লন্ডন গিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প৷ পদে বসার পর এই প্রথমবার৷ সেখানকার মানুষ বিপুল ‘অভ্যর্থনা’ জানিয়েছেন তাঁকে! না, ফুল হাতে নয়– প্রতিবাদী ব্যানার তুলে ধরে, ভেঁপু বাজিয়ে, ট্রাম্পের কার্টুন আঁকা পুতুল–বেলুন উড়িয়ে সে দেশের জনসাধারণ সোচ্চারে বুঝিয়ে দিয়েছেন শরণার্থী মায়ের কোল থেকে শিশু কেড়ে নেওয়ার অমানবিক নিদান হাঁকা এই প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানাতে রাজি নন তাঁরা৷
১৩ জুলাই ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে–র সঙ্গে বৈঠক ছিল ট্রাম্পের৷ ক্ষোভের আঁচ টের পেয়েই বোধহয় রাজধানী শহর থেকে ১০০ কিমি দূরে এই বৈঠকের ব্যবস্থা করা হয়েছিল৷ সম্প্রতি মেক্সিকো সীমান্তে আছড়ে পড়া শরণার্থীর ঢল আটকাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ঘোষণা করেছেন৷ সেই অনুযায়ী শরণার্থীদের গ্রেপ্তার করে তাঁদের কাছ থেকে শিশু সন্তানদের কেড়ে নিয়ে ভরে দেওয়া হচ্ছে নানা ডিটেনশন সেন্টারে৷ এই অমানবিকতার বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছে সারা বিশ্ব৷ এ দিন লন্ডনের রাস্তায় রাস্তায় হাজার হাজার বিক্ষোভকারী ধিক্কার জানিয়েছেন ট্রাম্পের শরণার্থী–নীতিকে৷ অসহায় মানুষের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে তাঁদের ব্যানারে লেখা ছিল– ‘জঞ্জালের গাদায় ছুঁড়ে ফেলে দাও ট্রাম্পকে’, ‘মানবাধিকার কোনও সীমান্ত মানে না’, ‘আমরা সবাই ধরিত্রী মায়ের সন্তান’ ইত্যাদি৷ শিশুদের সঙ্গে নিয়ে মিছিলে পা মিলিয়েছিলেন অসংখ্য মা৷ মিছিলগুলি লন্ডনের রিজেন্ট স্ট্রিট, পিকাডেলি সার্কাস হয়ে প্রধান বিক্ষোভস্থল ট্রাফালগার স্কোয়ারে পৌঁছয়৷
পরদিন ট্রাম্প গিয়েছিলেন স্কটল্যান্ডে৷ সেখানে পা রাখার আগেই দেশের সর্ববৃহৎ শহর গ্লাসগোতে সমবেত হয়েছিলেন হাজার হাজার বিক্ষোভকারী৷ স্লোগানে ব্যানারে সাজানো মিছিলে তাঁরাও সোচ্চারে ধিক্কার জানিয়েছেন বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদের প্রধান মুখ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে৷
প্রেসিডেন্টের নিজের বাসভূমি খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানুষও গত ৩০ জুন জাতীয় শরণার্থী দিবসে আমেরিকার পূর্ব থেকে পশ্চিম, উত্তর থেকে দক্ষিণ সর্বত্র ৭০০–রও বেশি ছোট বড় শহরে বিক্ষোভ দেখান৷ হাজার হাজার মার্কিন নাগরিক সামিল হন বিক্ষোভ মিছিলে৷
শ্রমজীবী মানুষের বিভিন্ন সংগঠন, বিভিন্ন বামপন্থী সংগঠন ছাড়াও হাজার হাজার সাধারণ মানুষ শরণার্থীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে ট্রাম্পবিরোধী স্লোগান দেন৷ বিশ্ব জুড়ে অভিবাসী মানুষ এবং প্যালেস্টাইন সহ বিভিন্ন দেশের শরণার্থীদের প্রতি সংহতি জানান তাঁরা৷ বিক্ষোভ সমাবেশগুলিতে বক্তাদের অনেকেই বলেন, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদই পৃথিবীর দেশে দেশে মানুষকে উদ্বাস্তুতে পরিণত করছে৷ এই অমানবিকতা রুখতে সকলেই সাম্রাজ্যবাদবিরোধী শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তোলার প্রয়োজনের কথা ঘোষণা করেন৷
(৭০ বর্ষ ৪৮ সংখ্যা ২০ জুলাই, ২০১৮)