এস ইউ সি আই (সি)-র উত্তরপ্রদেশ রাজ্য সাংগঠনিক কমিটির সম্পাদক কমরেড পুষ্পেন্দ্র ৭ ডিসেম্বর রাতে প্রতাপগড়ে এক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। বয়স হয়েছিল ৫৭ বছর। এত কম বয়সে তাঁর আকস্মিক মৃত্যুতে উত্তরপ্রদেশে এস ইউ সি আই (সি) দল এবং বামপন্থী আন্দোলনের বড় ক্ষতি হল।
৯ ডিসেম্বর দলের প্রতাপগড় অফিসে রক্ত পতাকায় মোড়া তাঁর মরদেহ আনা হলে বহু নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ সেখানে সমবেত হয়ে তাঁকে শ্রদ্ধা জানান। দলের সাধারণ সম্পাদক কমরেড প্রভাস ঘোষের পক্ষে মাল্যদান করেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড অরুণ সিং। এ ছাড়াও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড স্বপন চ্যাটার্জী ও দলের রাজ্য নেতৃবৃন্দ এবং শ্রমিক, কৃষক, ছাত্র, যুব, মহিলা ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতারা মাল্যদান করে শ্রদ্ধা জানান। রক্তপতাকা হাতে নেতা-কর্মীরা মিছিল করে প্রয়াত রাজ্য সম্পাদকের মরদেহ শ্মশানে নিয়ে যান। সর্বহারার মহান নেতা কমরেড শিবদাস ঘোষের স্মরণে সঙ্গীত ও আন্তর্জাতিক সঙ্গীতের পর তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। কমরেড পুষ্পেন্দ্রর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে উত্তরপ্রদেশে দলের সমস্ত অফিসে সাত দিন রক্তপতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়, কমরেডরা কালো ব্যাজ ধারণ করেন।
উত্তরপ্রদেশে এস ইউ সি আই (সি)-র পূর্বতন সম্পাদক প্রয়াত কমরেড বি এন সিং সর্বহারার মহান নেতা কমরেড শিবদাস ঘোষের চিন্তাধারার ভিত্তিতে হাতেগোনা যে কয়েকজনকে নিয়ে ওই রাজ্যে দলের কাজ শুরু করেছিলেন তাঁদের মধ্যে ছিলেন কমরেড পুষ্পেন্দ্রর বাবা কমরেড চক্রবর্তী বিশ্বকর্মা। তিনি তাঁর একমাত্র পুত্রকে দলের আদর্শ গ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ করেন।
কমরেড পুষ্পেন্দ্র ছাত্রজীবনে এআইডিএসও-র কাজ শুরু করেন। ছাত্র সংগঠনে তিনি উত্তরপ্রদেশ রাজ্য সম্পাদক এবং সর্বভারতীয় কমিটির সদস্য হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। দলের সর্বক্ষণের কর্মীর জীবন ছেড়ে পিছন ফিরে তাকানোর কথা তিনি ভাবেননি। মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদ-শিবদাস ঘোষ চিন্তাধারার অনুশীলন ও উন্নত রুচি-সংস্কৃতি আয়ত্ত করার সংগ্রাম এবং বিভিন্ন ধরনের দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে খুব কম বয়সেই দলের গুরুত্বপূর্ণ সংগঠক ও নেতায় পরিণত হন তিনি। ২০১৭-তে কমরেড পুষ্পেন্দ্র দলের উত্তরপ্রদেশ রাজ্য সম্পাদক নির্বাচিত হন। মধুর স্বভাবের দ্বারা সবাইকে তিনি আপন করে নিতে পারতেন। পার্টি সংগঠনের যে কোনও সঙ্কট মোকাবিলায় তিনি তাঁর সর্বশক্তি দিয়ে লড়েছেন। চেষ্টা করেছেন দলকে সমস্যা থেকে রক্ষা করে যেতে। রাজ্যের গণআন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা যেমন নিয়েছেন তেমনই নিজের এলাকায় নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে, জাতপাত-সাম্প্রদায়িক বিভেদ ও এই নিয়ে হত্যার রাজনীতির বিরুদ্ধে তিনি অত্যন্ত শক্তিশালী আন্দোলনগড়ে তোলেন। কমরেড পুষ্পেন্দ্র নিজের পরিবারের মধ্যেও দলের উন্নত আদর্শ ও সংস্কৃতি নিয়ে গেছেন। তাঁর স্ত্রী ও সন্তানরাও দলের কাজে যুক্ত হয়েছেন। তাঁর পুত্র দলের একজন সর্বক্ষণের কর্মী ও এআইডিএসও-র সর্বভারতীয় কাউন্সিল সদস্য।
কমরেড পুষ্পেন্দ্রর মৃত্যুতে দল একনির্ভরযোগ্য নেতাকে হারাল। এইরকম একজন বিপ্লবী কর্মীর আকস্মিক প্রয়াণে সৃষ্ট শূন্যতা মেটানো খুব সহজ নয়। তবে এ কথা নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, কমরেড শিবদাস ঘোষের শিক্ষার ভিত্তিতে উত্তরপ্রদেশে পার্টির নেতা ও কর্মীরা শোককে শক্তিতে পরিণত করবেন এবং কমরেড পুষ্পেন্দ্রর অভাব পূরণে দলের আদর্শ বুকে নিয়ে এক-মানুষের মতো দাঁড়াবেন, আরও বেশি দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেবেন। এটাই হবে কমরেড পুষ্পেন্দ্রর প্রতি যথার্থ শ্রদ্ধার্ঘ্য।
কমরেড পুষ্পেন্দ্র লাল সেলাম