পুরুলিয়া শহরে একদা সিপিএমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা ছিলেন ভদ্রলোক। বেশ কিছুদিন তিনি আর দলীয় কাজকর্মে থাকছিলেন না। এবারের নির্বাচনে জনে জনে ডেকে বলেছেন, বামপন্থাকে চাও তো এসইউসি-কে ভোটটা দিও। ভোটের আগে প্রচারের একদম শেষ লগ্নে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন এস ইউ সি আই (সি)-র এক সংগঠক। যন্ত্রণাবিদ্ধ সেই বামপন্থী মানুষটি বললেন, যতবার তোমাদের প্রচার মিছিল আমার বাড়ির সামনে দিয়ে গেছে, আমি নিজে নিজের কানটা মুলেছি। ক্ষমতার দম্ভে তোমাদের কর্মীদের ওপর আমরা একসময় কী না করেছি!
যখন যুক্তফ্রন্ট ভাঙল (গত শতকের সাতের দশকে) ছেড়ে বেরিয়ে এল সেদিন এসইউসি-র কথায় কান দিইনি। আজ লাল ঝান্ডা ফেলে কংগ্রেসের পিছু পিছু হাঁটতে হাঁটতে সে পাপের প্রায়শ্চিত্ত করছে সিপিএম। বলছিলেন, আমার দলের এক নেতা বোঝাতে এসেছিলেন, বিশেষ পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের হাত ধরতে হয়েছে। আমি বললাম, নতুন করে কোন বিশেষ পরিস্থিতিটা তৈরি হল বোঝান। তিনি নিরুত্তর। বলেছি, নিজের বিবেককেও ঠকাচ্ছেন কেন? সৎ হলে বলুন, দুটো চারটে সিট পাওয়ার আশায় আপস করেছি। এস ইউ সি আই আজ দেশে ১৫১টা সিটে লড়বার হিম্মত রাখে। ওরা একটা সিটেও যদি না জেতে, তবু মাথা উঁচু করে লাল ঝান্ডাটা তুলে রাখার গর্বে পথ চলবে। আর আপনারা কী করবেন? বামপন্থী কর্মীদের হত্যাকারী কংগ্রেসের দয়ায় খুদকুঁড়োর মতো একটা দুটো সিট যদি ভাগ্যে থাকে তাই নিয়ে আনন্দ করবেন! এসইউসিআই(সি) সংগঠককে তিনি পরম স্নেহে বলেছেন, তোমাদের ভোট যদি এক শতাংশও বাড়ে, জানবে দেশে বামপন্থী রাজনীতির শক্তি বাড়লো। তোমরা না থাকলে বামপন্থী রাজনীতিই এ বারের ভোটে অনুপস্থিত থাকত।
পুরুলিয়া শহরেরই আর এক প্রবীণ সিপিএম কর্মীকে হাত চিহ্নে ভোট দেওয়ার জন্য বোঝাতে গিয়েছিলেন দলেরই এক শিক্ষক কর্মী। তিনি গভীর ক্ষোভের সঙ্গে বলেছেন, যে দরিদ্র পরিবার থেকে তুমি উঠে এসেছ তাদের সাথে কংগ্রেস নেতাদের আচরণ ভুলে গেলে? বামপন্থী রাজনীতি করে পড়াশুনা করেছো, এখন শিক্ষক হয়েছো কিন্তু বামপন্থী আদর্শটা বোঝারই চেষ্টা করোনি। নেতারাও বোঝাননি। আজ তাই পার্টির এই বামপন্থা বিরোধী স্ট্যান্ড যে কত ক্ষতিকর বুঝতেও পারছ না। বললেন, আমি কমিউনিস্টদেরই ভোট দেব, তাই আমার ভোট টর্চলাইটেই পড়বে। পরিবারের বাকিদেরও বলেছি, এটাই সঠিক বামপন্থী পার্টি, তারাও যেন ভেবে দেখে।