনে রাস্তা অবরোধ করে দাবি জানান, লঙ্কা–চিনাবাদাম ও পানকে কৃষিপণ্য হিসাবে ঘোষণা করতে হবে, চাষিদের ব্যাঙ্কঋণ সহ শস্য বিমার সুযোগ দিতে হবে৷ এই ফসলগুলির ন্যূনতম সহায়কমূল্য ঘোষণা করে কিষানমান্ডিতে সরকারি উদ্যোগে কিনতে হবে, ফড়ে আড়তদারদের চক্র থেকে চাষিদের রক্ষা করতে মহকুমা ভিত্তিক টাস্ক্ ফোর্স গঠন করতে হবে, গড়তে হবে মহকুমা ভিত্তিক কিষানমান্ডি, ধানের সহায়ক মূল্য কমপক্ষে ২০০০ টাকা কুইন্টাল করতে হবে এবং সারা বছরই মান্ডি চালু রাখতে হবে৷
কৃষক নেতা জগদীশ সাউ ক্ষোভের সাথে বলেন, গত দু’ বছর ধরে মার্চ থেকে জুন লঙ্কা ৫–৭ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন চাষিরা৷ কেন্দ্র ও রাজ্য কোনও সরকারই চাষিদের লাভজনক দাম পাওয়ার ব্যবস্থা করেনি৷ তিনি বলেন, ২০১৭ সাল থেকে এআইকেকেএমএস–র লাগাতার আন্দোলনের ফলে রাজ্য কৃষিদপ্তর পানিপারুলে একটি লঙ্কা বিপণন কেন্দ্র করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং মহকুমা শাসকের উদ্যোগে একটি টাস্ক ফোর্স গঠিত হয়৷ উল্লেখ্য, জগদীশ সাউ নিজে এই টাস্ক্ ফোর্সের অন্যতম সদস্য৷ তিনি জানান, শাসকদলের স্থানীয় গ্রাম প্রধান পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির মদতে টাস্ক ফোর্সকে নিষ্ক্রিয় রেখেছেন এবং প্রায় দেড় কোটি টাকা চাষিদের না দিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা উধাও হয়ে গেছে৷ সরকারি উদ্যোগে ফসল কেনার ব্যবস্থা থাকলে এভাবে তারা চাষিদের ঠকাতে পারত না? তিনি দাবি জানান, এই টাকা উদ্ধারে সরকারকে হস্তক্ষেপ করতে হবে৷
এগরা মহকুমায় প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে চিনাবাদাম চাষ হয়৷ সরকারি উদ্যোগে কেনার ব্যবস্থা না থাকায় ফড়ে–পাইকারদের চক্রে পড়ে মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে তাদের৷ এক কুইন্টাল চিনাবাদামের উৎপাদন মূল্য সাড়ে চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা৷ চাষি বিক্রয় করে পাচ্ছেন মাত্র আড়াই হাজার টাকা৷ ফলে ক্ষুব্ধ চাষিরা এদিন কয়েক কুইন্টাল বাদাম পুড়িয়ে বিক্ষোভ দেখান৷
চাষিদের অভিযোগ, এখানেও বাদাম সিন্ডিকেট খুবই সক্রিয়৷ স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট গড়ে বাইরে থেকে ব্যবসায়ীদের আসতে দেয় না৷ জগদীশ সাউ জানান, দু’বছর আগে রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী বেচারাম মান্না এবং স্থানীয় বিধায়ক সমরেশ দাস বাদামের লাভজনক দাম দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও আজও তা কার্যকর হয়নি৷
এদিন চাষিরা প্রায় একঘন্টা পথ অবরোধ করেন৷ চিনাবাদাম চাষি শ্যামাপদ মাইতি, প্রদীপ মাইতি, লঙ্কা চাষি খগেন্দ্রনাথ দাস, মানস পণ্ডা, কৃষ্ণপদ করণ প্রমুখ জানান, কোনও সরকারই কৃষকের ন্যায্য দাম পাওয়ার ব্যবস্থা করেনি৷ এদিন বিক্ষোভের জেরে চিনাবাদাম ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কৃষক প্রতিনিধিদের বৈঠক ডাকেন এসডিও৷ কিষানমান্ডিতে বিপণন চালু করা এবং টাস্ক ফোর্স গঠন করে দাম নির্ধারণের প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়েছেন৷
(৭০ বর্ষ ৪৮ সংখ্যা ২০ জুলাই, ২০১৮)