তেভাগা আন্দোলনের কিংবদন্তী নেতা, দলের পূর্বতন জেলা কমিটির সদস্য কমরেড রবীন মণ্ডল বয়সের কারণে শহিদ স্মরণ সমাবেশে উপস্থিত হতে পারেননি। তাঁর প্রেরিত বার্তাটি সমাবেশে পাঠ করা হয়। এখানে তা প্রকাশ করা হল।
মাননীয় সভাপতি, সকল নেতৃবৃন্দ ও সংগ্রামী বন্ধুগণ,
শরীরে নানা রকমের রোগ থাবা বসিয়েছে। বয়সও যা হয়েছে তা আপনারা জানেন। বেশ কিছু বছর সে জন্য দলের কাজে বাইরে যেতে পারি না। তবুও বর্তমানে যারা জেলায় দলের কাজ পরিচালনার চেষ্টা চালাচ্ছে, তারা বুঝেশুনেই দু-একটা জায়গায় ডাকে। আমি যাই। কিন্তু আগের মতো যেতে পারি না বলে যে দুঃখ পাই সে আর কোন ভাষায় বলব! দল প্রতিষ্ঠা করার পথে এ জেলায় যত শহিদ, তাঁদের স্মরণসভায়, যত অত্যাচারিত-উৎপীড়িতদের সম্মাননা জ্ঞাপনের এই সভায় শারীরিক কারণে যেতে না পেরে আজ কষ্টটা বেশি হচ্ছে।
আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা, এ যুগের অন্যতম মার্কসবাদী চিন্তানায়ক ও দার্শনিক, সর্বহারার মহান নেতা কমরেড শিবদাস ঘোষের সান্নিধ্য যতটুকু পেয়েছি, হৃদয়ে কাঁপন ধরানো সে অনুভূতি আজও আমাকে ভাবায়-কাঁদায়। মনে তা উজ্জ্বল হয়ে আছে। তাই যে কমরেডকে যখনই কাছে পাই, তাদের বলি তাঁর সেইসব মূল্যবান শিক্ষাগুলো। আমার বোঝাটা যতটুকু, ততটুকুই বলি। কাজ করতে না পারার দুঃখ আমি অনেকটাই ভুলে যাই গণদাবী বা দলের বইপত্রগুলো হাতে এলে। একদিকে ক্রমাগতই রাজ্যের পর রাজ্যে সংগঠনের বিস্তার চলছে। চলছে সব সময়েই কোনও না কোনও আন্দোলন। ফলে কমরেডরা মার খাচ্ছেন, রক্ত ঝরাচ্ছেন, জেলে যাচ্ছেন, আগুনে ঘর পুড়ছে, মা-বোনেরা অত্যাচারিত, এমনকি শহিদ হচ্ছেন। তা সত্ত্বেও কমরেডরা ভয়ডরহীন ভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকছেন তাতে বেদনার সাথে গৌরব অনুভব করি।
অপর দিকে কমরেড শিবদাস ঘোষের প্রয়াণ বুকে শেল হেনে গেলেও, তাঁরই শিক্ষায় শ্রদ্ধেয় নেতা কমরেড নীহার মুখার্জী ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক কমরেড প্রভাস ঘোষের বক্তব্যগুলি ও সুদক্ষ দল পরিচালনা আমাকে মুগ্ধ করে রেখেছে। একদিন আমাকে একজন বলেছিল, দল ঠিক চলছে না। আমি ভাবি ও বলি সত্যটা ঠিক দেখতে পাচ্ছে না কেন! আজ মহান নেতার শিক্ষা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শোষিত শ্রেণিকে ভাবাচ্ছে, আলোড়িত করছে জীবনে এ জিনিস দেখে ও শুনে যাওয়ার আনন্দই আলাদা।
দল এগিয়ে চলেছে, চলবে। সাম্প্রদায়িক বিভাজনের অপচেষ্টা, মুখে পুঁজিবাদ খতমের কথা বলে শ্রমিক শ্রেণিকে বাস্তবে প্রতারণা, উন্নয়নের ধুয়ো তুলে শোষিত শ্রেণির শোষণ চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার চালাকির বিরুদ্ধে গণআন্দোলনের জোয়ার কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। হাতিয়ার হল গণকমিটি গঠন ও স্বেচ্ছাসেবক সংগ্রহ। কমরেডরা সে চেষ্টা চালিয়েও যাচ্ছেন।
১৮৪ জন শহিদের স্মরণসভায় ও দল-পরিচালিত গণআন্দোলনে অত্যাচারিত উৎপীড়িত হাজার হাজার কর্মী-অনুগামীর প্রতি সম্মাননা জ্ঞাপনের অনুষ্ঠানে সকলের প্রতি আমার সংগ্রামী অভিনন্দন লাল সেলাম জানাচ্ছি।
(গণদাবী-৭৩ বর্ষ ১৭ সংখ্যা_১৫ জানুয়ারি, ২০২১)