তোমাদের দেখে সাহস পাচ্ছি

২১-এর মিছিলের প্রস্তুতির কাজ করতে করতেই স্বপ্ন দেখছিলাম– প্রায় পঞ্চাশ হাজার মানুষের মিছিল হেঁটে যাবে। গ্রামগঞ্জ থেকে হাজার হাজার মা, বোন, ছাত্র ভোররাতে, কেউ বা আগের দিন ট্রেন ধরে কলকাতায় আসবে, কৃষক জমিতে ফসল ফেলে, শ্রমিক কাজ বন্ধ রেখে আসবে মিছিলে। হাজার হাজার মুষ্টিবদ্ধ হাত স্লোগান তুলবে– দাবি করবে অভয়ার বিচার চেয়ে। লাল টুকটুকে পতাকায় ছেয়ে যাবে কলকাতা, ‘মিছিল নগরী’ একদৃষ্টিতে চেয়ে থাকবে সেই মিছিলের দিকে। মনে পড়বে তার অতীত গৌরবের কথা। যে লাল পতাকার মিছিলে মিশে আছে সংগ্রামের অনেক ইতিহাস।

মালিকদের সংবাদপত্রগুলি শ্রমিক-কৃষকের মিছিল নিয়ে এতদিন লিখত— ‘… মিছিলে স্তব্ধ শহরের রাস্তায় প্রবল যানজটে নাকাল মানুষ’। জানতাম, এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটবে না। কেউ বা মিছিলের সামনের একফালি ট্যাবলোর ছবি দিয়ে আড়াল করতে চাইবে জনসমুদ্রের মহামিছিলকে। কোথাও জায়গা পাবে কলকাতা সংস্করণের এক কোণে ছোট্ট করে। কেউ ‘নাগরিক মিছিল’ বলে উল্লেখ করবে, কিন্তু দলের নাম মনে পড়বে না।আর সাধারণ মানুষ সংবাদপত্রগুলির এই ভূমিকা দেখে হতবাক হবেন। অনেকে, যাঁরা হয়তো মিছিলে আসতে পারেননি, যাঁরা দূর থেকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মিছিল সুন্দর হোক, যাঁরা দু’হাত ভরে তুলে দিয়েছেন অর্থ, তাঁরা শুক্রবারের মুখ চেয়ে থাকবেন—কবে ‘গণদাবী’ আসবে। এদেরই একজন হয়তো সেই দিদিটি, শিয়ালদহ থেকে ব্যারাকপুরগামী ট্রেনে একজনকে গণদাবী দিতেই যিনি তিনটি টাকা বাড়িয়ে দিয়ে বললেন—আমাকেও একটি দাও।

কাগজ হাতে পেয়ে ‘এ মিছিল প্রেরণার, এ মিছিল আস্থার’ হেডিংয়ের তলায় জনসমুদ্র দেখে নিয়ে আবেগঘন দৃষ্টিতে বলে গেলেন ‘লড়াই আন্দোলন করেও তো কিছুই পেলাম না, কিছু হবে কিনা জানিও না। কিন্তু তোমরা এখনও লড়ে যাচ্ছ দেখে সাহস পাচ্ছি। থেমে যেও না তোমরা।’

কানু মণ্ডল

রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়