নাবালিকা পরিচারিকাকে ধর্ষণ ও খুনের অপরাধে তমলুকের বাসিন্দা প্রণব রায়কে ১৯ এপ্রিল মৃত্যুদণ্ড দিলেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা দায়রা বিচারক সঞ্চিতা সরকার৷ রায় ঘোষণার পর নিহত নাবালিকা পূজার বাবা অনন্ত ভূঞ্যা এবং অভিযুক্তের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আন্দোলন করা মহিলা সাস্কৃতিক সংগঠন, সারা বাংলা পরিচারিকা সমিতি, নারী নিগ্রহ বিরোধী কমিটি, সিপিডিআরএস তমলুক শহরে মিছিল বের করে৷ রাস্তার দুধারে মানুষেরা হাত তুলে এই জয়কে অভিনন্দন জানান৷
ওই নাবালিকার বাবা দিনমজুর ও মা পরিচারিকার কাজ করেন৷ দরিদ্র বাবা–মা পেটপুরে খাওয়া ও সম্মানের সঙ্গে বাঁচার আশায় অনন্যোপায় হয়ে মেয়ে পূজাকে শিক্ষক প্রণব রায়ের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করতে পাঠান৷ ২০১২ সালের ২৩ মে তমলুক জেলা হাসপাতালে পূজার মৃত্যু হয়৷ দ্রুত ময়না তদন্ত করে দেহ পুড়িয়ে ফেলা হয়৷ এই কাজে প্রণবকে সাহায্য করে শহরের শাসক দলের এক প্রভাবশালী নেতা ও তাঁর বাহিনী৷ রিপোর্টে যাতে ‘বিষ খেয়ে আত্মহত্যা’ লেখা হয় তার জন্য হাসপাতালের ময়না তদন্তকারী চিকিৎসকের উপর চাপ সৃষ্টি করা হয়৷ এমনকী এক লক্ষ টাকার বিনিময়ে অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য মৃতার বাবার উপর চাপ দেওয়া হয়৷ কিন্তু মৃতার পিতা ওই অপরাধীর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ জানান৷ ময়না তদন্তের রিপোর্টে বারবার ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ প্রমাণিত হয়৷ এমএসএস সহ গণসংগঠনগুলি প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে ডেপুটেশন দিয়ে ও বিক্ষোভ দেখিয়ে সঠিক তদন্ত ও অপরাধীর কঠোর শাস্তি দাবি করে৷
সরকারি আইনজীবী নবকুমার সরকার ও আবদুল মোহিত প্রণবের ফাঁসির পক্ষে সওয়াল করেন৷ নবকুমার বাবু বলেন, সমাজের মেরুদণ্ড তৈরির কারিগরদের প্রতিনিধি হয়েও সে নাবালিকাকে লাগাতার ধর্ষণ করে পৈশাচিকভাবে খুন করেছে৷ রক্ষক হয়ে ভক্ষকের কাজ করা এর কাছে সমাজ কী শিক্ষা পাবে? তিনি বলেন, এই ধরনের ঘৃণ্য অপরাধীদের মৃত্যুদণ্ডই যোগ্য শাস্তি৷ বিচারের রায় মৃত্যুদণ্ডের রায় তমলুক শহরে প্রবল আলোড়ন সৃষ্টি করে৷ সাধারণ মানুষ বলতে থাকে, টাকার জোরে সব দলের নেতাদের কিনতে পারলেও এসইউসিআই (সি) দলের নেতাদের কিনতে পারল না৷ ন্যায় বিচার অর্জিত হওয়ায় তমলুকবাসী খুশি৷ মৃতার বাবা চোখের জলে বলেন, আর কোনও মেয়ের জীবনে যেন আমার মেয়ের মতো ঘটনা না ঘটে৷ এমএসএস–এর রাজ্য সহসভাপতি অনিতা মাইতি বলেন, এই জয় জনগণের৷ রাজ্য সম্পাদিকা সুজাতা ব্যানার্জী বলেন, উন্নাও, কাঠুয়া, সুরাটের মতো অসংখ্য ন্যক্কারজনক ঘটনায় মানুষ যখন দিশেহারা তখন এই রায় তাদের ভরসা যোগাবে এবং আন্দোলনের প্রতি আস্থাশীল করে তুলবে৷ নারীনিগ্রহ বিরোধী কমিটি এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে৷
(৭০ বর্ষ ৩৬ সংখ্যা ২৭ এপ্রিল, ২০১৮)