তেলে কর ও সেস বাড়িয়ে জনগণের ওপর বোঝা চাপাল বিজেপি সরকার

দেশের কোটি কোটি সাধারণ মানুষের জীবন–জীবিকা আজ বিপন্ন৷ ভয়ঙ্কর মূল্যবৃদ্ধির আক্রমণে জনজীবন বিধ্বস্ত৷ এইরকম একটা সংকটজনক পরিস্থিতিতেও কেন্দ্রের বিজেপি সরকার সাম্প্রতিক বাজেটে ফের পেট্রল–ডিজেলের উপর ট্যাক্স ও সেস চাপাল৷ এর ফলে দু’টিতেই লিটারে প্রায় আড়াই টাকা করে দামবৃদ্ধি হল৷ এর অনিবার্য পরিণতিতে সাধারণ মানুষের ঘাড়ে চাপল বাড়তি খরচের বোঝা৷

বর্তমানে পেট্রল–ডিজেলের দাম নির্ধারিত হয় আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দামের ওপর ভিত্তি করে৷ তেল উৎপাদনকারী দেশগুলির সংগঠন ‘ওপেক’–এর তেল–নীতির পরিবর্তন, আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে প্রচুর তেল উত্তোলন সহ বেশ কয়েকটি কারণে ২০১৬ থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বার বার কমছে৷ এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে দেশের বাজারেও তেলের দাম কমানো যেত৷ জনস্বার্থের কথা বিবেচনা করে কেন্দ্রীয় সরকার যদি দেশের বাজারেও তেলের দাম কমিয়ে রাখত, তার সুফল পেত সাধারণ মানুষ৷ কারণ, পরিবহণের প্রধান উপকরণ হওয়ায় পেট্রল–ডিজেলের দামের উপর বাকি সমস্ত পণ্যের দাম অনেকটাই নির্ভর করে৷ অথচ সরকার তা করল না৷ দেখা গেল, দাম কমানো দূরে থাক, ক্রমাগত কর ও সেস বৃদ্ধি করে তেলের দাম বাড়িয়ে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার, যার বোঝা সম্পূর্ণ রূপে বইতে হচ্ছে খেটে–খাওয়া সাধারণ মানুষকে৷ এও দেখা যাচ্ছে, আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর ভিত্তি করে তেলের দাম নির্ধারণের পরিবর্তিত নিয়মের যাবতীয় সুবিধাগুলি একচেটিয়া ভাবে শুষে নিচ্ছে তেলের বৃহৎ ব্যবসায়ী–ডিলার চক্র৷ অবশ্যই এই চক্রের হিস্যাদার হিসাবে থাকে ভোটসর্বস্ব রাজনৈতিক দলের নেতা–মন্ত্রীরা৷

এক দিকে, চাকরি–বাকরি নেই, সরকারি ক্ষেত্রেও লক্ষ লক্ষ পদ বছরের পর বছর খালি পড়ে রয়েছে৷ অন্য দিকে, চাষি ফসলের ন্যায্য দাম পাচ্ছে না, শ্রমিক ছাঁটাই হয়ে যাচ্ছে৷ এর উপর লাগাতার জিনিসপত্রের দাম বাড়তে থাকলে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবেন সেই সব অগণিত সাধারণ মানুষ যারা দিন আনে দিন খায়? বিজেপি ও সংঘ পরিবারের ফরমান মেনে শুধু রামনামের ধ্বনি তুললেই কি দু’বেলা দু’মুঠো খেয়ে পরে বাঁচতে পারবেন দেশের এই সিংহভাগ জনতা?

২০১৪ সালে দেশের কেন্দ্রীয় ক্ষমতায় যাওয়ার পর থেকে এই নিয়ে মোট দশ বার পেট্রোল–ডিজেলের উপর ট্যাক্স ও সেস চাপালো বিজেপি সরকার৷ এই করবৃদ্ধির অজুহাত হিসেবে বিজেপি সরকার বলেছে, এর ফলে সরকারি কোষাগারে বাড়তি আঠাশ হাজার কোটি টাকা আসবে৷ কিন্তু কী হবে সেই বাড়তি টাকা দিয়ে? সেই টাকা দেশের নিরন্ন–বুভুক্ষু মানুষের কাজে কীভাবে ব্যবহূত হবে? তার কোনও ব্যাখ্যা সরকার দেয়নি৷ বাস্তবে তাদের কোনও ব্যাখ্যা নেইও৷ দেশের ভাল করার কথা বলে পুঁজিপতিদের ধামাধরা সরকারগুলি আদতে কাদের ভাল করে, দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় সে কথা বুঝতে বাকি নেই সংখ্যাগরিষ্ঠ খেটে–খাওয়া মানুষের৷ কোটি কোটি জনতার রক্ত শুষে সরকারের কোষাগারে যে অর্থ সঞ্চিত হয় তা তো নানা পথে শেষপর্যন্ত চলে যায় দেশি–বিদেশি কর্পোরেট মালিকদের ঘরেই– করছাড় আর ব্যাঙ্কের শোধ না হওয়া বিপুল ঋণ মেটাতে গরিব–মধ্যবিত্তকে সেই হা–হুতাশ করেই কাটাতে হয়, আর অপেক্ষা করতে হয় ‘দেশপ্রেমিক’দের তৈরি করা আবার একটা নতুন ফাঁদে পড়ার জন্য৷ জনগণের সাথে ভোটবাজ রাজনৈতিক দলগুলির দীর্ঘ দিনের এই জালিয়াতি বন্ধ হতে পারে, মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে ধর্ম–বর্ণ নির্বিশেষে গড়ে ওঠা ঐক্যবদ্ধ ও লাগাতার আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করার মধ্য দিয়ে৷

(গণদাবী : ৭১ বর্ষ ৪৯ সংখ্যা)