সরকারগুলি যে কেবল আন্দোলনেরই ভাষা বোঝে এবং সঠিক পথে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন পরিচালনা করলে যে জয়লাভ করা যায়, তা আবারও প্রমাণ করল জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন৷
এন আর এস মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে জুনিয়র ডাক্তারদের উপর রোগীর আত্মীয় ও দুষ্কৃতীদের আক্রমণের প্রতিবাদে ও নিরাপত্তার দাবিতে তাঁদের আন্দোলন অবশেষে জয়যুক্ত হল৷ সরকার তাঁদের দাবিগুলি মেনে নিতে বাধ্য হল৷
শুরুতে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর আচরণ ছিল স্বৈরাচারী শাসকদের মতোই৷ আন্দোলনকারী ডাক্তারদের দাবি মেনে তিনি এন আর এস মেডিকেল কলেজে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে ও গুরুতর আহত পরিবহ মুখোপাধ্যায়কে দেখতে যেতে অস্বীকার করেন৷ বলেন, আন্দোলনে বহিরাগতরা আছে, চার ঘন্টার মধ্যে কাজে যোগ না দিলে হস্টেল ছেড়ে দিতে হবে৷ তিনি এসমা জারি করা হবে বলে হুমকিও দেন৷ জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের পাশে সিনিয়র ডাক্তাররাও দাঁড়ান৷ বিভিন্ন হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজের সিনিয়র ডাক্তাররা গণ ইস্তফা দিতে শুরু করেন৷ বুদ্ধিজীবীরাও আন্দোলনের সমর্থনে জুনিয়র ডাক্তারদের পাশে দাঁড়ান, বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনও তাঁদের আন্দোলনের প্রতি সহমর্মিতা জানান৷
এসবের চাপে শেষপর্যন্ত মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর সুর নরম হতে থাকে এবং অবশেষে তিনি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে সম্মত হন৷ আন্দোলনকারীরাও কিছুটা নমনীয় হন৷ আলোচনাসভায় তিনি প্রায় সব দাবিই মেনে নেন ও আন্দোলনের জয় হয়৷ এরপর রাজ্যের সিপিএমের পরিষদীয় দলের নেতা বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী অনেক আগেই সমস্যা মিটিয়ে দিতে পারতেন৷ তিনি বোধহয় ভুলে গেছেন জ্যোতি বসু যখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তখন ১৯৮৩ সালে একবার ২১ দিন এবং ১৯৯১ সালে ৯ দিন জুনিয়র ডাক্তাররা কর্মবিরতি পালন করে হাসপাতালের স্বাভাবিক পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছিলেন৷ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন যথাক্রমে অম্বরীশ মুখোপাধ্যায় ও প্রশান্ত শূর৷ তাঁদের মন্তব্য পরিস্থিতিকে আরও ঘোরালো করে তুলেছিল৷ অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে জুনিয়র ডাক্তারদের ন্যায্য দাবিতে বার বার আন্দোলন করতে হচ্ছে আর সরকারগুলি, তা যে রঙেরই হোক না কেন তাদের ভূমিকাও এক৷ তাই দাবি আদায়ের একমাত্র রাস্তা সঠিক পথে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন৷
ডঃ প্রদীপকুমার দত্ত
অবসরপ্রাপ্ত প্রধান, পদার্থবিদ্যা বিভাগ, প্রেসিডেন্সি কলেজ, কলকাতা৷