ডেঙ্গুতে এ রাজ্যে মৃতের সংখ্যা ইতিমধ্যেই শতাধিক৷ মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিদিন বেড়েই চলেছে৷ সার্টিফিকেটে ডেঙ্গুতে মৃত্যু লেখার ক্ষেত্রে সরকারি নিষেধাজ্ঞা না থাকলে সংখ্যাটা যে আরও বাড়ত তাতে কোনও সন্দেহ নেই৷
এই মৃত্যু কি অনিবার্য ছিল? ডেঙ্গু কি প্রতিরোধযোগ্য নয়? ডেঙ্গু তো কয়েক দশক আগে ইতিহাস হয়ে গিয়েছিল৷ তা আবার জাঁকিয়ে বসল কী করে? এখানেই রয়েছে সরকারের ভূমিকা৷
কী করতে পারত সরকার? ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের জন্য সারা বছর ধরেই যে কাজটি করতে হয় তা হল, মশা মারার ব্যবস্থা করা, জঞ্জাল সাফাই করা, যেখানে সেখানে জল জমতে না দেওয়া, যাতে সে জলে মশা ডিম পাড়তে না পারে৷ এই কাজটি করার কথা পুরসভাগুলির৷ এ জন্য জঞ্জাল সাফাই নামে একটি বিভাগও আছে৷ সরকার তাকে পুরোমাত্রায় কাজে লাগাতে পারত৷ যে সমস্ত ক্লাবগুলিকে সরকার টাকা দেয়, তাদের কাছে আহ্বান জানাতে পারত জঞ্জাল সাফাইয়ের ক্ষেত্রে ভূমিকা নেওয়ার জন্য৷ দলীয় শক্তিকে কাজে লাগিয়েও জঞ্জাল সাফাইয়ের ক্ষেত্রে গণউদ্যোগ তৈরি করতে পারত৷ কিন্তু সরকার এ পথে না গিয়ে শুরু থেকেই ডেঙ্গুকে গুরুত্বহীন করে দেখেছে এবং মৃতের সংখ্যা চাপা দেওয়ার ক্ষেত্রে অতিমাত্রায় সক্রিয় থেকেছে৷
দ্বিতীয় যে কাজটি করার দরকার ছিল তা হল ডেঙ্গু মোকাবিলায় পর্যাপ্ত পরিকাঠামো গড়ে তোলা৷ এই পরিকাঠামোর মধ্যে রয়েছে প্রতিটি ব্লকের প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে শুরু করে সমস্ত হাসপাতালে ডেঙ্গু নির্ণয়ের ল্যাবরেটরির ব্যবস্থা করা, সেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণে আই জি এম কিটের সরবরাহ বজায় রাখা, পিসিভি, এমসিভি টেস্টের ব্যবস্থা রাখা, দরকার যোগ্য টেকনিশিয়ান নিয়োগ, দরকার পতঙ্গ নিয়ে নিয়মিত গবেষণা৷ এই সমস্ত ক্ষেত্রে রয়েছে রাজ্য সরকারের গুরুতর গাফিলতি৷ রয়েছে ডাক্তার–নার্স–অন্যান্য স্টাফের স্বল্পতা৷ ফলে পরিকাঠামোর এই ঘাটতির কারণে চিকিৎসার ক্ষেত্রেও রয়েছে যথেষ্ট ঘাটতি৷
সরকার চিকিৎসা ব্যবস্থাকে উন্নত করার জন্য প্রয়োজনীয় এই কাজগুলি না করে সারা বছরই ব্যস্ত থাকছে খেলায়–মেলায়–উৎসবে-কার্নিভ্যালে৷ এই সুযোগে পতঙ্গরা শক্তি সঞ্চয় করে ফিরে এসেছে৷ মশা বাহিত রোগ জাঁকিয়ে বসছে৷ সরকার এতগুলি মানুষের মৃত্যুর দায় তাই এড়াতে পারে না৷
শীত একটু একটু করে শুরু হয়েছে৷ তাপমাত্রা আরও নামলে স্বাভাবিকভাবেই ডেঙ্গুর প্রকোপ সাময়িক ভাবে কমবে৷ কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন মশা নিবারণ একটি বর্ষব্যাপী কর্মসূচি৷ ফলে এ সময়ও সরকারকে নিষ্ক্রিয় থাকলে চলবে না৷ এস ইউ সি আই (সি)–র দাবি, অবিলম্বে ডেঙ্গু মোকাবিলার পরিকাঠামো গড়ে তুলতে হবে৷