ডাক্তারির ভর্তি পরীক্ষায় কেলেঙ্কারি দুর্নীতি দিয়ে শুরু নতুন মোদি সরকারের

 

কর্ণাটক, ১০ জুন

এমবিবিএস কোর্সে ভর্তির জন্য সারা দেশে যে নিট-ইউজি পরীক্ষা নিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত এনটিএ (ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি), তারই ফল প্রকাশিত হয়েছে ৪ জুন। ফলাফল প্রকাশ হওয়া মাত্র চূড়ান্ত বিতর্ক শুরু হয়েছে। নম্বর দেওয়া ও ফলাফল ঘোষণার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। নিট-ইউজি পরীক্ষার নিয়মাবলিতে যে ভাবে নম্বর দেওয়ার পদ্ধতি উল্লেখ করা হয়েছিল, সেই অনুসারেই বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত নম্বরে ব্যাপক অসঙ্গতি দেখা দিচ্ছে। এই অসঙ্গতিকে ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য এনটিএ কিছু ছাত্রকে গ্রেস মার্ক দেওয়ার একটি ছেঁদো যুক্তি খাড়া করেছে।

কিন্তু কিসের ভিত্তিতে গ্রেস মার্ক দেওয়া হল সেটা সম্পূর্ণ অস্পষ্ট। এর ফলস্বরূপ দেখা যাচ্ছে, ৬৭ জন পরীক্ষার্থী একশো শতাংশ নম্বর পেয়ে শীর্ষস্থান অধিকার করেছে যা নিট ইউজি-র মতো কঠিন পরীক্ষায় একেবারেই অস্বাভাবিক। ফলে পরীক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা এনটিএ এবং তাদের নেওয়া পরীক্ষা-পদ্ধতির বিশ্বাসযোগ্যতা ও সততা আজ প্রশ্ন চিহ্নের সম্মুখীন। এরকমও দেখা গেছে যে, একই কেন্দ্রের অনেকজন পরীক্ষার্থীর প্রাপ্ত নম্বর সমান।

পরীক্ষার আগেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ারও অভিযোগ উঠেছিল। যদিও তার কোনও তদন্ত হয়নি এবং প্রশ্ন ফাঁস প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি। ইতিমধ্যে এনটিএ-র চূড়ান্ত দুর্নীতির কারণে অপ্রত্যাশিত খারাপ ফল হওয়ার কারণে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আত্মহত্যার মতো দুঃখজনক ঘটনা ঘটছে। উল্লেখ্য, নিট-ইউজির ফল প্রকাশের দিন নির্ধারিত ছিল ১৪ জুন। অথচ লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার দিনেই তাড়াহুড়ো করে এর ফল প্রকাশ করা হল। অনেকেরই প্রশ্ন ভোটের ফল বেরনোর ডামাডোলে পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে কেলেঙ্কারি চাপা পড়ে যাবে, এই আশাতেই কি প্রকাশের দিন বদল করা হয়েছিল? ঘটনাগুলি থেকে এটা স্পষ্ট যে নিট-ইউজি ২০২৪ ফলাফলের ঘোষণায় একটি বিরাট কেলেঙ্কারি হয়েছে।

বিজেপি সরকার সমস্ত রকমের গণতান্ত্রিক রীতিনীতি উপেক্ষা করে একসময় দুর্নীতি দূর করার ভাঁওতা দিয়ে দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত রাজ্য-ভিত্তিক প্রবেশিকা পরীক্ষা (জেইই, সিইটি, ইএমসিইটি, ইত্যাদি) বাতিল করে সারা দেশে অভিন্ন নিট-ইউজি পরীক্ষা একতরফাভাবে চাপিয়ে দিয়েছিল। এর প্রতিবাদ করে এআইডিএসও-র পক্ষ থেকে সুস্পষ্টভাবে সতর্ক করা হয়েছিল, দুর্নীতিবাজদের কঠোর শাস্তি এবং দুর্নীতির কারণ নির্মূল না করে আরেকটি কেন্দ্রীভূত পরীক্ষা চালু করা হলে আরও মারাত্মক দুর্নীতিকেই প্রশ্রয় দেওয়া হবে। এই উদ্বেগ কতটা সঠিক ছিল সেটা আজ প্রমাণিত। কেন্দ্রীভূত পরীক্ষা চিকিৎসা শিক্ষার গুণ-মান বাড়াবে এই ছেঁদো যুক্তির ফানুস আজ চুপসে গেছে। সুতরাং, নিট পরীক্ষার বিশ্বাসযোগ্যতা এবং স্বচ্ছতা যখন প্রশ্নচিহ্নের সামনে, তখন নিট-ইউজি প্রবর্তনের উদ্দেশ্য কী সেটাও আবার ভাবার সময় এসেছে। এই সিদ্ধান্তটি কি সত্যিই ছাত্রদের কথা ভেবে নাকি কোচিং ইন্ডাস্ট্রির স্বার্থেই এটা চালু হয়েছিল? দুর্নীতিবাজ সরকারগুলির পরীক্ষা ব্যবস্থাটাকেও বাণিজ্যিকীকরণের আওতায় নিয়ে আসার নীতির অবশ্যম্ভাবী ফল হিসাবে মেডিকেলে ভর্তির পরীক্ষার পুরো ব্যবস্থাই এখন ভেঙে পড়ার মুখে, আর তার অসহায় শিকার হচ্ছে নিরীহ ছাত্রছাত্রীরা। এর ফলে মেডিকেল শিক্ষা ও জনস্বাস্থে্যর মানও মারাত্মকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন।

এই পরিস্থিতিতে, এআইডিএসও নিট-ইউজি পরীক্ষা কেলেঙ্কারির নিরপেক্ষ বিচারবিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছে। সংগঠন দাবি জানিয়েছে, এই দুর্নীতিতে যুক্ত প্রত্যেকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। অল ইন্ডিয়া সেভ এডুকেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক তরুণকান্তি নস্কর নিট-এর ফল দুর্নীতির প্রতিবাদ জানিয়ে রাজ্যভিত্তিক জয়েন্ট এন্ট্রান্স চালুর দাবি জানিয়েছেন। সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের পক্ষ থেকে এই দুর্নীতির বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। মেডিকেল সার্ভিস সেন্টার বিচারবিভাগীয় তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে।